তুহিন আহমদ, সিলেট

  ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯

সিলেটের সড়কগুলোতে ফিরছে না শৃঙ্খলা

সহমত থাকলেও আইন মানতে অনীহা

সিলেটের সড়কগুলোতে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও শৃঙ্খলা ফেরাতে পারছে না ট্রাফিক পুলিশ। একের পর এক ভিন্নধর্মী পদক্ষেপ গ্রহণেও চালকদের কাছ থেকে খুব বেশি সাড়া পাচ্ছেন না তারা। যদিও পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, আগের চেয়ে সড়কে আইন মেনে চলার প্রবণতা কিছুটা বেড়েছে। তবে এখনও মুখ্য কোনো পরিবর্তন আসেনি।

আর নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের মতে, সরকার ও শ্রমিক সংগঠনের দৃঢ় পদক্ষেপই সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারে। যদিও এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ বিভিন্নভাবে তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে চলেন বলে অভিযোগ তাদের।

সিলেট নগরের বেশ কয়েকটি সড়ক ঘুরে দেখা যায়, কয়েকটি সড়কে গড়ে উঠেছে যানবাহন স্ট্যান্ড। সেখানে উভয়দিকের সড়কে পার্কিং করে রাখা হয়েছে অন্তত ২০টি যানবাহন। পার্কিংয়ের কারণে ওইসব এলাকার সড়কের একাংশও সরু হয়ে আসে। ফলে ওইসব সড়ক দিয়ে বড় একটি যানবাহন চলাচল করার মতো জায়গা থাকে।

সড়কে যানজট সৃষ্টি হলেই মোটরসাইকেল আরোহীরা ফুটপাতের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে চলে যান। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও ট্রাফিক সপ্তাহের পুলিশের তৎপরতায় মোটরসাইকেল আরোহীদের মাথায় হেলমেট পড়ার প্রবণতা আগের থেকে বেড়েছে। তবে এখনও অনেকের সঙ্গে হেলমেট থাকলেও সেটি মাথায় না পড়ে বাইকের হাতলে রাখার অভ্যাসও রয়ে গেছে।

এছাড়াও সড়কের পাশে রিকশার জটলা, উল্টোপথে গাড়ি চালানো, সড়কে লাইন না মেনে এলোপাতাড়ি গাড়ি চলাচল, যত্রতত্র পার্কিংসহ আরও বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খলা চোখে পড়ে। তবে নগরের চৌহাট্টায় সড়কে বিশৃঙ্খলার বিষয়ে দায়িত্বরত এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, আগের মতো সড়কে এখন কোনো বিশৃঙ্খলা নেই। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর থেকে অনেক চালকই গাড়ি নিয়ে বের হন না বলেও জানান।

বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষার্থী মুন্না আহমেদ বলেন, ‘সড়কে গাড়ি নিয়ে চলাচলের সময় ট্রাফিক আইন মানা উচিত। কিন্তু অনেক সময় ব্যস্ততা থাকার কারণে দ্রুত পৌঁছার তাগিদে ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করেন। তবে এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। শৃঙ্খলা ফেরাতে সকলকে ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে।

যত্রতত্র পার্কিংয়ে বাড়ছে জটলা : সিলেট নগরে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে সড়কের বিশৃঙ্খলা আরও বেশি বাড়ছে। বিভিন্ন পয়েন্টে পয়েন্টে রিকশার জটলাই বেশি চোখে পড়ে। এদিকে নগরের বেশির ভাগ বিপণিবিতানের পার্কিং ব্যবস্থা না থাকায় কেনাকাটা করতে আসা ক্রেতাদের গাড়ি অন্য জায়গায় পার্কিং করতে রাখতে হয়। যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে যানজট নিয়ন্ত্রণেও ভোগান্তিতে পড়তে হয় ট্রাফিক পুলিশদের।

তবে নগরের মধ্যে তিন থেকে চার তলাবিশিষ্ট আলাদা পার্কিং ব্যবস্থা তৈরি করলে সমস্যা থেকে উত্তরণ পাওয়া যাবে বলে মনে করেন নাগরিক সংগঠন সংক্ষুব্ধ নাগরিক কমিটির সংগঠক আবদুল করিম কিম।

গাড়ির স্ট্যান্ডে সড়কে প্রভাব : আম্বরখানা, চৌহাট্টা, বন্দরবাজার ও রিকাবীবাজার সড়ক নগরে গুরুত্বপূর্ণ। এ সড়ক দিয়ে মানুষ ও গাড়ি চলাচলের পরিমাণ বেশি। তবে এই সড়কগুলোতে গড়ে উঠেছে যানবাহনের স্ট্যান্ড। সড়কের অনেকাংশ জুড়ে স্ট্যান্ডের যানবাহন পার্কিং করে রাখা হয়। পার্কিংয়ের কারণে সড়ক ছোট হয়ে যায় গাড়ির জটলা বৃদ্ধি পেয়েছে। যানজটের পরিমাণও বেড়েছে। পথচারী আবুল কাশেম বলেন, গাড়ির স্ট্যান্ডের কারণে সড়কের পরিধি ছোট হয়ে গেছে। যানজট লাগলে পার্কিং করা এসব গাড়ির কারণে পথচারীদের চলাচলেও বেগ পোহাতে হয়।

তবে গাড়ির স্ট্যান্ডের কারণে সড়কে শৃঙ্খলায় কোনো প্রভাব পড়ছে না জানিয়ে সিলেট জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সেলিম আহমদ ফলিক বলেন, স্ট্যান্ড থাকার কারণে নগরবাসী সেখান থেকে যানবাহন ভাড়া করার সুবিধা পাচ্ছেন। এর কারণে সড়কে কোনো ধরনের প্রভাব পড়ছে না।

সচেতনতা বৃদ্ধিতে পুলিশের দিনভর মাইকিং : পুলিশ বলছে, সড়কে চালকদের আইন মানার প্রবণতা তেমন বাড়েনি। তবে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর পুলিশের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে সিলেটে কিছুটা হলেও উন্নতি হয়েছে। চালকদের সচেতনতার বিষয়টি বার বার বলা হলে একসময় ঠিকই তারা আইন মেনে চলবে। মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) নিকুলীন চাকমার মতে, ট্রাফিক পুলিশের সচেতনতামূলক পদক্ষেপের কারণে চালকদের এখন হেলমেট পরার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরার কোনো মুখ্য পরিবর্তন হয়নি।

নিকুলীন চাকমা বলেন, চালকদের সচেতন করতে ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে বারবার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। বর্তমানে সারা দিন মাইকিং কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। আমরা চাই চালকরা আগে নিজেরা আইন মানবেন পরে অন্যকে আইন মানতে উদ্বুদ্ধ করবেন। আমরা আশা করি, একটা সময় সফল হব।

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কর্তৃপক্ষকে আরও বেশি সজাগ হতে হবে বলে মনে করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তাদের মতে, চালকরা পুলিশকে ম্যানেজ করেই সড়কে বিশৃঙ্খলা করছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close