বিশেষ প্রতিবেদক, রাজশাহী

  ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

জমি দখল ও ডাকবাংলো ভাঙার অভিযোগ আরএমপির বিরুদ্ধে

ক্রয় করা জমির পরিমাণের চেয়ে চারগুণ জমি দখলে নিয়ে নির্মিত হচ্ছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) সদর দফতর। এই নির্মাণ কাজের জন্য ভেঙে ফেলা হয়েছে ডাকবাংলো ভবন। এ জমি নিয়ে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে আরএমপি কমিশনার হুমায়ুন কবীরের সঙ্গে দেখা করে প্রতিবাদ জানানো হলেও কাজ বন্ধ হয়নি। তাই বিষয়টি মন্ত্রণালয় পর্যন্ত গড়িয়েছে। বিষয়টি নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তবে এ প্রশ্নে আরএমটির পক্ষ থেকে অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

জেলা পরিষদের ভাষ্য মতে, প্রতিষ্ঠানটির সম্পত্তি নিয়ে নিচ্ছে পুলিশ প্রশাসন। জানা গেছে, রাজশাহী মহানগরীর সিঅ্যান্ডবি মোড়ের প্রধান সড়কের পাশের এই ৫ দশমিক ৯৫ একর জমি নিয়ে ছিল জেলা পরিষদের ডাকবাংলো। এর মধ্যে জমির পশ্চিম দিক থেকে ১ দশমিক ৩৯ একর রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপির) কাছে বিক্রি করে জেলা পরিষদ। আর পূর্বের অংশের ডাকবাংলো ভাড়া নিয়ে চলছিল আরএমপি সদর দফতরের কার্যক্রম। কিন্তু এখন পুরো জমিটিই দখল করে নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে আরএমপির সদর দফতর। এতে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন উপকৃত হলেও প্রকৃতপক্ষে কার ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল হচ্ছে সে প্রশ্নের জবাব নগরবাসী জানলেও তার প্রকাশ ঘটাতে পারছে না।

এর আগে ডাকবাংলোটি ভাঙার কারণে গত ৬ মে রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকারের নেতৃত্বে একটি দল আরএমপি কমিশনার হুমায়ুন কবীরের সঙ্গে দেখা করে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে কাজ বন্ধ করা হয়নি। ফলে বিষয়টি মন্ত্রণালয় পর্যন্ত গড়িয়েছে। ফলে বিষয়টি নিয়ে গত ২২ আগস্ট আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়েছে। সে সভা থেকে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার নূর-উর-রহমানকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে মন্ত্রণালয়ের গঠিত এ কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে মাপজোক করে জমির সীমানা নির্ধারণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

রাজশাহী মহানগরীর সিঅ্যান্ডবি মোড়ে জেলা পরিষদের ডাকবাংলোটি পুলিশ ভাড়ায় ব্যবহার করত। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১১ আগস্ট ২০১৫-১৬ অর্থবছরের ভাড়া পরিশোধ করে আরএমপি। পরে আর ভাড়া প্রদান করেননি। সূত্র মতে, ৫ দশমিক ৯৫ একর জমি থেকে ১ দশমিক ৩৯ একর জমি কেনার পর বাকি জমিটুকুও বিক্রির জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে জেলা পরিষদের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সে সময় জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান না থাকার কারণে জমি বিক্রি করা যায়নি। জেলা পরিষদের ভাষ্য মতে, অবৈধভাবে জেলা পরিষদের জমি দখল করে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আরএমপির স্থায়ী সদর দফতর নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে।

জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, বিক্রি করা ১ দশমিক ৩৯ একর জমির সীমানা ২০০৮ সালের ৭ জুলাই আরএমপির কাছে বুঝিয়ে দেয় জেলা পরিষদ। তখন সীমানা পিলারও স্থাপন করা হয়েছিল। এই বিক্রি করা জমির মধ্যে জেলা পরিষদের ডাকবাংলোর পাঁচ শতাংশ পড়েছিল। কিন্তু ২০১৫-১৬ অর্থবছরের পর ভাড়া প্রদান না করেই পুলিশ পুরো ডাকবাংলোটি অবৈধভাবে দখল করে নেয়। এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ডাকবাংলোটি ভাঙতে শুরু করে। এ নিয়ে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদপূর্বক ভাঙা কাজটি বন্ধের জন্য আরএমপিকে গত ২০ ফেব্রুয়ারি ও ১৮ মার্চ দুটি চিঠি দেওয়া হয়। তারপরও ডাকবাংলো ভাঙা বন্ধ না করে পুরো জমিটিই দখলে নিয়ে আরএমপির সদর দফতর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। বিষয়টি নিয়ে শেষ পর্যন্ত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হলে গত ২২ আগস্ট আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়েছে।

রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. জামাত খান বলেন, ‘কার স্বার্থে এসব হচ্ছে তা জনগণের সামনে উন্মোচিত হওয়া দরকার। মহানগরীতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ শুধু প্রতিবাদ করেই থেমে থাকবে না, ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা রক্ষায় বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার বলেন, ‘আমরা আরএমপি কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে নির্মাণ কাজ বন্ধের অনুরোধ করেছি। তখন তিনি (আরএমপি কমিশনার) বলেছিলেন, রাজশাহীতে নতুন এসেছেন, জমির বিষয়ে কিছুই জানেন না। খোঁজখবর নিয়ে বিষয়টির সমাধান করবেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আপনি কি ৫০ কোটি টাকা খরচ করে অন্যের জমিতে বিল্ডিং করবেন? জেলা পরিষদের অভিযোগ সত্য নয়।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close