ফারুক হোসেন সজীব

  ০৪ মে, ২০১৯

ভুতুড়ে শব্দ

ইফতির দাদুবাড়িতে অনেক গাছপালা আর বাঁশঝাড়ে ভর্তি। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই বাড়িটি পাখিদের কলতানে মুখরিত হয়ে ওঠে। সারা দিন এই পাখিগুলো কোথায় থাকে, কে জানে?

ইফতির দাদুবাড়ি অনেকটা ফাঁকা বাড়ির মতোই। মানে আশপাশে তেমন কোনো বাড়িঘর নেই। যা আছে দু-একটি বাড়িঘর তারাও আবার সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই দাদুবাড়ির সীমানার দিকেও আসে না!

তাদের ধারণা, দাদুবাড়িতে ভূত থাকে! কারণ দাদুবাড়ির বাঁশঝাড় থেকে এক অদ্ভুত শব্দ হয়। আজ অবধি কেউ সেই শব্দের উৎস খুঁজে পায়নি! দিনের বেলাতেও অমন অদ্ভুত শব্দ হতে থাকে!

ইফতির চাচাতো ভাই ফুয়াদ বলল, আজকাল নাকি আরো বেশি জোরে জোরে শব্দটি হচ্ছে। মনে হয় ভূতেরা মিছিল করছে!

ইফতি বলল, কিন্তু ভূত বলে তো কিছু নেই! আর এই শব্দটি আসলে কোনো প্রাণীরও না! তবে, শব্দটি শুনতে অনেকটা ঝিঁঝিঁপোকাদের

মতোই মনে হয়!

ফুয়াদ বলল, ঠিক বলেছ। আমিও প্রথম প্রথম ঝিঁঝিঁপোকা ভেবে ভুল করেছিলাম। কিন্তু এই শব্দ ঝিঁঝিঁপোকার না! ইফতি বলল, সেটা তো আমি নিজেও জানি রে!

আচ্ছা, আমি যখন এসেছি তখন এই শব্দটির একটি কিনারা না করে যাচ্ছি না। তুই শুধু আমার সাথে থাকবি! কি পারবি না?

অবশ্যই পারব! এই আমি তোমার সাথেই লেগে থাকতাম! শুনে ইফতি হেসে ফেলল।

সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ইফতি আর ফুয়াদ সেই শব্দের উৎস খুঁজতে বাগানের চারদিকে রীতিমতো অনুসন্ধান চালাল! কিন্তু সব গুড়েবালি! তেমন কিছুই পাওয়া গেল না!

ইফতি বলল, একটি শব্দ যা শুনতে পাচ্ছি তার কোনো উৎস থাকবে না, তা কী করে হয়?

এদিকে যে সন্ধ্যা হয়ে এলো। সন্ধ্যার আঁধার যতই গাঢ় হচ্ছে ততই কেন যেন ভয় ভয় করছে।

ফুয়াদ বলল, এগুলো ভূতদের শব্দ! এবার বিশ^াস হলো তো! চলো, ভালোই ভালোই এখান থেকে কেটে পড়ি! সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই শুরু হলো আরো বিচিত্র কিছু শব্দ! সব শব্দ যেন সেই একটি শব্দের সাথে এসে যোগ হয়েছে! এখন অনেকগুলো অদ্ভুত শব্দ হচ্ছে!

ইফতি বাঁশঝাড়ের দিকে এগিয়ে গেল। তার হাতের টসলাইটটি জ¦ালাল, কিন্তু কিচ্ছুটি দেখতে পেল না। ইফতি ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেল! তার মানে সত্যি সত্যিই কী ভূতেরাই এমন শব্দ করছে?

ইফতির ভেতরেও কেমন যেন ভয় ঢুকে যাচ্ছে। ইফতি বুঝতে পারছে, যা কিছু আমাদের অজানা, ভয় মূলত সেখানেই লুকিয়ে থাকে। কিন্তু এমন হলে তো চলবে না, জীবন থেমে যাবে! তাই যে করেই হোক আমাদের এই শব্দের উৎস খুঁজে বের করতেই হবে! না হলে এই একটি শব্দ থেকে গ্রামের ভেতরে অনেক কুসংস্কার ছড়িয়ে পড়বে। ছোট ছেলেমেয়েরাও ভয় পাবে! ইফতি শব্দের উৎস খুঁজতে গাছপালা ঝোপঝাড় হাতড়াচ্ছিল। হঠাৎ দেখতে পেল ফুয়াদ একটি বাঁশপাতা দিয়ে বাঁশি বাজাচ্ছে! ইফতি দৌড়ে এসে ফুয়াদের হাতের বাঁশিটি কেড়ে নিল! তারপর ইফতিও

বাজাতে লাগল!

ইউরেকা! পেয়ে গেছি! ফুয়াদ অবাক হয়ে বলল, কী পেয়েছ ভাইয়া?

এই দেখ! বলে ইফতি ফুঁ দিয়ে বাঁশপাতার বাঁশিটি বাজাতে লাগল।

ইফতি বলল, এখন বুঝতে পেরেছিস?

কই না তো কিছুই তো বুঝলাম না! আরে গাধা! এটাই তো মূল রহস্য, আসলে ঐ বাঁশের পাতাগুলো থাকে ঠিক এই পাতার বাঁশির মতোই আড়াআড়ি! আর যেইনা বাতাস এসে বাঁশের পাতাগুলোতে লাগে, অমনি পাতাগুলো এক সাথে বেজে ওঠে! অদ্ভুত শব্দ হয়! আর ঐ শব্দকেই আমরা ভুতুড়ে শব্দ ভেবে এত দিন ভুল করেছি!

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close