হাসান ইমন

  ২৪ জুলাই, ২০১৮

এক বছরেও শুরু হয়নি উন্নয়ন কর্মকান্ড

ডিএনসিসির নতুন ৮ ইউনিয়ন

নেই ভালো রাস্তাঘাট, যেগুলো আছে সেগুলোও ভাঙ্গাচোরা। যেখানে সেখানে নর্দমায় ময়লা-আবর্জনা আর দুর্গন্ধ। বৃষ্টির মৌসুমে জলাবদ্ধতা নিত্যদিনের সঙ্গী। অন্য দিকে, রাস্তার পাশে ফুটপাত আর সড়ক বাতি তো এলাকাবাসীর কাছে স্বপ্নের মতো। ঢাকা উত্তর সিটি কাপোরেশনের সঙ্গে যুক্ত হওয়া নতুন ৮ ইউনিয়নের চিত্র প্রায় একই রকম। তবে আশার কথা, নাগরিক সুবিধার দিক থেকে পিছিয়ে থাকা এই ইউনিয়নগুলোর রাস্তা, নর্দমা, ফুটপাত ও এলইডি বাতি লাগানোর জন্য নেওয়া হয়েছে বড় ধরনের পরিকল্পনা। দীর্ঘ এক বছর কাজ শুরু না করতে পারলেও শিগগির কাজ হবে এমনটাই জানালেন সংশ্লিষ্টরা। তবে টেকসই উন্নয়নের জন্যই কিছুটা দেরী হয়েছে বলে জানালেন কর্মকর্তারা।

জানা যায়, নাগরিকর সেবা দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিতে রাজধানীকে উত্তর ও দক্ষিণ দুই ভাগে ভাগ করে সিটি করপোরেশন ঘোষণা করে সরকার । ২০১৭ সালের ৯ জুন প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটিতে (নিকার) ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে ৮টি করে ইউনিয়ন যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরে একই বছরের ৩০ জুলাই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে যুক্ত হওয়া ১৬ ইউনিয়নে মোট ৩৬টি নতুন ওয়ার্ড গঠন করে গেজেট প্রকাশ করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এ নিয়ে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মোট ওয়ার্ডের সংখ্যা দাঁড়ায় ১২৯টি। নতুন ওয়ার্ডসহ ঢাকার দুই সিটির আয়তন ১২৯ বর্গকিলোমিটার থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ২৭০ বর্গকিলোমিটারে। স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রকাশিত গেজেটে বলা হয়, স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন ২০০৯ অনুসারে দুই সিটি করপোরেশনের সীমানা নির্ধারণ কর্মকর্তারা কাউন্সিলর নির্বাচনের উদ্দেশে এসব ওয়ার্ড গঠনের সুপারিশ করেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বাড্ডা, ভাটারা, সাঁতারকুল, বেরাইদ, ডুমনি, উত্তরখান, দক্ষিণখান ও হরিরামপুর ইউনিয়নকে ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪২, ৪৩, ৪৪, ৪৫, ৪৬, ৪৭, ৪৮, ৪৯, ৫০, ৫১, ৫২, ৫৩ ও ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয়েছে।

এসব ইউনিয়নের বাসিন্দারা এখনো নগরের ছোঁয়া পাননি। ওইসব এলাকাগুলোতে সবকিছুই গড়ে উঠেছে অপরিকল্পিতভাবে। ঘিঞ্জি, অলিগলি, সরু পথ, এবড়োখেবড়ো সড়ক খানাখন্দে ভরা। কোনো কোনো ইউনিয়নে গ্যাস নেই, পানি নেই। নেই চলাচলের মতো রাস্তাও। ফলে খুব দুর্ভোগ নিয়ে চলছে স্থানীয়রা। এলাকাবাসী জানান, বর্ষা মওসুমে তলিয়ে যায় পুরো ইউনিয়নের সড়কগুলো। এসব সড়কের ময়লাআবর্জনা মিশ্রিত পানি ডিঙ্গিয়ে চলাচল করতে হয় এলাকার বাসিন্দাদের। ওই সময় দূষিত পানি ব্যবহারে রোগবালাইয়ের সঙ্গে এলাকার মানুষের বসবাস।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যুক্ত হওয়া ভাঁটারা এলাকার বাসিন্দা মাইদুল ইসলাম বলেন, এলাকার রাস্তা সংস্কার, জলাবদ্ধতাসহ নানা সমস্যা রয়েছে। এসব কাজের বিষয়ে জনপ্রতিনিধির কাছে গেলে তারা বলেন, এখন সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, সব কাজ তারাই করবে। তিনি আরো বলেন, আমরা সিটি করপোরেশনের আওতায় এসেছি এক বছর পার হয়ে গেল। কিন্তু সিটি করপোরেশনের কোন সুযোগ-সুবিধা এখনো পায়নি। কোথায় উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি। কবে যে শুরু হবে!

তবে আশার কথা হলো- উত্তর সিটিতে যুক্ত হওয়া নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের উন্নয়নের জন্য স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ে উদ্যেগে একটি প্রকল্প হাতে নেয় হয়। যা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয় ডিএনসিসিকে। এ প্রকল্পের আওতায় সম্প্রসারিত এলাকার ১৬১ দশমিক ৭২ কিলোমিটার সড়ক নেটর্য়াক উন্নয়নের মাধ্যমে যান চলাচলের নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও যানজট নিরসন। ২২২ দশমিক ৮২ কিলোমিটার নর্দমা স্থাপন ও পানি নিস্কাশন উন্নয়নের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসন। এছাড়া বিদ্যুৎ অপচয় রোধ ও পথচারিদের চলাচলের সুবিধার জন্য পরিবেশ বান্ধব উন্নত প্রযুক্তির ১১হাজার ২২৪টি এলইডি বাতি স্থাপনের কথা রয়েছে। আর এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ব্যয় নির্ধারন করা হয়েছে ৩ হাজার ২১৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা। যা গত ১ লা ডিসেম্বর ২০১৭ সালে শুরু হয়ে ৩০ নভেম্বর ২০২০ সালে শেষ করার কথা ছিলো। প্রকল্পের (ফেজ-১) বাস্তবায়নের জন্য চলতি বছরের মার্চ মাসে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ে একটি (ডিপিপি) পাঠায় ডিএনসিসি। এ বিষয়ে রোজার আগে স্থানীয় সরকারের সাবেক সচিব আব্দুল মালেকের সভাপতিত্বে মন্ত্রনালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু সঠিক পরিকল্পা না থাকায় নতুন করে একশত বছরের জন্য পরিকল্পনা করে কাজ করার নির্দেশ দেন সচিব। এরপর চলতি বছরের ৮ জুলাই আবার ২য় পর্যায়ে মন্ত্রনালয়ে আর একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্য সেনাবাহিনিকে দেয়ার কথা রয়েছে।

এবিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ সাঈদ আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, নতুন এলাকাগুলো যেন একই কাজ বার বার করতে না হয় সে জন্য টেকসই উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রনালয়। এ জন্য আমরা এখনো কাজ শুরু করতে পারিনি। কনসালটেন্ট দ্বারা আমরা পুরো এলাকার একটি মাষ্টার প্লান তৈরি করে মন্ত্রনালয়ে (ডিপিপি) পাঠিয়েছি। ডিপিপি পাশ হলে আমরা এ সব এলাকায় কাজ শুরু করতে পারবো আশা করছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist