ক্রীড়া প্রতিবেদক
আত্মবিশ্বাসী মিরাজ
বাংলাদেশের প্রথম কোনো বনেদী দলকে টেস্টে হারানোর অন্যতম নায়ক ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। অস্ট্রেলিয়া সিরিজেও তাকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। কিন্তু মন ভালো নেই বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সাবেক অধিনায়কের। কারণটাও অনুমেয়। সিরিজের প্রস্তুতি বাদ দিয়ে মিরাজ যে স্বপ্নের ক্যারিবীয় দ্বীপকুঞ্জে পাড়ি জমিয়েছিলেন সেটা পূরণ হয়নি! বরং শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে সেখান থেকে। এই দুঃস্মৃতি ভুলে মিরাজের চোখ এখন আসন্ন অস্ট্রেলিয়া সিরিজে।
প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট খেলতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গিয়েছিলেন মিরাজ। কিন্তু ত্রিনবাগো নাইট রাইডার্সের চারটি ম্যাচেই টাইগার অলরাউন্ডার ছিলেন দর্শক ভূমিকায়। কোনো ম্যাচ খেলতে তো পারেন-ই-নি, উল্টো টেস্ট সিরিজের প্রস্তুতিতে সতীর্থদের চেয়ে পিছিয়ে পড়েছেন মিরাজ। তবে এই স্পিন অলরাউন্ডারের বিশ্বাস সিরিজ শুরুর আগেই পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে উঠবেন তিনি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে ফেরার পরদিনই জাতীয় দলের সঙ্গে পুণরায় অনুশীলনে যোগ দিয়েছেন মিরাজ। মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে বোলিং নিয়ে কাজও শুরু করেছেন। মাঝের যে সময়টুকু দলের সঙ্গে ক্যাম্পে ছিলেন না সেটা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে বিশ্বাস রাখেন মিরাজ। কাল গণমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, ‘বোলিংয়ে দুয়েকটা বৈচিত্র্য আছে সেগুলো নিয়ে কাজ করছি। চেষ্টা করছি নিজের উন্নতি করার। এখনও ১০-১২ দিন সময় আছে। এর মধ্যেই নিজেকে পুরোপুরি তৈরি করতে পারব।’
গত বছর ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। দুই ম্যাচ সিরিজটা শেষ পর্যন্ত থেকে গিয়েছিল অমীমাংসিত। ড্র হওয়া ওই সিরিজের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন ছিলেন মিরাজ। ঢাকা ও চট্টগ্রাম টেস্ট মিলিয়ে ১৯ উইকেট শিকার করেছিলেন এই স্পিন অলরাউন্ডার। সিরিজে তার বোলিং গড় ছিল ১৫.৬৩। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও এই মিরাজকে দেখতে চায় বাংলাদেশ। তবে সবসময়ই এই ধরণের পারফরম্যান্স সম্ভব হয়না বলে মনে করেন মিরাজ। ইংল্যান্ড সিরিজের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সটা ১৯ বছর বয়সী ক্রিকেটারের কাছে বিশেষ কিছু। মিরাজ বলেছেন, ‘ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যা হয়েছে তা সবসময় করা সম্ভব না। আবার এমনটা নাও হতে পারে। ওটা অপ্রত্যাশিত।’
তবে ইংল্যান্ড সিরিজের মতো পারফর্ম করতে পারবেন কীনা সেই প্রতিশ্রুতি না দিলেও পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে দলের প্রয়োজনটা পূরণ করার অঙ্গীকার করলেন মিরাজ। বলেছেন, ‘ দলের প্রয়োজন পূরণ করার চেষ্টা করব। একটা-দুটা উইকেট কিংবা ভালো সময়ে ‘ব্রেক থ্রু’ এনে দিতে পারলে আমার ও দলের জন্য ভালো হবে। এ ব্যাপারগুলোতেই মনোযোগ দিচ্ছি।’
অস্ট্রেলিয়ার জন্য মিরাজের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বুধবার থেকে। ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগে ঘাম ঝরানো পরিশ্রমে তৈরি হচ্ছেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে একেবারেই অনুজ্জ্বল ছিলেন। এবার ব্যাটিংয়েও রাখতে চান গুরুত্বপূর্ণ অবদান। মিরাজ বলেছেন, ‘দল থেকে আমাকে কখনোই চাপ দেওয়া হয় না। লক্ষ্য স্থির করলে চাপ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তার চেয়ে ওই ধরনের লক্ষ্য নির্ধারণ না করে দলের চাওয়া অনুযায়ী পারফরম্যান্স করাটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত।’
সিপিএলে ত্রিনবাগো নাইট রাইডার্সের হয়ে কোনো ম্যাচ না খেলার দুঃখ মিরাজ ভুলেছেন পোর্ট অব স্পেনের কুইন্স পার্ক ওভাল দেখে। ২০০৭ বিশ্বকাপে এই মাঠেই ভারতকে হারিয়েছিল হাবিবুল বাশারের দল। মিরাজ বলেছেন, ‘এই মাঠেই বিশ্বকাপে আমরা ভারতকে হারিয়েছিলাম, ওই মাঠেই আমি প্রস্তুতি নিয়েছি। মাঠে ঢুকেই আপ্লুত হয়ে পড়েছিলাম। ঘুরে ঘুরে পুরো স্টেডিয়াম দেখছিলাম।’
মাত্র ৯ বছর বয়সে দেখা সেই ম্যাচের অনেক কিছুই মনে করতে পারলেন মিরাজ, ‘মুশফিক ভাই, সাকিব ভাই, তামিম ভাই তিনজনই ফিফটি করেছিলেন। রাজ্জাক ভাই তিন উইকেট নিয়েছিলেন। মাশরাফি ভাই ম্যাচ সেরার পুরস্কার পেয়েছিলেন। তখন ওই স্মৃতিগুলো ভাসছিল।’ ৫ উইকেটে জেতা ম্যাচে তিনটি উইকেট নিয়েছিলেন মোহাম্মদ রফিকও। মিরাজ স্মৃতিচারণ করে বলেছেন, ‘এই মাঠে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো (আসলে দ্বিতীয়বার) ভারতকে হারিয়েছিল। এখন এই মাঠ সিপিএলে আমার হোম গ্রাউন্ড।’
"