বিশেষ প্রতিবেদক, রাজশাহী

  ১৭ আগস্ট, ২০১৯

‘বিভিন্ন পরিবহনের মাধ্যমে রাজশাহীতে আসছে ডেঙ্গু’

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল এলাকাজুড়ে এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি মিলেছে। পাওয়া গেছে মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের বাসভবন ও ছাত্রীনিবাসেও। এছাড়া মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার বাড়ির ফুলের টব, পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের পাত্র, দোকানের ব্যাটারির সেল ও পরিত্যক্ত টায়ার এবং পাইপে জমে থাকা পানিতে মিলেছে এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি। তবে যাত্রীবাহী বাস, বিমান ও ট্রাকসহ বিভিন্ন পরিবহনের মাধ্যমে ঢাকা থেকে রাজশাহীতে এডিস মশার লার্ভার আগমন ঘটেছে বলে দাবি করেছেন চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা এসব পরিবহনগুলো পরীক্ষাপূর্বক ছাড়া হলে রাজশাহীতে এডিস মশার সংক্রামন ঘটা এতটা সহজ হতো না বলেও দাবি তাদের। রাজশাহীতে কীটতত্ত্ববিদদের নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি মাঠ পর্যায় থেকে নমুনা সংগ্রহের পর তা পরীক্ষায় এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে ঈদের দিন (১২ আগস্ট) দুপুরে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজমিস্ত্রি আবদুল মালেক মারা গেছেন। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বহরম হাউসনগর মহল্লার গোলাম নবীর ছেলে। ঢাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করা অবস্থায় সে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল বলে জানিয়েছেন রামেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস। এরপর ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফিরে গুরুতর অসুস্থতা অনুভব করলে সেদিনই ভোর ৫টার দিকে সে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল।

গতকাল শুক্রবার দুপুরে মুঠোফোনের মাধ্যমে ডা. সাইফুল ফেরদৌস আরো বলেন, রামেক হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুনভাবে ২৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছেন ৩৮ জন। বর্তমানে ভর্তি আছেন ৮২ জন। এর মধ্যে আইসিইউতে রয়েছেন একজন। এ পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে ৪১২ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হলেও ৩৩০ জন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। হাসপাতালে পর্যাপ্ত বেড না পেয়ে অনেক রোগী মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

এদিকে রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি জানায়, তারা গত এক সপ্তাহ ধরে রাজশাহীতে এডিস মশার উপস্থিতি নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করেছেন। এ সময় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এলাকায় থাকা অধ্যক্ষের বাসভবন এবং ক্যাম্পাসসহ নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের বিভিন্ন স্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার পর এডিস মশার লার্ভার ব্যাপক উপস্থিতি পেয়েছেন।

এ কমিটির প্রধান ছিলেন সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের জেলা কীটতত্ত্ববিদ তায়েজুল ইসলাম। অপর দুই সদস্য হচ্ছেন রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ের কীটতত্ত্বীয় কারিগর (টেকনিশিয়ান) আবদুল বারী ও রাজশাহী সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের কীটতত্ত্বীয় কারিগর উম্মে হাবিবা।

এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক গোপেন্দ্রনাথ আচার্য বলেন, রাজশাহীতে এডিস মশার উপস্থিতি আছে কি-না, এ ব্যাপারে তার কাছে কী তথ্য আছে, সরকার থেকে এমন জানতে চাইলে তিনি যাতে এডিস মশার ঘনত্ব, প্রজনন ক্ষেত্র ও বিস্তার সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে সঠিক তথ্য দিতে পারেন এজন্য তিনি নিজ উদ্যোগেই এই কমিটি গঠন করেছিলেন।

ওই কমিটির দেওয়া তথ্যানুযায়ী রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফাল্গুনী ছাত্রীনিবাসের সামনে আইসক্রিমের বক্সে জমে থাকা পানিতে ও অধ্যক্ষের বাসভবনের সামনে নারিকেলের মালায়ে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে তারা এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি পেয়েছেন। একইভাবে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের সামনে পড়ে থাকা ভাঙা বেসিন ও ওয়ার্ডের পাঁচটি জায়গায় জমে থাকা পানিতে এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এছাড়াও নগরীর উপশহর এলাকার রংধনু টাওয়ারের পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের ড্রামে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে, একই এলাকার ২২৪ নম্বর বাড়িতে পরিত্যক্ত পাত্রে, ৩ নম্বর সেক্টরের ১৬৪ নম্বর বাড়ির ফুলের টবে ও পরিত্যক্ত কর্কশিটে ও ২০১ নম্বর বাড়ির ফুলের টবে এই লার্ভার উপস্থিতি মিলেছে।

আর হাসপাতাল পার্শ্ববর্তী এলাকা নগরীর ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সিপাইপাড়া এলাকার মারুফের বাড়ির সামনের নারিকেলের মালায়, একই এলাকার আরেকটি বাড়িতে ফুলের টবে এই লার্ভার উপস্থিতি মিলেছে। এছাড়াও নগরীর ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কেশবপুরের মাসুদ রানার বাড়ির প্লাস্টিকের পাত্রে, সেলিনা বেগমের বাড়ির ফুলের টবে ও মিলনের বাড়ির টায়ারে ও মাটির পাত্রে জমে থাকা পানিতে এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। নগরীর শিরোইল এলাকা থেকে ভদ্রা পর্যন্ত রাস্তার পাশে হাঁটু সমান উঁচু করে পুঁতে রাখা পাইপের ভেতরে জমে থাকা পানিতেও এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক আরো বলেন, নগরীর শিরোইল এলাকার ব্যবসায়ী সেলিমের টায়ারের দোকানের টায়ারে নাসির হোসেনের দোকানের ব্যাটারির সেলে জমে থাকা পানি ও শুকুর আলী নার্সারির মাটির পাত্রে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতেও এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

মহানগর এলাকায় এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতির বিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আঞ্জুমান আরা প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, বাংলাদেশে যখন এডিস মশা আছে তখন রাজশাহীতেও থাকতে পারে। তবে সেই মশাটি ডেঙ্গু আক্রান্ত কি-না অর্থাৎ মশাটি ডেঙ্গুর জীবানু বহন করছে কি-না সেটাই কথা। তবে আক্রান্ত হলে তা পরীক্ষার ব্যবস্থা এখানে নেই। সেজন্য তাদের উচিত মাঠপর্যায়ের তথ্যগুলো মেয়রকে জানানো। তাহলে করপোরেশনের পক্ষ থেকে ওইসব মশার প্রজনন ক্ষেত্রগুলো ধ্বংসের ব্যবস্থা নেওয়া হতো। একই সঙ্গে ওইসব মশার প্রজনন এলাকার অধিবাসীদের সতর্ক করা হতো।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close