ফারুক হোসেন সজীব

  ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

ফড়িংডানা

তিথি ছোট্ট মেয়ে। প্রতিদিন সে স্কুলে যায়। কিন্তু স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে সে একটি দোকান দেখতে পায়। সেই দোকানে আবার অনেক গাছ বিক্রি হয়। ফলদ, বনজ, ঔষধি আর কত্ত রকম গাছ। দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। সেই সঙ্গে মনও ভালো হয়ে যায়। তিথির তো মন চায় সবগুলো গাছই সে বাসায় নিয়ে যেতে। কিন্তু তিথির কাছে তো অত টাকা নেই! আর অত গাছ লাগানোর তো জায়গাও নেই বাসায়। তাহলে কী হবে? তিথির যে সেই ছোটবেলার শখ। সে একটি সুন্দর বাগান করবে। সেই বাগানে হরেক রকম ফুল ও ফল ধরবে। দেখতেও ভীষণ ভালো লাগবে। তিথি সেই ফলগুলো সবাইকে খেতে দেবে।

শুধু কী তাই? তিথির আরো একটি শখ আছে। সেই শখের কথা তিথি আজ অবধি কাউকে বলেনি! শখটা হলো! সেই ফুলফলের বাগানে সে ফড়িংকেও দেখতে চায়। যদি তার একটি সুন্দর বাগান হয়। আর সেই বাগানে যদি সত্যি সত্যিই ফড়িং চলে আসে। তাহলে তিথি চুপিচুপি সেই ফড়িংয়ের ডানা দুটি আলত করে ধরবে। আলত ছোঁয়ায় ফড়িংটিকে ধরলে, সে হয়তো উড়েও যেতে চাইবে না। সেই সঙ্গে বাগানে আরো অনেক পাখি আসবে। প্রজাপতি আসবে। কিন্তু তিথি শুধু তার বাগানে ফড়িংকেই দেখতে চায়। ইস! ফড়িং কত ভালো। তিথি যখন দাদাবাড়িতে যায়। তখন সে ফড়িংয়ের পিছু পিছু ছুটতেই তার দিন পার হয়ে যায়। একবার তিথি ফড়িং ধরতে প্রায় অনেকদূর খেতের মধ্যে চলে গিয়েছিল। আসলে দুষ্টু ফড়িংটাই তো কী এক জাদুবলে তাকে অত দূরে সম্মোহন করে টেনে নিয়ে গিয়েছিল। তারপর থেকে তিথির কী যে হয়েছে। মন চায় খালি ফড়িং ধরতে। ফড়িংয়ের ডানা দুটি কত স্বচ্ছ। ঠিক যেন কাচের আয়নার মতো। আর ফড়িং যখন দুই ডানা মেলে উড়ে যায়। তখন কী একটা মায়াময় শব্দও হয়। ফড়-ফড়-ফড় শব্দ। শব্দটি খসখসে শোনালেও তিথির কানের কাছে যেন শব্দ ভীষণ সুন্দর শোনায়। আর অমন শব্দই তো তিথিকে খেতের ভেতরে অত দূর টেনে নিয়ে গিয়েছিল। এখন তিথি মনে প্রাণে শপথ করেছে যে করেই হোক ফড়িং তার চাই চাই। কিন্তু বাগান না করলে ফড়িং আসবে কোত্থেকে?

তাই তিথি ওর প্রতিদিনের টিফিনের টাকা জমিয়ে জমিয়ে গাছ কিনতে শুরু করল। আম্মু আব্বু তিথিকে মাঝে মাঝেই বলত এত গাছ কেনার টাকা কোথায় পাও তিথি? তিথি মিষ্টি হেসে বলে, বাহ্-রে তোমরা কী আর আমাকে কম টাকা দাও নাকি? অনেক টাকা তোমরা দাও। আমি শেখান থেকেই তো জমিয়ে জমিয়ে গাছগুলো কিনি। আম্মু তিথির মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, কিন্তু এত এত গাছ তুমি কোথায় লাগবে?

কেন আমাদের বেলকুনিতে তো অনেক ফাঁকা জায়গা পরে আছে। শেখানেই লাগাব।

শুনে আম্মু বলেন, হ্যাঁ তা অবশ্য লাগানো যায়। কিন্তু তার জন্য তো মাটির পাত্রও কিনতে হবে। তিথি বলল, মাটির পাত্র না হলেও হবে। বাড়িতে যে ভাঙা ভাঙা বালতি আছে। সেগুলো দিয়েই হবে। এখন দরকার শুধু মাটি। শুনে আব্বু বললেন, আচ্ছা মাটি আমি তোমাকে ব্যবস্থা করে দেব। ছেলেমেয়েরা পাশেই মাঠেই খেলাধুলা করে। শেখানে প্রচুর উর্বর মাটি আছে। শুনে তিথি ভীষণ খুশি হলো। মনে মনে ভাবল, যাক বাবা বাঁচা গেল। মাটির চিন্তায় সে এমনিতেই কেমন যেন অস্থির ছিল। তারপর সবাই একসঙ্গে কাজে লেগে পড়ল। আর মাত্র এক দিনের তৈরি করে ফেলল একটি ছোট্ট সুন্দর বাগান। তারপর থেকে তিথি রোজ স্কুলে যাবওয়ার সময় সেই বাগানে পানি দেয়। আবার স্কুল থেকে ফিরে এসে সোজা বাগানে চলে যায়। গাছগুলো হাত দিয়ে একটু ছুঁয়ে দেখে। গাছগুলো কত বড় হলো। দেখতে দেখতে গাছগুলোতে কঁচিপাতাও গজিয়ে উঠল। আর বাগানটাও চীরসবুজ হয়ে গেল। কিন্তু তিথির একটিই চিন্তা। বাগানে কোনো ফড়িং আসছে না কেন? বাগানে তো অনেক পাখিও আসে। বিশেষ করে সকালে। শালিক, চড়ুই, বুলবুলি পাখি। কিন্তু ফড়িং তো এক দিনও এলো না? তিথি প্রতিদিন বিকালে গাছগুলোতে পানি দেয় আর ফড়িংয়ের অপেক্ষায় থাকে।

কিছুদিন হলো আবার আরেকটি সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাহল তিথি যখনিই বাগানে পানি দিতে যায়। তখনই তিথিকে ভীষণ মশা কামড়ায়। তিথি বিষয়টি আম্মুকে বলতেই আম্মু কেমন ভয় পেয়ে আঁতকে উঠলেন। বললেন, সেকি! পুরো ঢাকা শহরেই তো ডেঙ্গু জ¦রে রোগীরা হসপিটালে গিজগিজ করছে। শেখানে তোমাকে রোজ মশা কামড়াচ্ছে। আর তুমি কি না এত দিন পর আমাকে বলছ? শুনে আব্বু বললেন, তোমাকে আর বাগানে যেতে হবে না। বাগানে গেলেই তোমাকে মশা কামড়াবে। আর হ্যাঁ আজই তোমার ব্লাড টেস্ট করাতে হবে। তিথি বুঝতে পারল, আব্বু আম্মু দুজনই ভীষণ চিন্তা করছেন। পরদিনই ব্লাড টেস্ট করা হলো। কিন্তু তিথির কোনো ডেঙ্গু ধরা পড়ল না। তিথি আব্বু আম্মুকে বলল, আমার তো ডেঙ্গু হয়নি। এখন আমি বাগানে যাই? আব্বু কিছু বললেন না। কিন্তু আম্মু নিষেধ করলেন। তবু তিথি আম্মুর কথা উপেক্ষা করে চুপিচুপি বাগানে গেল।

কিন্তু একি! বাগানে হঠাৎ একটি ফড়িং! আর ফড়িংটা ভনভন করছে। তিথি আনন্দে আত্মহারা হয়ে আম্মু আব্বুকে ডাকতে লাগল। বলল, আব্বু-আম্মু দেখে যাও আমার বাগানে ফড়িং এসেছে। কী সুন্দর ডানা ঝাপটাচ্ছে। আব্বু আম্মুও ছুটে এলেন। দেখলেন, সত্যি সত্যিই একটি ফড়িং। বাগানের চারদিকে উড়াউড়ি করছে। কিন্তু একি! ফড়িংটি যে সব মশাকে খেয়ে ফেলছে। আম্মু দেখে বললেন, কী আশ্চর্য! তাই না? আব্বু বললেন, আশ্চর্য তো বটেই! ফড়িংয়ের প্রধান খাদ্যই তো এই মশা। তবে একটি কথা কি জানো? এই ফড়িং ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তাই মশাগুলোও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিথি এতক্ষণ আব্বু আম্মুর কথা শুনছিল। আর অবাক হয়ে ভাবছিল, ফড়িং তাহলে মশাগুলোকে খেয়ে খেয়ে আমাদের উপকারও করে? তিথি আব্বু আম্মুকে বলল, আমি ফড়িং ধরব! আব্বু আম্মু নিষেধ করলেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা! তিথি তবু বাগানে ঢুকল। তারপর আস্তে আস্তে ফিড়িংয়ের পিছু নিল। একটি ফুলের ওপর ফড়িংটি বসে আছে। আর অমনি সুযোগ বুঝে তিথি ফড়িংটিকে আলত করে ধরল। তারপর দুচোখ ভরে ফড়িংটিকে সে দেখতে লাগল। আব্বু আম্মু বললেন, অনেক হয়েছে। এবার ফড়িংটাকে ছেড়ে দাও তিথি। ফড়িংটা বাগানের চারদিকে উড়ে উড়ে মশাগুলোকে খেয়ে ফেলুক। বাড়িতে যা মশা হয়েছে! তিথি ফড়িংটাকে ছেড়ে ছিল। কী আশ্চর্য ! ফড়িংটি ফড়-ফড়-ফড় করে বাগানের চারদিকে উড়তে লাগল। আর মশাগুলোকে ধরে ধরে মনে হয় ক্যাত ক্যাত করে গিলতে লাগল!

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close