নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

  ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

লঙ্ঘিত হচ্ছে তথ্য আইন

রোগীদের ব্যক্তিগত তথ্য গোপন থাকছে না

অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নেমেছে ওষুধ কোম্পানিগুলোতে। ডাক্তারদের তারা বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে বাধ্য করছে তাদের কোম্পানির ওষুধ প্রেসক্রাইভ করতে। ডাক্তাররা তাদের ওষুধ প্রেসক্রাইভ করছে কি নাÑ তা নিশ্চিত করতে হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর বাইরে তাদের প্রতিনিধিরা রোগীদের ব্যবস্থাপত্র কেড়ে নিয়ে ছবি তুলছে, যা প্রকাশ্য তথ্য আইনের লঙ্ঘন। গোপনীয় রোগের চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা পড়ছেন অস্বস্তিতে।

এমনকি অনেক কোম্পানির কমপক্ষে ৩০টি ছবি প্রতিদিনই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো লাগে। ডাক্তারের দেওয়া ওইসব প্রেসক্রিপশনে রোগীর কোনো গোপন রোগের ওষুধ লেখা থাকলেও কোম্পানির প্রতিনিধিরা রোগীর কাছ থেকে প্রেসক্রিপশন কেড়ে নিয়ে পড়া ও মোবাইলে ছবি তুলে রাখে।

মেডিকেল নীতিশাস্ত্রবহির্ভূত এমন কাজ বন্ধ করার জন্য নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জনের নিষেধ থাকা সত্ত্বেও ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা তা মানছে না। নারায়ণগঞ্জ সরকারি হাসপাতালের ভেতর ও শহরের বেসরকারি হাসপাতাল এবং ক্লিনিকের বাইরে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা দলবদ্ধ হয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। রোগীরা ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগীর হাত থেকে প্রেসক্রিপশন কেড়ে নিয়ে পড়া ও মোবাইলে ছবি তুলে নিচ্ছে। একজন দুজন নয় ডজন ডজন প্রতিনিধি এই কাজে ব্যস্ত থাকে।

অনুসন্ধান করে জানা গেছে, ডাক্তার রোগীর প্রেসক্রিপশনে কী ধরনের রোগের বা কোন কোম্পানির ওষুধ লিখেছেন প্রতিনিধিরা ছবি তুলে কোম্পানিকে জানানোর জন্যই এই কাজ করে চলেছে। গত কয়েক দিন সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, একাধিক ওষুধ কোম্পানির ২০ থেকে ২৫ জন প্রতিনিধি নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের ভেতরে ও খানপুর ৫০০ শয্যা হাসপাতালের বাইরে রোগীদের কাছ থেকে প্রেসক্রিপশন কেড়ে নিয়ে মোবাইলে ছবি তুলে রোগীর মূল্যবান সময় ব্যয় করছে। এ সময় একজন নারী রোগী অভিযোগ করে বলেন, তিনি গোপন ব্যাধির জন্য ডাক্তারের কাছে এসেছিলেন। তার ডাক্তারের দেওয়া ব্যবস্থাপত্র প্রতিনিধিরা জোর করে কেড়ে নিয়ে মোবাইলে ছবি তুলে নিয়েছে। এতে তার গোপনীয়তা রক্ষা হয়নি এবং তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শহরের দুটি সরকারি হাসপাতালের গুরুত্ব অপরিসীম। নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি উপজেলা থেকে রোগীরাও এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। সে কারণে শহরে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক এবং ওষুধের দোকান গড়ে উঠেছে। যে কারণে শতাধিক ওষুধ কোম্পানি এখানে তাদের প্রতিনিধি দ্বারা ওষুধ বিক্রি করে থাকে। প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকার ওষুধ বিক্রি করে থাকে এসব প্রতিনিধিরা।

এ তথ্য ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি ও ওষুধ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জানা গেছে। ওষুধ কোম্পানির কয়েকজন প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেও সরকারি কোন চাকরি না পেয়ে কোম্পানির ওষুধ বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে চাকরি নিয়েছে। কোম্পানির টার্গেট পূরণের জন্য বৈধ ওষুধের দোকানের পাশাপাশি গ্রাম্য হাতুড়ে ডাক্তার ও কিছু কিছু কবিরাজের কাছেও ওষুধ বিক্রি করে থাকে এবং কোম্পানির নির্দেশ মোতাবেক ডাক্তারের দেওয়া রোগীর প্রেসক্রিপশনের মোবাইলে ছবি তুলে কোম্পানির কাছে পাঠাতে হয়।

এদিকে গ্রাম্য হাতুড়ে ডাক্তাররা শহর থেকে কম দামের ওষুধ কিনে নিয়ে গ্রামের রোগীদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করে প্রতিনিয়ত প্রতারণা করে চলেছে। ওষুধ বিক্রয় প্রতিনিধিরা কয়েকজন কবিরাজকে দিয়েও তাদের কোম্পানির ওষুধ প্রেসক্রিপশন করিয়ে থাকে।

এ ব্যাপারে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা বলেন, রোগীদের কাছ থেকে প্রেসক্রিপশন নিয়ে ছবি তুলতে আমাদের খুবই খারাপ লাগে। কোম্পানির ম্যানেজমেন্টের কারণে আমরা প্রতিনিয়ত এ কাজ করে থাকি।

নারায়ণগঞ্জ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সভাপতি শাহজাহান হোসেন বলেন, ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা মোবাইলে ডাক্তারের দেওয়া রোগীর প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলে নেওয়ায় রোগীর রোগের গোপনীয়তা রক্ষা হচ্ছে না। প্রতিনিধিরা রোগ সম্পর্কে জেনে যাচ্ছে। প্রতিনিধিদের এই কাজ দ্রুত বন্ধ করতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ বলেন, বেশ কিছু দিন ধরে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল এবং ক্লিনিকের ভেতরে বাইরে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা অবস্থান করেন এবং চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের কাছ থেকে চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র নিয়ে মোবাইলে ছবি তুলে নিচ্ছেন। এতে আগত রোগীরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। একজন রোগীর চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র, চিকিৎসক এবং রোগীর গোপনীয় বিষয় যার বহিঃপ্রকাশ মেডিকেল নীতিশাস্ত্রবহির্ভূত। এসব অনিয়ম বন্ধ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপরও যদি কোম্পানির প্রতিনিধিরা এ ধরনের কাজ করতে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close