আদালত প্রতিবেদক

  ২৩ জুলাই, ২০১৭

উচ্ছেদের শঙ্কায় মিরপুর ক্যাম্পের উর্দুভাষীরা

মিরপুরের ৩৯টি ক্যাম্প থেকে উর্দুভাষীদের ‘উচ্ছেদ চেষ্টা’ ঠেকাতে আদালতে করা এক অভিযোগের শুনানির আগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ফের উচ্ছেদের উদ্যোগ নিয়েছে দাবি করেছে উর্দুস্পিকিং পিপলস ইয়ুথ রিহ্যাবিলিটেশন মুভমেন্ট। ঢাকার প্রথম সহকারী জজ আদালতে গত ৫ জুলাই দায়ের করা ওই অভিযোগে আগামী ৩ আগস্ট শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। আর এ কারণেই শুনানির আগে উত্তর করপোরেশন তাড়াহুড়ো করে আগামীকাল সোমবার উচ্ছেদ চালাতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন উর্দুস্পিকিং পিপলস ইয়ুথ রিহ্যাবিলিটেশন মুভমেন্টের সভাপতি সাদাকাত খান ফাক্কু।

গতকাল শনিবার আদালত প্রাঙ্গণে এসে সাংবাদিকদের এ অভিযোগ করে ফাক্কু বলেন, বসবাসের জন্য আলাদা জায়গা না দিয়ে, কোনো প্রকার পুনর্বাসনের ব্যবস্থা ছাড়া সিটি করপোরেশনের এ রকম উদ্যোগ মানবাধিকার লঙ্ঘন। এলাকায় বুলডোজার আসবে, অথচ প্রধানমন্ত্রী আমাদের কথা দিয়েছিলেন যে পুনর্বাসন ছাড়া আমাদের আবাস ভাঙা হবে না। গত জুন মাসে সিটি করপোরেশনের উচ্ছেদ চেষ্টার পর ৫ জুলাইয়ে আদালতে ওই অভিযোগ দায়ের করেন পল্লবীর ফুটবল গ্রাউন্ড ক্যাম্পের বাসিন্দা সাদাকাত খান ফাক্কুসহ ৩৪ জন উর্দুভাষী।

মামলায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সচিব, ঢাকার জেলা প্রশাসক ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ ১২ জনকে মূল বিবাদী করা হয়েছে। এ ছাড়া জাতিসংঘের সমন্বয়কারী ও প্রতিনিধি এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানসহ তিনজনকে সহবিবাদী (মোকাবেলা বিবাদী) করা হয়েছে।

অভিযোগের গ্রহণযোগ্যতার শুনানির জন্য প্রথম সহকারী জজ আদালতের বিচারক মঞ্জুর হোসেন ৩ আগস্ট দিন রাখেন বলে জানিয়েছিলেন বাদীপক্ষের আইনজীবী হাবিবুর রহমান মিজান। তবে অভিযোগের শুনানির আগে সোমবার ক্যাম্প উচ্ছেদের কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কি না জানতে চাইলে এ বিষয়ে অবগত নন বলে জানান উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম।

উচ্ছেদ-সংক্রান্তে করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী দেখাশোনা করেন জানিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি। তবে প্রধান প্রকৌশলী সাঈদ আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা হলেও তিনি ফোন কেটে দেন।

উর্দুভাষীদের আরজিতে বলা হয়- ভারতীয় উপমহাদেশের বিভক্তির প্রেক্ষাপটে বাদীদের পূর্বপুরুষরা ১৯৪৭ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে সবকিছু ত্যাগ করে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য ‘ধর্মীয় আবাসভূমি’ পূর্ব পাকিস্তান আসেন।

১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের পর সরকার এই জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে তাদের শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে একত্রিত করে বৃহত্তর মিরপুরের ১০, ১১ ও ১২ নম্বর সেকশন এবং পল্লবীর খালি জায়গায় রেডক্রসের সহায়তায় ক্যাম্প স্থাপন করে। ১৯৭২ সাল থেকে এসব ক্যাম্পে তারা বসবাস করে আসছেন। পরে এ ভূমিতে বৈধ আইনি সত্তা নিয়ে রেশন কার্ড পেয়ে বিহারি ক্যাম্প নামে পরিচিত এসব জমির ভোগ দখলে আছেন তারা। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে এ জমি দখলের জন্য ‘বহিরাগতরা’ চেষ্টা চালায়। এমনকি সিটি করপোরেশন ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষও এই জমি ‘দখলের’ জন্য কয়েক দফা ‘হামলা’ চালায়।

সংস্থা দুটি কোনো প্রকার নোটিস না দিয়ে তাদের উচ্ছেদের চেষ্টা চালায় অভিযোগ করে আরজিতে বলা হয়, এর বিরুদ্ধে ২০০১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে নয়টি রিট আবেদন করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে উর্দুভাষীদের কোন জায়গায় কোন ক্যাম্প- তা বিতর্কিত বিষয় হওয়ায় এটি নির্ধারণের উপযুক্ত এখতিয়ার দেওয়ানি আদালতের বলে আপিল বিভাগ সিদ্ধান্ত দেয় বলে আরজিতে বলা হয়।

এতে বলা হয়, পরে ২০১৪ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিরপুরের ৩টি এবং মোহাম্মদপুরের দুটি ক্যাম্পের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকা এসব মানুষকে ঢাকার পাশে সুবিধাজনক জায়গায় পুনর্বাসনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন। কিন্তু এসব উপেক্ষা করে সিটি করপোরেশন মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনের কাশ্মীরি মহল্লা বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়।

গত জুনে সিটি করপোরেশন আবার নতুন করে উচ্ছেদ চেষ্টা চালায় অভিযোগ করে অভিযোগ দায়েরকারীরা বলেছেন, তখন সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলামের সঙ্গে তারা একটি ‘সমঝোতাপত্র’ স্বাক্ষর করেন। সে অনুযায়ী, মেয়রও উচ্ছেদ না করার আশ্বাস দেন।

কিন্তু ওই চুক্তি এবং আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকের সিদ্ধন্ত ভেঙে ৪৬ বছর ধরে এসব জমির ভোগদখলকারী এই জনগোষ্ঠীকে উচ্ছেদের জন্য নতুন করে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। আরজিতে এই ৩৯টি ক্যাম্পের ৭০ হাজার উর্দুভাষীকে উচ্ছেদ না করার জন্য নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist