চলমান এশিয়া কাপের সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচে হেরে পিঠ দেয়ালে ঠেকে গিয়েছিল বাংলাদেশের। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৩ রানের থ্রিলার জয়ে টুর্নামেন্টের ফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রেখেছে টাইগাররা। আফগান ম্যাচ, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিকূল কন্ডিশন, দলের আবহ, নিজের ক্যারিয়ার এবং মাইলফলকসহ সার্বিক বিষয়ে কথা বলেছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক খুলে দিয়েছেন মনের দুয়ার। তার বলা কথাগুলোর চৌম্বক অংশ পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো। কাল দুবাইয়ে টিম হোটেলে মাশরাফির সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন প্রিন্স রাসেল

  ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

‘আমার জীবনটাই ভাগ্যের ওপর দিয়ে’

প্রশ্ন : দীর্ঘ ১৭ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে এটাই কি সবচেয়ে কঠিন টুর্নামেন্ট?

মাশরাফি বিন মর্তুজা : হ্যাঁ, এটাই সত্যি কথা। একপর্যায়ে গিয়ে শরীর চলছে না। ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে চার দিনের মধ্যে তিনটা ম্যাচ খেলা কঠিন। যে পরিমাণ পানি শরীর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে, সেটা পুষিয়ে নেওয়া যাচ্ছে না। এটা খুব কঠিন। এ ধরনের টুর্নামেন্টে ম্যাচের আগে অন্তত একটা দিন বিশ্রাম থাকা দরকার।

প্রশ্ন : বাংলাদেশ এবং এখানকার গরমের পার্থক্য কোথায়?

মাশরাফি : এখানকার গরমে পেশিতে ক্র্যাম্প হচ্ছে। এভাবে খেলা খুব কঠিন। আমার পিঠে মুস্তাফিজের পিঠে ক্র্যাম্প করছিল। এমন হলো তো আপনি বোলিং করতে পারবেন না। যেখানে বলটা ফেলা দরকার সেটাই হবে না। বাজে বল হয়ে যায়।

প্রশ্ন : ক্র্যাম্পিং মানসিকভাবে কোন দিকটাতে সমস্যা করে?

মাশরাফি : যখন শরীর চলছে না তখন অন্য কিছু খুঁজে বের করতে হয়। সেটাও ঠিকমতো হচ্ছে না। ক্রিকেট তো পুরোটাই মনস্তাত্ত্বিক খেলা। সবকিছু একসঙ্গে যখন মিলে তখনই সেরাটা আসবে।

প্রশ্ন : আফগানিস্তানের বিপক্ষের জয়টা ছন্দে ফেরার আভাস কিনা?

মাশরাফি : আফগানিস্তানের সঙ্গে যখন প্রথম ম্যাচটা খেলেছি আমাদের কোনো মানসিক প্রস্তুতি ছিল না। কারণ পরের ম্যাচটা আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমরা কী করব, কী করা উচিতÑ এটা নিয়ে সংশয়ে ছিলাম। কারণ শতভাগ দিলে পরের ম্যাচে যদি সমস্যা হয়ে যায়। এসব কারণে আমরা বোলিং বিভাগে শেষ দিকে একটু এলোমেলো ছিলাম। মুস্তাফিজ, মুস্তাফিজ খেলেনি। সাকিবের খেলা নিয়েও ছিল অনিশ্চয়তা।

প্রশ্ন : ভারতের বিপক্ষে হারটা কি প্রত্যাশিত ছিল?

মাশরাফি : ভারতের কাছে হারাটা অপ্রত্যাশিত ছিল না। পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণও ওরা পাত্তা দেয়নি। এটা ঠিক ভারতের বিপক্ষে আমরা শতভাগ ঠিক থাকার পরও ভালোভাবে খেলতে পারিনি; পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করতে পারিনি। তাই আফগানিস্তান ম্যাচে আমাদের প্রস্তুতিতে অনেক ঘাটতি ছিল।

প্রশ্ন : ইমরুলকে ছয়ে খেলানোর সিদ্ধান্তটা কি আগে থেকেই ছিল?

মাশরাফি : অনেকেই আফগানিস্তানকে দুর্বল দল ভাবছে। ওদের বিশ্বমানের তিনজন স্পিনার আছে, নবি-মুজিব-রশিদ। ওদের সঙ্গে আমরা সহজে জিততে এমন কোনো ভাবনা ছিল না আমাদের। শতভাগ ক্রিকেট খেলেই জিততে হবে। কিন্তু আমরা শতভাগ খেলতে পারিনি। শুরুর বিপর্যয়ে আমরা শঙ্কায় ছিলাম ২০০ রান হবে কিনা। যে পরিকল্পনা করে ইমরুলকে (কায়েস) নামিয়েছি সেটা সফল হয়েছে বলেই আমরা এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। কখনো কখনো বড় জয়ের চেয়ে এমন জয় দলকে অনুপ্রাণিত করে।

প্রশ্ন : সুযোগ পেয়েও যারা পারছে না তাদের বিষয়ে কী বলবেন?

মাশরাফি : এ মুহূর্তে (নাজমুল হোসেন) শান্ত তরুণ। ওকে আমরা ব্যাকআপ করছি। যাতে ও নিরুৎসাহিত না হয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ পর্যন্ত আটটা ওয়ানডের সাতটাতে খেলেছে (এনামুল হক) বিজয়। এখন ও বলতে পারবে না যে ওকে সুযোগ দেওয়া হয়নি। পরে যে আবার সুযোগ পাবে না, তাও না। লিটনের বেলায়ও তাই। খেলোয়াড় যাতে নষ্ট না হয়, সেদিকে নজর রাখা গুরুত্বপূর্ণ। ওরা ভালো খেলোয়াড়; ওদের তৈরি করতে হবে। হুট করে নিলাম আর বাদ দিলাম এটা গত ১৬-১৭ বছরে দেখে আসছি। এই সিস্টেমটার পরিবর্তন করছি।

প্রশ্ন : ইমরুলকে ছয় নাম্বারে ব্যাটিংয়ে পাঠানোর কারণ কী ছিল?

মাশরাফি : ইমরুলকে ছয়ে খেলানোটা পূর্বপরিকল্পনার অংশ ছিল। ওই জায়গায় মোসাদ্দেক চেষ্টা করেও পারেনি। (বিপিএলে) যেহেতু রশিদ এবং মুজিবকে ইমরুল নেটে খেলেছে। সেই অভিজ্ঞতার কারণে ওকে ওখানে পাঠিয়েছি। প্রতিটি সিদ্ধান্তের পেছনেই যুক্তি থাকে। বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে তো ফাজলামি করা যায় না।

প্রশ্ন : ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে এমন কন্ডিশনে টানা বোলিং করা কতটা কঠিন?

মাশরাফি : ৩৩ ওভারের সময় মুস্তাফিজকে এনে ৫ ওভার করানোর ইচ্ছা ছিল। যাতে ওদের চাপে রাখা যায়। কিন্তু ও দুই ওভার করেই আমাকে বলল ভাই আর পারছি না। স্বাভাবিকভাবেই ওই মুহূর্তে এটা আমার ও দলের জন্য দুশ্চিন্তার। কারণ আপনি তো একজন খেলোয়াড়কে ইনজুরিতে ফেলতে পারেন না। আমার ইনজুরি নিয়ে ভাবার নেই। তাই নিজেই শুরু করলাম। আসলে গরমে অনেক কিছুই মাথায় চলে। অনেক সময় মাথা কাজ করে না।

প্রশ্ন : শেষ ওভারে মুস্তাফিজের হাতে বল দিয়ে কতটা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন?

মাশরাফি : ওর ওপর আমার শতভাগ আত্মবিশ্বাস ছিল। ও যদি ঠিক জায়গায় কাটার ফেলে তাহলে আউট হওয়ার সুযোগ আছে। ওকে আমি শুধু বলেছি, ঠিক জায়গায় বলটা করিস। যেটা আগে তুই করতি। এত কিছু ভাবতে হবে না। একটা বলই করবি, যা হওয়ার হবে।

প্রশ্ন : অধিনায়ক হিসেবে ভাগ্যকে কতটা বিশ্বাস করেন?

মাশরাফি : আমি অনেকবার বলেছি, আমি ভাগ্যে বিশ্বাসী। আমার জীবনটাই ভাগ্যের ওপর দিয়ে। শুধু খেলা নয়, পৃথিবীর কোনো কিছুই ভাগ্য ছাড়া সম্ভব না।

প্রশ্ন : প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আড়াইশ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন। এই অর্জনটা কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

মাশরাফি : আসলে ২৫০ উইকেট আমার কাছে গুরুত্বহীন। আমি সব কিছুর মধ্য দিয়ে চলতে পারছিÑ এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড়। তবে আপনি যদি মাইলফলকের কথা বলেন তাহলে আমি বলব অবশ্যই এটা অনেক বড় অর্জন। অনেক কঠিন সময় এসেছে, কিন্তু কখনো হাল ছাড়িনি। এত কিছুর পর এমন একটা অর্জন অবশ্যই নিজেকে আনন্দ দেয়।

প্রশ্ন : অনেকেই বলে থাকেন দলের পাঁচজন সিনিয়রই ভরসা। শুধু তামিম না থাকার প্রভাব পড়েছে। এটা দেশের ক্রিকেটের জন্য কতটা দুশ্চিন্তার?

মাশরাফি : সময়ের সঙ্গে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। কারোর জন্যই পৃথিবীেিত কিছু থেমে থাকে না। নির্দিষ্ট কিছু সময় সংগ্রাম করতে হয়। একটু মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়। শ্রীলঙ্কা ভুগছে এই কারণে। ওদের দলে কিন্তু প্রায় এক দশক ক্রিকেট খেলা ছয়জন ক্রিকেটার আছে। ওরা পারফর্ম করতে পারছে না বিধায় দল বেশি ভুগছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close