নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২১ নভেম্বর, ২০১৯

যাত্রাবাড়ী টু গুলিস্তান রুটে বাহন ছিল ভ্যান-রিকশা

অঘোষিত গণপরিবহন ধর্মঘটে যাত্রী ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। উপায় না দেখে যাত্রীরা ভ্যান বা রিকশায় উঠলেও কোথাও কোথাও পরিবহন শ্রমিকরা তাদের নামিয়েও দিয়েছেন। ফলে রাস্তায় বের হওয়া সাধারণ জনগণকে অবর্ণনীয় ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।

গতকাল বুধবার সকালে যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদ এলাকায় এ রকম চিত্র দেখা গেছে। তবে এ রকম পরিস্থিতিতে অন্যান্য সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মাঠে দেখা গেলেও, এবার তেমনটা চোখে পড়েনি। সকাল ৮টার দিকে যাত্রাবাড়ী মোড়ে দেখা যায়, হাজার হাজার যাত্রী দাঁড়িয়ে আছেন। কারো গন্তব্য গুলিস্তান, কারোবা মতিঝিল, কেউবা যেতে চাইছেন উত্তরা। আবার অনেকের গন্তব্য ফার্মগেট, গুলশান, মহাখালী কিংবা উত্তরা। তবে সবাই অসহায়। কারণ রাস্তায় কোনো গণপরিবহন নেই। মাঝেমধ্যে দু-একটি বাস এলেও সেগুলো ছিল যাত্রীশূন্য ও দরজা বন্ধ অবস্থায়। এমনকি যাত্রাবাড়ী থেকে কয়েক শ লেগুনা চলাচল করত বাহাদুরশাহ পার্ক ও তাঁতীবাজার সড়কে। সেগুলোও আজ চলছে না। ওইসব লেগুনা কোথায় রাখা হয়েছে, তারও হদিস নেই। অথচ অন্যদিন লেগুনাগুলোর কারণে কেউ হাঁটতে পারত না। উপায়ান্তর না দেখে যাত্রীরা ভ্যান, রিকশা ও ঘোড়ার গাড়িতে করেই গন্তব্যে যাচ্ছেন। সারি সারি ভ্যান। একেকটি ভ্যানে লোক নিচ্ছেন ছয় থেকে আটজন। গুলিস্তানের ভ্যানে একেক যাত্রীর কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ৫০ টাকা, মতিঝিলের ৬০ টাকা আর কাকরাইল-শান্তিনগরের ভ্যানে নেওয়া হচ্ছে ১০০ টাকা। রিকশায় গেলে আরো বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। এরপরও মানুষ গন্তব্যে যাচ্ছেন।

জানতে চাইলে মতিঝিলগামী ব্যাংক কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন বলেন, ‘উপায় নাই। আজব দেশে বাস করি। তাই এ অবস্থা মেনে নিয়েই কাজে যেতে হচ্ছে। যে সেক্টরে সরকারি দলের লোকজন নেতৃত্ব দেয়, সেই সেক্টরের লোকজন যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। দেখারও কেউ নেই, বলারও কেউ নেই।’

ফার্মগেটে যাবেন আতিকুর রহমান। তিনি উবার খুঁজছেন। তিনি বলেন, ‘আজ উবার, পাঠাও বা ওভাই কিছুই নেই। দু-এটা যাও আসছে তারাও বেশি দাম চাচ্ছেন। বাস বন্ধ, রিকশা-ভ্যানে ভাড়া বেশি। মানুষ যাবে কোথায়। অন্যের যা হয় আমারও তাই হবে, কী আর করা।’ সকাল ১০টা সায়েদাবাদ এলাকা। শ্রমিকরা দলবেঁধে রাস্তায় দাঁড়িয়েছে। রাস্তায় একটি বাসও নেই। সব বাস সারি সারি পার্কিং করে রাখা হয়েছে। রিকশায় যারা যাচ্ছেন, তাদের শ্রমিকরা কিছু না বললেও যারা ভ্যানে যাচ্ছেন তাদের নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কোনো কোনো বাসশ্রমিক ভ্যানওয়ালাকে চড়থাপ্পড় দিয়ে বিদায় করছেন। আবার কারো কারো ভ্যান উল্টিয়ে দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে হঠাৎ করে যাত্রীবাহী পরিবহন চলাচল না করায় অফিসগামী যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। উপায়ান্তর না দেখে তারা কেউ হেঁটে, কেউ ভ্যান-রিকশায় বেশি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন। ভোগান্তিতে পড়া যাত্রীদের অভিযোগ, একদিকে পেঁয়াজের ঝাঁজ, লবণের দামে কারসাজি, চালের মূল্যবৃদ্ধি যেমন মানুষকে হাফিয়ে তুলেছে, অন্যদিকে পরিবহন ধর্মঘটে মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। দ্রুত এর থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন তারা।

প্রসঙ্গত, নতুন সড়ক আইন বাস্তবায়নের প্রতিবাদে প্রথমে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান শ্রমিকরা সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট আহ্বান করেন। সেই সঙ্গে বুধবার সকাল থেকে যাত্রীবাহী পরিবহনগুলোও অঘোষিত ধর্মঘট শুরু করে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close