সাহিদ রহমান অরিন

  ১৩ মে, ২০১৯

জিতলেই ফাইনালে বাংলাদেশ

তিন জাতির সিরিজে এখন পর্যন্ত একমাত্র অপরাজিত দলটার নাম বাংলাদেশ। অথচ লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আগের দেখায় গো-হারা হেরে গিয়েও কিনা সবার আগে ফাইনালের টিকিট কেটে বসে আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ! আসলে, কাগজে-কলমে টাইগাররা দুই ম্যাচ খেলে ফেললেও কার্যত মাঠের লড়াইয়ে নামতে পেরেছে একবার। স্বাগতিক আয়ারল্যান্ডের হয়ে আরেকটা ম্যাচ যে একাই খেলে দিয়েছে সর্বনাশা বৃষ্টি! তাতে সৃষ্টি হয়েছে ‘যদি-কিন্তু’র নানা সমীকরণ। মেঘের গর্জনে পাওয়া ২ পয়েন্ট আইরিশদের ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন যেমন বাঁচিয়ে রেখেছে, ঠিক তেমন চূড়ান্ত লড়াইয়ের টিকিট পেতে মাশরাফি বাহিনীকে অপেক্ষায় রেখেছে। তবে সব অপেক্ষার অবসান হতে পারে আজই।

আজ সোমবার মালাহাইডে বাংলাদেশ যদি উইন্ডিজকে আবার হারিয়ে দেয়, তাহলে আইরিশদের বিদায় ঘণ্টা বাজিয়ে ফাইনালের টিকিট পেয়ে যাবে বাংলাদেশ। তবে ডাবলিনের সবুজ গালিচায় ‘এক ঢিলে তিন পাখি’ মারতে চাচ্ছেন সাকিব-মুশফিক-তামিমরা। আয়োজকদের টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে দেওয়া, ফাইনালে নাম লেখানোর পাশাপাশি পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে উঠতে মরিয়া স্টিভ রোডসের শিষ্যরা। তবে প্রথম দেখায় অনায়াস জয় তুলে নিলেও এবারের লড়াইটা যে সেয়ানে-সেয়ানে হবে, সেটা ভালো করেই জানেন ক্রিকেট বোদ্ধারা।

চলতি সিরিজটা অমø-মধুর কাটলেও আইরিশদের বিপক্ষে আগের ম্যাচে ৩২৮ রানের পাহাড় টপকানো জয় ক্যারিবীয়দের আত্মবিশ্বাস কয়েক গুণ বাড়িয়েছে। বোলাররা ছন্দে না থাকলেও ব্যাট হাতে রানের ফুলঝুড়ি ছড়াচ্ছেন উইন্ডিজ টপ-অর্ডাররা। নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয় তো বটেই, এরই মধ্যে চার-চারটি সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন তারা। সেগুলোও আবার যেনতেন শতক নয়, পুরোনো রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়া আর মাইলফলক ছোঁয়া একেকটা শতক।

তবে এসবে ‘থোরাই কেয়ার’ টাইগারদের। কারণ, ক্যারিবীয়দের মতো একমুখী শক্তির ওপর দাঁড়িয়ে নেই ম্যাশবাহিনী। অন্তত এই সিরিজে ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং তিন বিভাগেই সাবলীল রোডসের ছাত্ররা। তা ছাড়া শাই হোপ-সুনিল অ্যামব্রিসের বিপরীতে তামিম ইকবাল-সৌম্য সরকারদের ব্যাটও যে তাদের হয়ে কথা বলছে। তাই রোডসের শিষ্যরা ভাবছেন কেবল নিজেদের নিয়েই।

এই ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে নজরে থাকবেন শ্যানন গ্যাব্রিয়েল। ১৮ মাস পর ওয়ানডে খেলতে নামা এই পেসার তিন ম্যাচে খানিকটা খরুচে হলেও শিকার নিয়েছেন ৬ উইকেট। তার ১০ ওভারে আগের ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা অবশ্য ৫৮ রান তুলতে পেরেছেন। তবে নিজেদের মধ্যকার শেষ টেস্ট ম্যাচে টাইগার ব্যাটসম্যানদের ওপর তিনি যেভাবে প্রভাব বিস্তার করেছেন, তাতে গ্যাব্রিয়েলকে নিয়ে চিন্তা কিছুটা থাকবেই। অন্যদিকে, তামিম-সাকিব-মুশফিকদের ছাপিয়ে এ ম্যাচেও পাদপ্রদীপের আলোয় থাকবেন সৌম্য সরকার। তার ধারাবাহিকতা নিয়ে টেকনাফ টু তেঁতুলিয়া কড়া সমালোচনা চললেও ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ফর্মটা এবার ডাবলিন অবধি উড়িয়ে আনতে পেরেছেন এই ড্যাশিং ওপেনার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ৭৩ রান করে নির্বাচকদের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন তিনি। তামিমের উদ্বোধনী সঙ্গী হিসেবে তার ওপরই ভরসা রাখছে বাংলাদেশ।

আইরিশদের বিপক্ষে রেকর্ড লক্ষ্য তাড়া করে জয়ের পর এ ম্যাচেও অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে নামতে পারে ক্যারিবীয়রা। তবে আগেভাগেই ফাইনাল নিশ্চিত হওয়ায় আজ বেঞ্চ শক্তি পরখ করে নিতে পারে উত্তর আমেরিকার প্রতিনিধিরা। সে ক্ষেত্রে বোলিং অলরাউন্ডার ফ্যাবিয়ান অ্যালেনের জায়গায় দেখা যেতে পারে রেইমন রেইফারকে। অন্যদিকে, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পাওয়া বিজয়ী একাদশই ধরে রাখতে পারে বাংলাদেশ।

তিন ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ বোনাসসহ ৯ পয়েন্ট। দুই ম্যাচে বাংলাদেশের পয়েন্ট ৬। পয়েন্টের মতো সবশেষ ওয়ানডে ফলাফলে এগিয়ে ক্যারিবীয়রা। শেষ পাঁচ ওয়ানডের তিনটিতে জিতেছে তারা। হার দুটিতে। বিপরীতে বাংলাদেশের জয় দুটিতে, পরাজয় তিনটিতে। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শেষ পাঁচ ম্যাচের চারটিতেই শেষ হাসি হেসেছে বাংলাদেশ।

মালাহাইডের ২২ গজ কেমন খেল দেখাবে, সেটা পরশুর ম্যাচের দিকে তাকালেই অনুমান করা যায়। এখানেই প্রথমে ব্যাট করে ৫ উইকেটে ৩২৭ রান তুলেছিল আয়ারল্যান্ড। সেই লক্ষ্য আবার ১৩ বল বাকি রেখেই টপকে গেছে জেসন হোল্ডার অ্যান্ড কোং। আজও বিপুল রান প্রসবের অপেক্ষায় মালাহাইডের পিচ।

ডাবলিনে সোমবার শীতের তীব্রতা একটু বেশি থাকবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় আবহাওয়া অধিদফতর। তবে স্বস্তিদায়ক সংবাদও দিয়েছে তারা। দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা বাড়বে। আর সকাল থেকে আকাশ আংশিক মেঘলা থাকলেও সোমবার বৃষ্টির হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কম। যাক, আজ অন্তত আকাশের আর্তনাদ টাইগারদের আরেকটা ফাইনাল নিশ্চিতের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। এবার নিজেদের খেলাটা খেলতে পারলেই হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close