রাজশাহী অঞ্চলে পল্লী চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের নামে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ ‘ওয়েল ফেয়ার সোসাইটি’ বেকার যুবকদের পল্লী চিকিৎসকের প্রশিক্ষণের নামে প্রতারণার ফাঁদ পেতে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

জানা গেছে, মাত্র সাড়ে ৬ হাজার টাকায় জেলা সিভিল সার্জন, সংশ্লিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তার অধীনে মাত্র ২১ দিন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে ডাক্তারি সনদ। গ্রামের সাধারণ ও স্বল্প শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীদের প্রলোভন দিয়ে এই সনদ বাণিজ্য করে চক্রটি লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

‘ওয়েল ফেয়ার সোসাইটি’ জানায়, এক মাস, ছয় মাস ও এক বছর মেয়াদে বিভিন্ন কোর্সে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আর প্রশিক্ষণের বিষয়গুলো হচ্ছে অ্যানাটমি, ফিজিওলজি, ফার্মাকোলজি, গাইনি ও চক্ষুরোগের প্রাথমিক চিকিৎসা, দন্ত রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা, মেডিসিন ও প্যাথলজি ক্লাশসহ বিভিন্ন রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা এবং প্যাট্রিক্যাল ক্লাস নেওয়া হবে। আরএমপি ‘গ্রাম ডাক্তার’ কোর্সের মেয়াদ ছয় মাস, যোগ্যতা এসএসসি বা দাখিল পাশ। শর্ট ডিপ্লোমা-ইন-মেডিসিন কোর্সের মেয়াদ এক বছর, যোগ্যতা এসএসসি বা দাখিল পাশ এ ছাড়াও এক মাসের বিশেষ কোর্স রয়েছে।

মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-এর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, যদি মাত্র ২২ দিনের প্রশিক্ষণে মানবদেহের চিকিৎসা করা সম্ভব হয়, তাহলে লাখ লাখ টাকা খরচ করে মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডিগ্রি নেওয়ার কি দরকার ?। তিনি বলেন, চিকিৎসকের প্রলোভন দিয়ে বেকারদের প্রশিক্ষণের নামে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার কৌশল।

খোঁজ নিয়ে গেছে, রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন, সংশ্লিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তার সার্বিক তত্ত¡াবধানে এবং রুলার মেডিক্যাল প্রশিক্ষণ ‘আরএমপি’ এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের হলরুমে রোববার ও সাপ্তাহিক সরকারি ছুুটি বাদে ওই এক মাসে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে মাত্র ২২দিন এর বিনিময়ে প্রতিটি প্রশিক্ষণার্থীর কাছে থেকে নেয়া হবে ৬ হাজার পাচশ’ টাকা করে। স্থানীয় আব্দুল মালেক বলেন, প্রতিদিন এক ঘন্টা করে মাত্র ২২ দিন প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা চিকিৎসা দেবে। এটা শুধুমাত্র প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কৌশল মাত্র। এর আগেও এই চক্রটি তানোর উপজেলায় কয়েকবার প্রশিক্ষণের কথা বলে গ্রামের সহজ-সরল ও স্বল্প শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতিদের প্রলোভন দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আর এই প্রশিক্ষণ নিয়ে ডাক্তার সেজে বিভিন্ন গ্রামের হাট-বাজারে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে না বুঝে না জেনে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ায় গ্রামের সাধারণ মানুষ ব্যাপক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে।

পরিচয় গোপন রেখে এই প্রতিবেদক প্রশিক্ষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত ও সমন্বয়কারী ‘ডাক্তার’ নাজমুল হোসাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে প্রশিক্ষণার্থী ভর্তি সম্পন্ন ও ১ লা মার্চ থেকে প্রশিক্ষণের ক্লাশ শুরু হয়েছে। আমরা তাদের কাছে থেকে ৬ হাজার পাচশ’ টাকা করে নিচ্ছি। বিনিময়ে হাতে-কলমে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণ শেষে তারা যাতে মানুষের চিকিৎসা করতে পারে তার জন্য পৃথক দুটি সনদপত্র দেওয়া হবে। এ বিষয়ে রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) মো. মাকিন বলেন, রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন তাদের এই প্রশিক্ষণের অনুমতি দিয়েছেন। তিনি এর বেশি কিছু বলতে পারবেন না বলে এড়িয়ে যান। এ ব্যাপারে রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ল্যান্ডফোনে যোগাযোগ করা হলে সিভিল সার্জন সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ব্যস্ত আছি পরে কথা বলেন, বলেই ফোন রেখেদেন। তবে রুলার মেডিক্যাল প্রশিক্ষণ ‘আরএমপি’ ও ওয়েল ফেয়ার সোসাইটির সমন্বয়কারী ডা, নাজমুল হোসাইন বলেন, এটা সরকারের একটা সহায়ক কর্মসূচি। মাসব্যাপী প্রশিক্ষণের আয়োজক জেলা সিভিল সার্জন ও সংশ্লিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র। আমরা মূলত তাদের সহায়ক হিসেবে প্রশিক্ষণ দিয়ে গ্রাম ডাক্তারের সনদ দিবো এটাকে চিকিৎসকের সনদ বলা ঠিক নয়। এ ব্যাপারে সভাপতি গ্রাম ডাক্তার ইব্রাহিম হোসেন এক মাস প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে সিভিল সার্জন স্যার সম্পৃক্ত রয়েছেন, আর ৬ মাস ও এক বছরের প্রশিক্ষণ ‘ওয়েল ফেয়ার সোসাইটি দেখভাল করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত ও উচ্চ আদালতের রায় রয়েছে প্রতিষ্ঠান ভুয়া বা তাদের কর্যক্রম প্রতারণা বলা অনৈতিক।

"