ক্রীড়া ডেস্ক

  ২৩ জুলাই, ২০১৮

‘শোক’ কাটিয়ে উঠেছেন নেইমার

রাশিয়া বিশ্বকাপের হট ফেভারিট ছিল ব্রাজিল। কিন্তু ভুতুড়ে বিশ্বকাপে মহা অঘটনের শিকার হয়ে ছিটকে গিয়েছিল পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। কাজানে কোয়ার্টার ফাইনালে সোনালি প্রজন্মের বেলজিয়ামের কাছে ২-১ গোলে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয় হলুদ শিবির। তাতেই ‘হেক্সা’ স্বপ্নের সমাধি হয়ে গেছে অন্তত চার বছরের জন্য।

অবশ্য সেমিফাইনালে উঠতে চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখেনি ব্রাজিল। কিন্তু সর্বস্ব নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েও শেষ রক্ষা হয়নি। গোলরক্ষক থিবাউট কোর্তোয়ার অতি মানবীয় পারফরম্যান্সের সুবাদে শেষ চারে উঠে গেছে ইউরোপের কালো ঘোড়া খ্যাত বেলজিয়াম। তবে ব্রাজিলের স্বপ্ন ভেঙে দিয়েও নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারেনি বেলজিয়ানরা।

যেকোনো টুর্নামেন্টে বরাবরই ব্রাজিলের গায়ে জড়ানো থাকে ফেভারিটের তকমা। রাশিয়া বিশ্বকাপে তো শিরোপার অন্যতম দাবিদার ছিল সেলকাওরা। বলা হচ্ছিল সেলেকাওদের রিজার্ভ বেঞ্চ দিয়েও একটা শক্তিশালী একাদশ তৈরি করা যায়। যা বিশ্বের যেকোনো দলকে হারানোর সক্ষমতা রাখে। সেই ব্রাজিলের জন্য রানার্সআপ হওয়াটাও কোনো সাফল্য নয়। ব্রাজিলিয়ানদের কাছে শিরোপা জয়ই একমাত্র সাফল্য।

অথচ সেই দলটা রাশিয়ার রঙ্গমঞ্চ থেকে ছিটকে গেছে কোয়ার্টার ফাইনালেই। বেলজিয়ানদের বিরুদ্ধে ২-১ গোলের সেই হারের পর ভেঙে পড়েছিলেন প্রাণভোমরা নেইমার। হতাশায় বিশ্বকাপের আর কোনো ম্যাচ দেখেননি, এমনকি বলটাও নাকি তার দেখতে ইচ্ছা করেনি।

রাশিয়া বিশ্বকাপে নেইমারের ‘ডাইভিং’ প্রবণতা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে কিন্তু দলের প্রতি নিবেদন নিয়ে প্রশ্ন চলে না। সেটি দেখা গেছে চার বছর আগে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপেও। কোয়ার্টার ফাইনালে চোট পেয়ে ছিটকে পড়ার পর নেইমার কতটা মুষড়ে পড়েছিলেন! ব্রাজিলের প্রতি তার এই ভালোবাসার বিষণœ প্রকাশ ঘটেছে রাশিয়া বিশ্বকাপেও। নেইমার নিজেই জানিয়েছেন, শেষ আট থেকে বিদায়ের পর তিনি বিশ্বকাপে আর কোনো খেলা দেখেননি। এমনকি যে বলটা তার ধ্যানজ্ঞান, সেই বলটাও দেখতে ইচ্ছা হতো না!

বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায়ের পর নেইমার ¯্রফে শোক পালন করেছেন। পরশু সংবাদ সংস্থা এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ব্রাজিলের এই তারকা ফরোয়ার্ড বলেছেন, ‘শোক পালন করেছি। ভীষণ কষ্ট লেগেছে। তবে সেই পরিস্থিতিটুকু পার হয়ে এসেছি। আমার সন্তান আছে, পরিবার আছে আর বন্ধু-বান্ধব। ওরা কেউ আমাকে এমন নিস্তেজ দেখতে চায়নি।’

রাশিয়া বিশ্বকাপে ব্রাজিলের হয়ে ৫ ম্যাচ খেলে ২ গোল করেছিলেন নেইমার। কিন্তু তার দল শেষ আটের বাধা টপকাতে পারেনি। কতটা কষ্ট পেয়েছিলেন, তা বলেছেন নেইমার নিজেই, ‘এমন নয় যে আর কখনো খেলতে চাইনি কিন্তু বলের দিকে তাকানোর ইচ্ছা হতো না। কোনো ম্যাচও দেখিনি।’

গ্রুপ পর্ব থেকে শেষ আট পর্যন্ত নেইমার বেশ ভালোই খেলেছেন। তবে ‘ডাইভ’ দেওয়ার দোষে সমালোচিতও হয়েছেন। এ নিয়ে নেইমারকে ঠাট্টা করে অনেক ‘ট্রল’ হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। কেউ কেউ তো এক কাঠি সরেস। নেইমারের এই ‘অভিনয়’ বিতর্ক নিয়ে মজার কিছু প্রতিযোগিতাও হয়েছে কিছু দেশে। এসব নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়টির ভাবনা, ‘এগুলো রসিকতার চোখেই দেখেছি। এমনকি আমি নিজেই শিশুদের সঙ্গে এ নিয়ে মজা করে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছি।’

কিন্তু নেইমার সব সময় প্রতিপক্ষের ট্যাকলের শিকার হতে ভালোবাসেন ভাবলে ভুল হবে। পিএসজি তারকার ভাষ্য, “প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হয়ে ড্রিবল করাই আমার খেলা। তাদের সামনে দাঁড়িয়ে বলতে পারি না ‘হে প্রিয়, দয়া করে পথ ছাড়ো, একটা গোল করব।’ এটা মনে করছেন সব সময় ট্যাকলের শিকার হতে ভালোবাসি? না, এটা খুব কষ্টের। ব্যথা লাগে। ম্যাচ শেষে ৪-৫ ঘণ্টা বরফ লাগাতে হয়। এই অভিজ্ঞতা না থাকলে কখনো তা বুঝতে পারবেন না।’

বিশ্বকাপে ফাউলের শিকার হয়ে রেফারির সহানুভূতি পেতে দৃষ্টিকটুভাবে অভিনয় করতে দেখা গেছে নেইমারকে। এজন্য সমালোচিতও হয়েছেন। তবে নেইমার মনে করেন, তাকে রেফারিদের আরো বেশি সুরক্ষা দেওয়া উচিত ছিল। নেইমার বলেছেন, ‘আমি বিশ্বকাপে খেলতে গিয়েছিলাম, প্রতিপক্ষকে হারাতে গিয়েছিলাম, লাথি খেতে নয়। এ নিয়ে যেভাবে আমার সমালোচনা হয়েছে এটা ছিল অতিরঞ্জিত। তবে আমি এখন বড় হয়েছি এসব সামলে নেওয়ার মতো সামর্থ্য আছে আমার।’

পিএসজি থেকে নেইমারের রিয়াল মাদ্রিদে যাওয়ার গুঞ্জন উঠেছিল। সেই গুজবটা উড়িয়ে দিয়েছেন ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার। বলেছেন, ‘যিনি এই ধরনের গল্প লিখছেন, তিনি আমার জীবন নিয়ে বেশি জানেন। যেটা কিনা আমার নিজেরও জানা ছিল না। এই ধরনের প্রশ্নের উত্তরে কিছুই বলব না। কারণ এসব কথা ভিত্তিহীন।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist