রবিউল আলম ইভান, কুষ্টিয়া

  ১২ অক্টোবর, ২০১৮

অমানবিক!

শিক্ষকের তিন দফা পিটুনিতে মুমূর্ষু ছাত্র

কুষ্টিয়ায় ৯ম শ্রেণির ছাত্রকে তিন দফায় পিটিয়ে রক্তাক্ত আহত করেছে সরকারি টেক্সটাইল ভকেশনাল ইন্সটিটিউটের গার্মেন্টস টেক্সটাইলের কারিগরি শিক্ষক রফিকুল ইসলাম। এই ঘটনায় মানসিক বিধ্বস্ত হয়ে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তর করেছে চিকিৎসক।

চিকিৎসকরা বলছেন, বিষের ভয়াবহতায় দুইটা কিডনি ড্যামেজ হয়েছে আকাশের। অবশ্য স্কুল কর্তৃপক্ষ আকাশের সকল চিকিৎসার দায়ভার নিতে রাজি হয়েছে। এদিকে অসুস্থ শিক্ষার্থীর চিকিৎসা ব্যয় স্কুলের পক্ষা থেকে বহন করার কথা বলা হলেও, দায় চাপান হয়েছে অভিযুুক্ত শিক্ষক রফিকুল ইসলামের ওপর।

আহত ছাত্রের পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ৩ অক্টোবর ক্যাম্পাস চলাকালে মোবাইল আনার অভিযোগে ৯ম শ্রেণির ছাত্র আকাশকে প্রথম দফা বেদম প্রহার করেন শিক্ষক রফিকুল ইসলাম। সে কষ্ট সহ্য করতে না পেরে ছেলেদের টয়লেটে গিয়ে কান্নাকাটি করতে থাকে। এ সময় তার সহপাঠীরা টয়লেট ব্যবহার করার জন্য আকাশকে দরজার খুলতে অনেক ডাকাডাকি করে। আকাশ দরজা না খুললে তার বন্ধুরা শিক্ষক রফিকুল ইসলামের কাছে অভিযোগ দেয় যে, আকাশ টয়লেটে বসে সিগারেট খাচ্ছে। শিক্ষক রফিকুল ইসলাম আকাশকে আবার টয়লেট থেকে বের করে দ্বিতীয় দফা বেধরম মারধর করেন। এতে আকাশের দুই হাত জখম ও রক্তাক্ত করে ফেলেন। এখানেই শেষ নয়, আকাশকে ‘উচিত শিক্ষা’ দেওয়ার জন্য ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিখিল চন্দ্র ঘোষের কাছে নিয়ে যান তারা। সেখানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আকাশকে তৃতীয় দফা প্রহার করেন। এই সময় সে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ছাত্রের বাবা সৌদি প্রবাসী ওবাইদুর রহমান মুঠোফোনে জানান, স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে আকাশ পরিবারের সবাইকে এ বিষয়ে জানায়। সে খুব ভেঙে পড়েছিল। পরিবারের সবাই তাকে চোখে চোখে রাখছিল। আকাশ এমনই ভেঙে পড়েছিল যে ৪ অক্টোবর সকালে কুমারখালী বাধ বাজার থেকে কীটনাশক ওষুধ কিনে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তবে তাকে দ্রুত কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত রবিবার হাসপাতালে তার অবস্থার অবনতি হলে রাতেই আকাশকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে আকাশ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি।

এবিষয়ে সরকারী টেক্সটাইল ভকেশনাল ইন্সটিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিখিল চন্দ্র ঘোষ এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সে রকম’ ভাবে তাকে মার হয়নি। আর একটা ছেলেকে মারলেই যে সে বিষ খাবে এটা ঠিক না। তিনি বলেন, যাই হোক, সে আমাদের ছাত্র, আমরা তার চিকিৎসার ব্যয় বহন করবো। চিকিৎসার খরচ কিভাবে ক্যাম্পাস বহন করবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে শিক্ষক তাকে মারধর করেছে সেই শিক্ষক এর দায়ভার নেবে।

এর বিষয় কথা বলতে টেক্সটাইল ভকেশনাল ইন্সটিটিউটে গিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক রফিকুল ইসলামকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যক্তিগত ফোন নাম্বারেও যোগাযোগ করেও পাওয়ায় তার সাড়া মেলেনি। ওই ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত শিক্ষক রফিকুল ইসলাম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই আসেন বলে জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাহিদুর রহমান বলেন, বিষয়টি খুবই গুরুতর অপরাধ। আমার পরামর্শ বিষয়টি জেলা প্রশাসক মহোদয়কে জানানো ও আইনের আশ্রয় নেওয়া।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close