নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৮ আগস্ট, ২০১৯

ঝিলপাড় বস্তিতে অগ্নিকাণ্ড

ধ্বংসস্তূপে সব হারানো মানুষের আর্তনাদ

রাজধানীর নিম্নবিত্ত মানুষের আবাস বস্তিতে। যেখানে সাধ্যের মধ্যে হাজারো স্বপ্নের মেলবন্ধন করেন তারা। ছোট ঘরগুলোতেই সুখের নীড় বাঁধেন সমাজের ন্যূনতম চাওয়া-পাওয়ার মানুষ। তবে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে সাধ্যের মধ্যে সাজানো-গোছানো আশ্রয়স্থল হারিয়ে যেন বাগরোধ তারা। সামনের দিনগুলোতে কীভাবে দিন কাটাবেন এমন দুশ্চিন্তা ভর করেছে তাদের মনে।

গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা ২২ মিনিটের দিকে মিরপুরের চলন্তিকা মোড়সংলগ্ন ঝিলপাড় বস্তিতে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। তিন ঘণ্টা ধরে ২৪টি ইউনিটের প্রচেষ্টায় রাত সাড়ে ১০টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস। তবে রাত দেড়টার দিকে আগুন পুরোপুরি নির্বাপণ করা সম্ভব হয়।

আগুনের ভয়াবহ তীব্রতায় ঝিলপাড় বস্তি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। পুড়ে গেছে টিনের ঘরগুলো। আর এই ধ্বংসস্তূপে সব হারানো মানুষ খুঁজে ফিরছে অবশিষ্ট সম্বল। ছাইয়ের নিচ থেকে নেড়েচেড়ে লোহার আসবাবের ফ্রেমগুলো বের করছিল তারা।

এদিকে বাউনিয়া বাঁধে বস্তিবাসীর জন্য ১০ হাজার ফ্ল্যাট তৈরির প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। আগুনে সব হারানো ওই বস্তিবাসী বাউনিয়াতে ফ্ল্যাট পাবে বলে জানান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম।

পেশায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী আলমগীর নিজের পুড়ে যাওয়া ঘর থেকে অবশিষ্ট আসবাব টেনে তুলছিলেন আর কিছুক্ষণ পরপর চোখ মুছছিলেন। কারো সঙ্গে কথা বলতে গেলেই চিৎকার করে উঠছেন স্বপ্ন পুড়ে যাওয়া মানুষটি।

তিনি জানান, তার ১৩টি ঘর ছিল বস্তিতে। সেখানে স্ত্রী-ছেলে ও ছেলের বউ, নাতিদের নিয়ে বসবাস করছিলেন। ১৩ সদস্যের পরিবার নিয়ে বসবাস করা আলমগীরের এই বস্তিতে অস্থায়ী ঠিকানা প্রায় ৩০ বছরের। গ্রামের বাড়ি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে।

তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই বাঁইচা আছি বাবা, তয় না বাঁচার মতো। আগুন লাগার পর সবাই সুস্থভাবে কোনো মতে জানডা নিয়া বাইর হইয়া আইছি। লগে কিছু আনতে পারি নাই। আমার সবকিছু শেষ হইয়া গেল, দেহেন বাবা সব ছাই হইয়া গেছে।’

দীর্ঘদিনের আবাস এই বস্তির সংসারে তিলে তিলে খাট, টিভি-ফ্রিজ, আলমারিসহ বিভিন্ন আসবাব জুগিয়েছিলেন তিনি। যার সবকিছুই প্রায় ছাই হয়ে গেছে।

শুক্রবার রাত থেকে না খেয়ে থাকা আলমগীর বলেন, ‘আইজও দুপুর হইতে লাগলো এহনো কিছু খাইতে পারি নাই। কিছু কিন্না খাওনের মতো কাছে একটা টাকাও নাই। এহন আমরা কই যামু, কই থাকমু, কেমনে খামু?’ এসব বলতেই আবার কেঁদে ওঠেন তিনি। অটোরিকশাচালক তৈয়ব বলেন, ‘উত্তর দিকে যখন আগুন লাগে মানুষ সব দৌড়াদৌড়ি কইরা বাইর হইছে। এরই মধ্যে কোনো মতে এক কাপড়ে বউ-ছেলে নিয়া বাইর হইছি। কিছু লগে নিতে পারি নাই।’

আকলিমা নামের গার্মেন্টকর্মী ধ্বংসস্তূপ থেকে পুড়ে যাওয়া অবশিষ্ট আসবাব ভ্যানে করে বের করছিলেন। তিনি জানান, ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি ভোলা ছিলেন তিনি। বস্তিতে আগুন লাগার খবর পেয়ে রাতেই রওনা দিয়ে আসেন। এসে তার ঘরের আর কিছুই অবশিষ্ট পাননি।

ফায়ার সার্ভিস জানায়, আগুনে প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ ঘর পুড়ে গেছে আর এতে প্রায় ৩ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগুনের উৎস নিশ্চিত করতে এরই মধ্যে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বস্তিবাসী পাবে ফ্ল্যাট : মিরপুরে আগুনে পুড়ে যাওয়া ঝিলপাড় বস্তিতে ২০ থেকে ২৫ হাজার ঘর এবং এসব ঘরে প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ হাজার লোকের বসবাস ছিল বলে জানিয়েছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম।

গত শুক্রবার রাত সোয়া ১২টার দিকে মেয়র আতিক বলেন, ঘরগুলো প্রায় সবই পুড়ে গেছে। বস্তিবাসী যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের থাকার জন্য স্থানীয় পাঁচটি স্কুল নির্ধারণ করা হয়েছে। তাদের এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন খাবার। আমরা এরই মধ্যে খাবারের ব্যবস্থা করেছি। যত দিন বাসস্থান ঠিক না হবে, তত দিন তারা এখানে থাকবে-খাবে। এর জন্য উত্তর সিটি করপোরেশন, ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের সহায়তায় খাবার এবং থাকার ব্যবস্থা করেছি।

মেয়র বলেন, ঘটনাস্থলে পানির হাইড্রেন্ট নেই, গলিগুলো খুব সরু। আমরা এ দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠার জন্য কাজ করছি। বস্তিবাসীর সহায়তা ও পুনর্বাসনের জন্য প্রধানমন্ত্রী এবং তার দফতরে যোগাযোগ করছি। সে নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close