নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৬ আগস্ট, ২০১৯

মতিঝিলের ফুটপাত ফের অবৈধ দখলে

দুর্ভোগে পথচারীরা

রাজধানীর মতিঝিল ব্যাংকপাড়ার ফুটপাতগুলো আবার দখল হয়ে গেছে। চলাচলের পথে বিভিন্ন পসরা সাজিয়ে বসেছেন হকাররা। চলছে রমরমা ব্যবসা। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন পথচারীরা। গতকাল রোববার শাপলা চত্বর, দিলকুশা, দৈনিক বাংলা মোড়সহ বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে এমন চিত্র।

মতিঝিল ব্যাংকপাড়ায় শাপলা চত্বর থেকে দৈনিক বাংলা, দিলকুশার রাস্তাগুলোর ফুটপাত দখল করে বিভিন্ন কাপড়, কসমেটিকসসহ রকমারি সব পণ্যের দোকান দিয়ে বসেছেন হকাররা। ফলে পথচারীরা ফুটপাত দিয়ে চলাচল করতে না পেরে বাধ্য হয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন। এতে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট, বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি।

মতিঝিল এলাকার চাকরিজীবী, পথচারীসহ বিভিন্ন পেশার লোকদের সঙ্গে কথা বলে যানা গেছে, ব্যস্ততম মতিঝিলের ফুটপাত মাসখানিক আগেও হকারমুক্ত ছিল। বিশেষ করে শাপলা চত্বরে সোনালী ব্যাংকের প্রধান শাখার সামনে ফুটপাত পথচারীদের জন্য উন্মুক্ত ছিল। কিন্তু ঈদুল আজহার পর কয়েক দিন ধরে পুরো ফুটপাত এখন দখল হয়ে গেছে। হকাররা শুধু ফুটপাত দখল করে ছাড়েনি, ফুটপাতসংলগ্ন রাস্তার অনেকাংশ দখল করে রীতিমতো বাজার বসিয়েছেন। এতে পথচারীর পাশাপাশি সড়কের যানবাহনও স্বাভাবিকভাবে চলতে পারছে না। সময়ে সময়ে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। ট্রাফিক পুলিশ সেই যানজট নিরসনে ব্যস্ত থাকলেও যানজটের উৎস ফুটপাত দখল নিয়ে কারো কোনো উদ্যোগ নেই। পথচারীদের দুর্ভোগ নিয়েও নতুন কোনো ভাবনা নেই।

মতিঝিল রাস্তায় হাঁটতে থাকা পথচারী মৌলভীবাজারের জুড়ী থেকে আসা ফয়সাল বলেন, ‘ঈদের আগে এসে ফুটপাতগুলো দখলমুক্ত দেখেছি। তখন ফুটপাত দিয়ে সহজে চলাচল করতে পারতাম। এখন দখল হওয়ায় হাঁটার জায়গা নেই। বাধ্য হয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হচ্ছে, কিছুই করার নেই।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে ফয়সাল বলেন, মেয়ররা শুধু গণমাধ্যমের সামনে বড় বড় কথা বলেন। কিন্তু বাস্তবে ঢাকার চিত্র তারা দেখেও দেখেন না। বেশ কয়েক দিন দখলমুক্ত থাকার পর আবার হঠাৎ করে দখল হচ্ছে। এমন সুযোগ করে দিচ্ছে কারা?

জানতে চাইলে মতিঝিলের একজন হকার বলেন, পুলিশই তাদের ফুটপাত দখল করে বসার সুযোগ দিয়েছে। প্রতিদিন চাঁদা দিয়ে এখানে বসতে হয়। তিনি জানান, ব্যস্ত এলাকা মতিঝিলে ফুটপাত দখলে রাখার জন্য চাঁদার হার অন্য এলাকার তুলনায় একটু বেশি। কারণ এখানে বিক্রি বেশি। চাঁদা না দিলে পুলিশ ফুটপাতের দখল নিতে দেয় না বলেও জানান তিনি।

আলমগীর নামের এক হকার বলেন, ‘আমরা পেটের দায়ে ব্যবসা করি। এখানে প্রতিদিন দুই-আড়াই শ টাকা চাঁদা দিয়ে দোকান দিই। সব খরচ মিটিয়ে যা থাকে তা দিয়ে সংসার চলে। ব্যবসা না করতে পারলে সংসার চালামু কেমনে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা অবৈধ, ঠিক আছে, তবে আমাদের অন্য কোনো জায়গায় ব্যবসা করার সুযোগ দিলে এখানে আর দখল করব না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মতিঝিলে দায়িত্বরত এক ট্র?াফিক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘ফুটপাত দখল হলে পথচারীরা রাস্তা দিয়ে চলে। ফলে স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলতে পারে না। এতে রাস্তায় চাপ বাড়ে যানজট সৃষ্টি হয়।’ তিনি বলেন, ফুটপাত দখলমুক্ত করার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের, এটা তাদের দেখার বিষয়। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।

ঢাকার যানজট নিরসনে সরকারের নেওয়া উদ্যোগের সবগুলো প্রকল্পেই ফুটপাতকে মুক্ত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। গত কয়েক বছরে যানজট নিরসনে ফ্লাইওভার, ফুটওভারব্রিজ, আন্ডারপাস নির্মাণ, মেট্রোরেলসহ হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নও করেছে। কিন্তু যানজটের উন্নতি হয়নি। উল্টো মেট্রোরেলের কাজ চলার কারণে রাজধানীর অনেক জায়গায় যানজট বেড়েছে। এর মধ্যে নতুন করে ফুটপাত দখল হওয়ায় যানজট ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। কিন্তু ফুটপাত দখল নিয়ে নতুন কোনো উদ্যোগ নেই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close