নিজস্ব প্রতিবেদক

  ৩০ জানুয়ারি, ২০১৯

গত বছর সড়কে মৃত্যুর ৪২ ভাগই গাড়িচাপায়

গত বছর দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় সাড়ে চার হাজার মানুষের মৃত্যুর পরিসংখ্যান দিয়ে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন বলেছে, শতকরা ৪২ ভাগই মৃত্যু ঘটেছে গাড়িচাপার ঘটনায়। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে ২০১৮ সালের সড়ক দুর্ঘটনার এই পরিসংখ্যান প্রতিবেদন তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ছয়টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, শাখা সংগঠনগুলোর প্রতিবেদন, টেলিভিশন ও অনলাইন পত্রিকার প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এক বছরে সারা দেশে ৩ হাজার ১০৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৪ হাজার ৪৩৯ জনের প্রাণ গেছে, আহত হয়েছেন ৭ হাজার ৪২৫ জন।

৪২ শতাংশ ক্ষেত্রে গাড়িচাপায়, ২৪ শতাংশ ক্ষেত্রে দুই বাহনের মুখোমুখি সংঘর্ষে, ৭ শতাংশ ক্ষেত্রে গাড়ি উল্টে, ৪ শতাংশ ক্ষেত্রে গাড়ি খাদে পড়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।

দুর্ঘটনায় যাদের প্রাণ গেছে, তাদের মধ্যে ৫৬৬ জনই চালক। তাদের মধ্যে মোটরসাইকেল চালকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ১৬০ জন। এছাড়া ৬৪ জন বাসচালক ও ৫৯ জন ট্রাক চালক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।

সারা বছরের মধ্যে দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে জুন মাসে ৩৮১ জন; আর সবচেয়ে কম নভেম্বরে ২৪৫ জন। তবে দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় কমেছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালে সড়কে ৫ হাজার ৬৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

২০১৮ সালে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা মহানগর ও আশপাশের এলাকায়। ৩৩৯টি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৩৪৬ জনের।

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, বেশিরভাগ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে বড় বড় শহর ও হাইওয়েতে। ছোট ছোট অবৈধ যানবাহন যেমন- ভ্যান, রিকশা, নসিমন, অটোরিকশার জন্য দায়ী।

‘আইন অমান্য করে ধীরগতির বাহন মহাসড়কে এখনো চলাচল করে যা দূরপাল্লার বড় গাড়িগুলোর চলাচলে বিঘœ ঘটায়। অবৈধ যানবাহন চলাচলে স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের প্রচ্ছন্ন সহযোগিতাও আছে।’

সংবাদ সম্মেলনে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের পক্ষ থেকে বেশি কিছু সুপারিশও তুলে ধরা হয়। ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, গণমাধ্যমে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান প্রচারের পাশাপাশি স্কুলের পাঠ্যসূচিতে সড়ক দুর্ঘটনা রোধের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করার যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে তা অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে।

ট্রাফিক নির্দেশনা অমান্য করা, যত্রতত্র গাড়ি রাখা, নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া যাত্রী তোলা বা নামানো, ওভারটেক করা, প্রতিযোগিতা বা বেপরোয়া গাড়ি চালনা, অতিরিক্ত যাত্রী ও পণ্য পরিবহন, ওভার ব্রিজ, আন্ডারপাস বা জেব্রা ক্রসিং থাকার পরও তা ব্যবহার না করার প্রবণতা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে।

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, দরিদ্র ও বেকার যুবকদের বিনা বেতনে অথবা ঋণ দিয়ে দক্ষ চালক হিসেবে গড়ে তোলার ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারি উদ্যোগে সব জেলায় একটি করে ড্রাইভিং ও মেকানিক্যাল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষিত বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই পেশায় আসতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

দেশে ১৬ লাখ চালকের চাহিদা রয়েছে বলে জানান তিনি। প্রতিবেদনে বলা হয়, সব মহাসড়কে এবং প্রধান সড়কে একমুখী চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। উঁচু সড়ক বিভাজক নির্মাণ করে দিতে হবে। মহাসড়ক ও প্রধান সড়কগুলো অন্তত চার লেনের হতে হবে।

পথচারীদের নির্বিঘেœ চলাচলের জন্য ফুটপাতগুলো দখলমুক্ত করা, যেখানে ফুটপাত নেই সেখানে তৈরি করা, নিয়মিত নজরদারির মাধ্যমে ফুটপাত দখল বন্ধ করারও সুপারিশ করা হয়েছে সেখানে।

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘সড়কের ত্রুটিগুলো অচিরেই দূর করতে হবে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ত্রুটিগুলো দূর করার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে গেছে।’

বর্তমান সরকার নির্বাচনী ইশতেহারে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেগুলো আন্তরিকতার সঙ্গে দ্রুত বাস্তবায়ন করলে ২০২০ সালে মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা ২০১১ সালের তুলনায় ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের চেয়ারম্যান।

গত সপ্তাহের শেষে যাত্রী কল্যাণ সমিতি এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে ২০১৮ সালে ৫ হাজার ৫১৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ২২১ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছিল।

সড়কে মৃত্যুর ঘটনায় দোষী চালকদের বিচার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিচার হচ্ছে না কারণটা হচ্ছে আমাদের দেশের সরকাররা আপনারা জানেন যে পরিবহন সেক্টরের লোকজন, সংগঠন, নেতাদের খুবই ভয় পায়।

যখনই পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। তখনই জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায় এবং মানুষ উত্তেজিত হয়ে যায়। সরকার মনে করে এই বুঝি আমার গদি চলে গেল। আমার সাজেশনগুলো যদি বাস্তাবায়ন করা যায়, অবশ্যই জিরো টলারেন্সের মধ্যে আসবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close