সাহিদ রহমান অরিন
অবসরে রোনালদিনহো
সর্বকালের সেরাদের তালিকা করলে তার নাম নিশ্চিতভাবেই ওপরের সারিতে থাকবে। সেই তিনিই কিনা গেল আড়াই বছর কোনো ক্লাবেই ঠাঁই পাননি! হয়তো এই অভিমান থেকেই ফুটবলকে পাকাপাকিভাবে বিদায় বললেন ব্রাজিলের বিশ্বকাপজয়ী তারকা রোনালদিনহো। তার ভাই ও ব্যক্তিগত সহকারী রাবার্তো অ্যাসিস মঙ্গলবার ব্রাজিলীয় গণমাধ্যম ও’গ্লোবোর কাছে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। অবশ্য সিদ্ধান্তটা গেল বছরেই নিয়ে রেখেছিলেন রোনি। ২০১৮ সালের কোনো একসময় বুটজোড়া তুলে রাখবেন বলে গত ৭ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন এই কিংবদন্তি।
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে মাত্র তিন মাসের মাথায় পারস্পরিক সমঝোতায় স্বদেশি ক্লাব ফ্লুমিনেন্স ছাড়েন ৩৭ বছর বয়সী রোনালদিনহো। এরপর তাকে আর কোনো ক্লাবে দেখা যায়নি। গেল বছরের শুরুতে অ্যাসিস ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, অন্য আরেকটি পেশাদার ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন তার ভাই। কিন্তু তা বাস্তবে রূপ নেয়নি। দুই বারের ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়কে দলে ভেড়াতে আগ্রহ দেখায়নি কোন ক্লাবই! ফলে বিশ্বজুড়ে প্রদর্শনী ম্যাচ খেলেই সময় পার করেছেন সর্বকালের অন্যতম সেরা প্লে-মেকার এবং জাতিসংঘের শুভেচ্ছাদূত। ও’গ্লোবোর কলামে অ্যাসিস লিখেছেন, রাশিয়া বিশ্বকাপের পরপরই রোনালদিনহোর বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হবে। মানে, খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি টানার তিন বছরের মাথায় অভ্যর্থনায় সিক্ত হবেন এই ফুটবল জাদুকর। বিশ্বকাপের পর ও ক্লাব মৌসুম শুরুর আগে অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে চান অ্যাসিস। সেক্ষেত্রে তার পছন্দ আগস্ট মাস, ‘রোনির ফুটবল ক্যারিয়ার শেষ। সে বিদায় নিতে যাচ্ছে। চলুন, আমরা সামনের আগস্টেই তার জন্য স্মরণীয় মুহুর্তের কিছু আয়োজন করি। আমরা ব্রাজিল, ইউরোপ ও এশিয়ায় এই আয়োজনগুলো করতে চাই। আর সেলেসাওদের (ব্রাজিল ফুটবল দল) সঙ্গেও জমকালো অনুষ্ঠান আয়োজনের ইচ্ছা আছে।’
মনে রাখার মতো বিদায়ী সংবর্ধনা সত্যিই প্রাপ্য রোনালদিনহোর। রোনালদো-মেসির আবির্ভাবের আগে মহাজগৎ যে বুঁদ হয়ে ছিল রোনির পায়ের জাদুতে। অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে তার খেলায় ছিল নানামুখী বৈচিত্র্য। ২০০২ সালে ব্রাজিলের পঞ্চম বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম রূপকার ছিলেন। ২০০৬ সালে চৌদ্দ বছরের অপেক্ষা ঘুচিয়ে বার্সাকে জিতিয়েছিলেন চ্যাম্পিয়নস লিগ। মেসির ক্যারিয়ারের সূচনালগ্নে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে কাছের বন্ধু, আইডল ও পথপ্রদর্শক।
কুড়ি বছর আগে গ্রেমিওর হয়ে পেশাদারি ফুটবলে পা রাখা রোনালদিনহো ইউরোপে খেলেছেন এসি মিলান ও প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়েও। ২০১১ সালে আবারও স্বদেশে ফেরেন রোনি। ফ্ল্যামেঙ্গো, অ্যাটলেটিকো মিনেইরো, কুয়েরেতারো ও ফ্লুমিনেন্সের হয়ে ফুটবল জীবদ্দশার শেষের দিনগুলো কাটিয়েছেন। ২০১১ সালে মিলানকে সিরি এ শিরোপা জিতিয়ে প্রমাণ করেন ফুটবলকে দেওয়ার মতো অনেক কিছুই তখনো বাকি ছিল। ২০০৬ বিশ্বকাপে ব্যর্থতায় পরের দুই আসরে শত চেষ্টা করেও জাতীয় দলে নির্বাচিত হননি। বেপরোয়া, ভবঘুরে জীবনে অভ্যস্থ রোনালদিনহো বেশ ক’বার বিতর্কেও জড়িয়েছেন। ফুটবলবোদ্ধাদের ভাষ্য, ক্যারিয়ারের শেষটা রাঙিয়ে যেতে না পারা, নীরবে-নিভৃতে বিদায় নেওয়ার দায় তারই। মাঠের বাইরে লাগামহীন জীবন যাপন না করলে সর্বকালের সেরাদের সংক্ষিপ্ততম তালিকায় আজীবন উচ্চারিত হতো রোনির নাম। ফুটবলকে দুই হাত ভরে দিয়েছেন, হয়তো আরো অনেক কিছু দিতে পারতেন। এই আক্ষেপ সঙ্গে নিয়েই খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি টানলেন সদা হাস্যোজ্জ্বল রোনালদিনহো।
এখন সঙ্গীত ও নিজের ফুটবল স্কুলের কাজে মনোনিবেশ করবেন এই জীবন্ত কিংবদন্তি।
"