উপল বড়ুয়া

  ০৭ জুন, ২০১৮

সালাহকে ঘিরেই মিসরের স্বপ্ন

মিসরকে বলা হয় ফারাওয়ের দেশ। যদিও ইতিহাসের পরিক্রমায় ফারাও শাসন বিলুপ্ত হয়েছে হাজার বছর আগে। কিন্তু এখনো নীলনদের তীরের দেশটির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে আছে বিশালাকারের পিরামিডগুলো। প্রাচীন মিসরের ক্ষমতাবান ফারাওরা আজ বিলীন ঠিক তবে মিসরীয়রা আরেকজন ফারাওকে পেয়ে গেছে এরই মধ্যে। তিনি মিসর ফুটবলের ‘গড’ মোহাম্মদ সালাহ। রাশিয়া বিশ্বকাপে যাকে ঘিরে স্বপ্ন বুনছে মিসরের জনগণ।

মিসরজুড়ে এখন সালাহর জয়ধ্বনি। তা হওয়ারই কথা। কারণ এই লিভারপুল ফরওয়ার্ডের একক নৈপুণ্যের ওপর ভর করেই ২৮ বছর পর বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বের টিকিট পেয়েছে উত্তর আফ্রিকার মুসলিম অধ্যুষিত দেশটি। কিন্তু আনন্দের সঙ্গে একটি বেদনাও সঙ্গী হয়েছে মিসরীয়দের। কাঁধে চোট পাওয়ায় বিশ্বকাপে খেলাটা শঙ্কার মুখে পড়েছে দলের প্রাণভোমরা সালাহর।

উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ফাইনালে চোট পান এই ২৫ বছর বয়সী অলরেড ফরওয়ার্ড। এরপরই বিশ্বকাপ খেলাটা অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে যায় তার। কিন্তু সালাহ নিজেকে মনে করেন ‘যোদ্ধা।’ যোদ্ধারা যে কখনো হার মানে না, সেই বার্তাটাও এরই মধ্যে দিয়ে দিয়েছেন তিনি।

এই নিয়ে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ খেলবে মিসরীয়রা। ফারাওয়ের দেশটি প্রথম বিশ্বকাপ খেলে ১৯৩৪ সালে। নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপেই বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল মিসর। প্রথম রাউন্ডে হাঙ্গেরির মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে ৪-২ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল নীলনদের যোদ্ধারা। কিন্তু এরপর কেবল ব্যর্থতায় জুটেছে দেশটির কপালে। আফ্রিকার বাছাই পর্ব পার হতে না পারায় টানা ১১ বিশ্বকাপে দর্শক হয়েই খেলা দেখতে হয়েছে তাদের।

মিসর দ্বিতীয় বিশ্বকাপ খেলে ১৯৯০ সালে। ফিরে এসেই আরেকবার বিশ্বকে চমকে দেয় তারা। এবারও সেই ইতালির মাটিতে। গ্রুপ পর্বের প্রথম দুই ম্যাচে শক্তিশালী নেদারল্যান্ডস ও আয়ারল্যান্ডকে জিততে না দেওয়ার পর তৃতীয় ম্যাচে লড়াইয়ের পরও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে যায় তারা। আর এতেই দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার স্বপ্ন শেষ হয় যায় মিসরীয়দের।

বিশ্বকাপে বড় কোনো সাফল্য না পেলেও আফ্রিকার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে বেশ সফল মিসরীয়রা। মোট সাতবার আফ্রিকান কাপ অব নেশনস জিতেছে দেশটি। শেষবার শিরোপা ঘরে তুলেছে ২০১০ সালে। তাছাড়া দুইবার কনফেডারেশন কাপ অংশগ্রহণ করলেও বলার মতো কোনো সাফল্য পায়নি তারা।

বর্তমানে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের ৪৬ নাম্বারে আছে মিসর। আফ্রিকান কাপ জেতার পর নিজেদের সর্বোচ্চ ৯ নাম্বারেও উঠে এসেছিল তারা। তবে ২০১৩ সালে নিজেদের সর্বনি¤œ ৭৫ নাম্বারেও নেমে গিয়েছিল ফারাওরা।

আসন্ন বিশ্বকাপে মিসর খেলবে আর্জেন্টাইন কোচ হেক্টর কুপারের অধীনে। ২০১৫ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই আমূল পরিবর্তন ঘটে দলটির। তার অধীনেই মিসর তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের টিকিট পেয়েছে।

বিশ্বকাপে দেশটির প্রধান অস্ত্র হচ্ছেন সালাহ। সালাহ কেবল মিসরের নয়, বর্তমান বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ফুটবলারদেরও একজন। দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সদ্যবিদায়ী মৌসুমে হয়েছেন বর্ষসেরা খেলোয়াড়। রেকর্ড গড়া ৩২ গোল করে জিতেছেন গোল্ডেন বুট। তাছাড়া লিভারপুলের জার্সিতে প্রথম মৌসুমেই হয়েছেন ক্লাবের সেরা খেলোয়াড়। চলতি বছরের ব্যালন ডি’অর পুরস্কারেরও প্রধান দাবিদার তিনি। ১১ বছর পর দলকে তুলেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে।

কিন্তু মৌসুমের শেষটা হতাশা উপহার দিয়েছে তাকে। ফাইনালে চোট পেয়ে কান্নাভেজা চোখে মাঠ ছাড়েন ফুটবলের এই নতুন রাজা। কিন্তু দলের প্রাণভোমরাকে ছাড়া বিশ্বকাপের চূড়ান্ত দল চিন্তা করেনি মিসর। সালাহও নিজের প্রথম বিশ্বকাপে ফেরার বার্তাটা দিয়ে রেখেছেন সমর্থকদের। দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে হলে সালহকেই যে কিছু করতে হবে তা ভালো করেই জানেন সতীর্থরা।

রাশিয়া বিশ্বকাপে মিসরের আরেকটি চমকের নাম এসাম আল হাদারি। মিসরের এই গোলরক্ষকের বয়স ৪৫ বছর ৫ মাস। বিশ্বকাপের ইতিহাসে স্কোয়াডে জায়গা পাওয়াদের মধ্যে সবচেয়ে বয়সী খেলোয়াড় তিনি। দলের আর্মব্যান্ডও থাকবে এই হাদারির হাতে।

প্রথবারের মতো দ্বিতীয় রাউন্ডের স্বপ্ন নিয়ে রাশিয়া যাচ্ছে কুপারের শিষ্যরা। এরই মধ্যে বড় বড় দলগুলোর অন্যতম আতঙ্কের নাম মিসর। কারণ জায়ান্ট দলকে গুড়িয়ে দেওয়ার অভিজ্ঞতাটা তাদের বেশ পুরনো। বিশ্বকাপে ‘এ’ গ্রুপে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছে স্বাগতিক রাশিয়া, উরুগুয়ে ও সৌদি আরবকে। ১৫ জুন দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করবে মিসরীয়রা।

তথ্য সূত্র : উইকিপিডিয়া, ফিফাডটকম

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist