ক্রীড়া প্রতিবেদক
ট্রিপল সেঞ্চুরি হলো না লিটনের
চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণাঞ্চল
ড্র করতে পারলেই চলতো বিসিবি উত্তরাঞ্চলের। তারা হতে পারতো বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের (বিসিএলের) ষষ্ঠ আসরের চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু ষষ্ঠ ও শেষ রাউন্ডের দুই ইনিংসের ব্যাটিং ধসে হাতছাড়া হয়ে গেছে শিরোপাটা। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও উত্তরাঞ্চলকে ধসিয়ে দিয়েছেন আব্দুর রাজ্জাক। টানা দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন বাঁ-হাতি স্পিনার। তার দুর্দান্ত বোলিং নৈুপণ্যের ওপর দাঁড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে প্রাইম ব্যাংক দক্ষিণাঞ্চল।
পঞ্চম রাউন্ড শেষে দক্ষিণাঞ্চলের পয়েন্ট ছিল ৪৭। উত্তরাঞ্চলকে ইনিংস ও ৬৩ রানে জিতে তারা পেয়েছে বোনাসসহ ১৮ পয়েন্ট। মোট ৬৫ পয়েন্ট নিয়ে উত্তরাঞ্চলকে টপকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছে নুরুল হাসানের দল। বিসিএলে এটা তাদের তৃতীয় শিরোপা। ৬২ পয়েন্ট নিয়ে বিসিএলের এবারের আসরের রানার্সআপ হয়েছে উত্তরাঞ্চল।
শিরোপা লড়াইটা ছিল খুলনায়। কিন্তু রাজশাহীর ম্যাচটা ছিল শুধুই আনুষ্ঠানিকতার। কাল নিয়মরক্ষার ম্যাচে ব্যাট হাতে রানের বন্যা বইয়ে দিয়েছেন লিটন দশ। ট্রিপল সেঞ্চুরিরও আভাস দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আশা জাগিয়েও পারেননি ডানহাতি ব্যাটসম্যান। শেষ অবধি লিটন আউট হয়েছেন ২৭৪ রানে। যা বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ পঞ্চম ব্যক্তিগত সংগ্রহ। এর আগে মার্শাল আইয়ুব, মোসাদ্দেক হোসেন ও নাসির হোসেনেরও ট্রিপল সেঞ্চুরি হাতছাড়া হয়েছিল।
লটনের আড়াইশোর্ধ রানের ইনিংস ও আফিফ হোসেনের ১৪২ রানের সুবাদে প্রথম ইনিংসে ছয় উইকেটে ৫৯২ রানের পাহাড় গড়েছে ইসলামী ব্যাংক পূর্বাঞ্চল। আজ চতুর্থ ও শেষ দিনে ওয়ালটন মধ্যাঞ্চল ব্যাট করতে পারেন কিনা কে জানে! ২৯৩ বলের ইনিংসটা লিটন সাজিয়েছেন ৩৫টি চার ও দুই ছক্কায়। সানির বলে এলবির শিকার হয়ে সাজরে ফিরেছেন তিনি।
খুলনায় বিনা উইকেটে ৩২ রান নিয়ে শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে তৃতীয় দিন শুরু করে উত্তরাঞ্চল। আগের দিন শেষ বেলায় প্রতিরোধ গড়া দলটি কাল গুটিয়ে যায় এক সেশনেই। প্রথম ইনিংসে ১৯তম ওভারে আক্রমণে আসা রাজ্জাক দ্বিতীয় ইনিংসে বল হাতে পান শুরুতেই। দুই দিন মিলিয়ে ২১.২ ওভারের টানা স্পেলে ৪৮ রানে ৬ উইকেট নিয়ে প্রায় একাই গুঁড়িয়ে দেন উত্তরাঞ্চলকে। ক্যারিয়ারে নবমবারের মতো ম্যাচে পেলেন ১০ উইকেট।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশিবার ৫ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড গড়েন রাজ্জাক। এবার এনামুল হক জুনিয়রের সঙ্গে ব্যবধান বাড়ালেন আরেকটু। ক্যারিয়ারে ৩৪তম বারের মতো ইনিংসে নিলেন ৫ উইকেট। ম্যাচে সব মিলিয়ে ১০৫ রানে ১১ উইকেট নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের জয়ের নায়ক রাজ্জাক। দিনের শুরুতেই জুনায়েদ সিদ্দিককে ফিরিয়ে দেন বাঁ-হাতি এই স্পিনার। পরের ওভারে আরেক ওপেনার মিজানুর রহমানকে বিদায় করেন সাকলাইন সজীব।
দুই বাঁ-হাতি স্পিনারের দারুণ বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতে পারেননি উত্তরাঞ্চলের ব্যাটসম্যানরা। নিয়মিত উইকেট পতনের মধ্যে প্রতিরোধ গড়েন কেবল সোহরাওয়ার্দী শুভ। ৬০ বলে ৪১ রান করা এই অলরাউন্ডারকে ফিরিয়ে ম্যাচে দ্বিতীয়বারের মতো নিজের পঞ্চম উইকেট নেন রাজ্জাক। পরের বলেই শফিউল ইসলামকে ফিরিয়ে উত্তরাঞ্চলকে ১১৫ রানে থামিয়ে দেন তিনি।
প্রথম ইনিংসের ভুল থেকে শিখেনি গত আসরের চ্যাম্পিয়নরা। গড়তে পারেনি তেমন কোনো জুটি। প্রায় কারোর মাঝেই দেখা যায়নি উইকেটে পড়ে থেকে বড় ইনিংস খেলার চেষ্টা। সাকলাইন সজীব ৩ উইকেট নেন ৩৪ রানে।
রোল অব অনার
মৌসুম চ্যাম্পিয়ন রানার্সআপ
২০১২-১৩ মধ্যাঞ্চল উত্তরাঞ্চল
২০১৩-১৪ দক্ষিণাঞ্চল উত্তরাঞ্চল
২০১৪-১৫ দক্ষিণাঞ্চল পূর্বাঞ্চল
২০১৫-১৬ মধ্যাঞ্চল পূর্বাঞ্চল
২০১৬-১৭ উত্তরাঞ্চল দক্ষিণাঞ্চল
২০১৭-১৮ দক্ষিণাঞ্চল উত্তরাঞ্চল
সংক্ষিপ্ত স্কোর
উত্তরাঞ্চল-দক্ষিণাঞ্চল
উত্তরাঞ্চল ১ম ইনিংস : ১৮৭, দক্ষিণাঞ্চল ১ম ইনিংস : ৩৬৫/৮ ডিক্লে.
উত্তরাঞ্চল ২য় ইনিংস : ৪৩.২ ওভার, ১১৫ (মিজানুর ২০, জুনায়েদ ১৭, শুভ ৪১; মাশরাফি ০/২৪, রাজ্জাক ৪৮/৬, সাকলাইন ৩/৩৪, নাহিদুল ০/২, ইমরুল ১/৬)।
ফল: দক্ষিণাঞ্চল ইনিংস ও ৬৩ রানে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: আব্দুর রাজ্জাক।
মধ্যাঞ্চল-পূর্বাঞ্চল
মধ্যাঞ্চল ১ম ইনিংস: ৫৪৬
পূর্বাঞ্চল ১ম ইনিংস : ১৩৬ ওভার, ৫৯২/৬ (আগের দিন ২৬৪/৩) (লিটন ২৭৪, আফিফ ১৪২, অলক ১১, জাকের ৩২*, সাইফ উদ্দিন ২৯*; শরীফ ০/৬০, মোশাররফ ১/৮৫, শুভাগত ৩/১৫৬, সানি ২/১৩৫)।
"