আরিফুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম
শতবর্ষী কূপ ও বিদ্যালয়ের জায়গা দখল করে পিতা-পুত্রের মক্তব!
কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা ও শতবর্ষী একটি কূপ দখল করে মক্তব নির্মাণ করার অভিযোগ উঠেছে খলিল মিয়া ও তার ছেলের বিরুদ্ধে। বিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টসহ স্থানীয় লোকজন এতে বাধা দিলেও তাতে কর্ণপাত করেননি তারা। অভিযোগ আছে, ‘মক্তব নির্মাণ করলে অনেক ছওয়াব পাওয়া যাবে’ বলে প্রচার করে তারা স্থানীয়দের বিভ্রান্ত ও মক্তব নির্মাণে বাধা দিতে নিষেধ করেন। এ নিয়ে এলাকায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চিলমারীর রমনা ইউনিয়নের রমনা ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠের কাছে সরকারি খাসজমিতে অবস্থিত একটি শতবর্ষী কূপ এবং ওই বিদ্যালয়ের জায়গা দখল করে মক্তব নির্মাণের উদ্যোগ নেন ওই ইউনিয়নের সরকারবাড়ি গ্রামের খলিল মিয়া ও তার ছেলে জাকারিয়া। এতে বাধা দিলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা. নাজমা বেগমের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন ওই পিতা-পুত্র। পরে স্থানীয় লোকজনসহ বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. ধলু মিয়া বিদ্যালয়ের জায়গা ও ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী কূপ দখলের বাধা দিতে এলে তাদের ওপরও উত্তেজিত হন তারা।
স্থানীয়রা জানান, ১৯১৬ সালে এলাকার লোকজনের পানীয়জলের অভাব পূরণের জন্য ওই কূপটি নির্মাণ করা হয়। দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে এলাকার লোকজন ওই কূপের পানি পান করে আসছিল। পরবর্তীতে এলাকার প্রায় সব বাড়িতে নলকূপ স্থাপন করলে ওই কূপের পানি ব্যবহার কমে যায়। বর্তমানে ওই কূপের পানি কেউ ব্যবহার না করলেও এলাকাবাসীর জমিজমার সীমানা নির্ধারণের জন্য ওই কূপ মূল সীমানা হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এ ছাড়াও প্রাচীন একটি স্থাপনা হিসেবে এলাকাবাসীর কাছে ওই কূপটি অনেক গুরুত্ব বহন করে। এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এই কুয়োটি ব্রিটিশ আমল থেকে এলাকার জমিজমা মাপার কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ব্রিটিশ ম্যাপেও ওই কুয়ার ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, যা এখনো বিদ্যমান। খাসজমিসহ ওই কূপ দখল করে মক্তব নির্মাণে আমরা বাধা দিলেও দখলকারীরা তা শোনেননি।’
রমনা ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা. নাজমা বেগম বলেন, ‘মক্তব নির্মাণের নামে সরকারি খাসজমি ও শতবর্ষী ওই কূপের সাথে সাথে বিদ্যালয়ের জায়গাও দখল করা হয়েছে। আমি বাধা দিলে দখলকারী খলিল মিয়ার পুত্র জাকারিয়া ও তার সহযোগী রয়েল আমার ওপর উত্তেজিত হয়। পরে আমি বিষয়টি বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. ধলু মিয়াকে জানাই। কিন্তু তার নিষেধও মানেননি দখলকারীরা।’
বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. ধলু মিয়া বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকের কাছে বিষয়টি শোনার পর আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে দখলকারীদের বাধা দিলেও তারা আমার বাধা মানেননি।’ মক্তব নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া খলিল মিয়ার সাথে যোগাযোগ করলে কূপ দখল করে মক্তব নির্মাণ করার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমার পূর্বপুরুষদের জায়গায় ওই কুয়া তৈরি করা হয়েছিল। মক্তব নির্মাণে জায়গা সংকট থাকায় কুয়াটি মোক্তবের ঘরের ভেতর নেওয়া হয়েছে।’ বিদ্যালয়ের জায়গা দখল করার ব্যাপারে খলিল বলেন, ‘আমরা বিদ্যালয়ের জায়গা দখল করিনি।’ চিলমারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনে প্রধান শিক্ষককে থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। পুলিশ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।’ চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মির্জা মুরাদ হাসান বেগ বলেন, ‘আমি এমন কোনো অভিযোগ এখন পর্যন্ত পাইনি। তবে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব, সত্যতা পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
"