রুহুল আমিন রাকব

  ২০ জানুয়ারি, ২০১৮

শুভর প্রিয় পাখি

শুভর মন আজ খুব খারাপ, আর হবেই বা না কেন? রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে বাসার বেলকনির সামনে কাঁঠালগাছে যে ঘুঘু পাখি দুটিকে রোজ দেখত। আজ দুদিন হলো সেই পাখি দুটির কোনো খোঁজ খবর নেই। আহা! কত সুন্দর করেই না সকাল-বিকেল আপন সুরে ডাকত পাখি দুটি। শুভর মনে হাজার রকম কথা ভিড় করে। তবে কি পাখি দুটিকে শিকারিরা ওদের ফাঁদে আটকে ফেলছে? না কি শুভর সঙ্গে অভিমান করে চলে গেছে ওদের বাড়ির সীমানা ছেড়ে? আরো কত রকম কথা যে ভিড় করে শুভর মনে টপ টপ করে অশ্রু বেয়ে পড়ছে শুভর চোখ দিয়ে। শুভ এই শুভ আরে কোথায় তুমি? স্কুলের সময় হয়ে যাচ্ছে তো, তাড়াতাড়ি দুধ গ্লাস খেয়ে নাও না! শুভর আম্মুর কথায় একটুও কান দেয় না শুভ। সে আপন মনে অপলক তাকিয়ে আছে বেলকনির ওপারে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকা কাঁঠালগাছের ওই মগ ডালের দিকে। যে ডালে রোজ এসে আপন মনে বসতো পাখি দুটি। শুভর খুব প্রিয় ছিল পাখি দুটি। এই তো সেদিন সকালের কথা, বেলকনিতে বসেছিল শুভ আর শুভকে দেখেই পাখি দুটির সে কী আনন্দ! অতীতের কত স্মৃতি না আজ মনে পড়ছে শুভর। শুভর যখন মন খারাপ থাকত, স্কুলের বন্ধুরা যখন তাকে বকা দিত। স্কুল ছুটি শেষে বাসায় এসে যখন দেখত তার সব বন্ধু খেলা করছে, কিন্তু তাকে খেলায় নিচ্ছে না শুভ তখন মন খারাপ করে বাসায় চলে আসত। বাসার বেলকনির সামনে হাত বাড়িয়ে বসে থাকত, ঠিক তখনি কোথা থেকে যেন ফুড়ুৎ করে উড়ে আসত পাখি দুটি। যেন শুভর মন খারাপের খবর অনেক আগে থেকে জানত ওরা। সেই সব স্মৃতি আজ যেন খুব করে মনে পড়ছে শুভর। হঠাৎ কারো কণ্ঠ শুনে এদিক-ওদিক তাকায় শুভ না কাউকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না, তবে শুভর কাছে কণ্ঠস্বরটা খুব পরিচিত পরিচিত মনে হলো। এই যে আমার বন্ধু তুমি মন খারাপ করে বসে আছো কেন? তুমি না আমাদের ভালো বন্ধু! তাহলে তুমি তোমার আম্মুর কথা শোন না কেন? রোজ স্কুলে যাওনা কেন? রুটিনমতো গ্লাসের দুধ খাওনা কেন? এই যে বন্ধু আজ থেকে তুমি মন খারাপ করে থাকবে না। তোমার হাতের সব কাজ নিয়মিত করবে। রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠবে আম্মুর কথা মেনে চলবে। রোজ স্কুলে যাবে। মনে থাকবে তো আমাদের কথাগুলো বন্ধু? ওদের কথা শুনে শুভ খুশিতে চিৎকার করে কেঁদে ওঠে আর ঠিক তখনি পাখি দুটি শুভকে বলে এই যে বন্ধু তুমি ভালো থাক সব সময় আমাদের কথা ভেবে একটুও মন খারাপ করবে না। আমরা এখন একজন শিকারির হাতে বন্দি। দিনে দিনে পৃথিবীর বুক থেকে আমাদের নিঃস্ব করে দিচ্ছে তোমাদের মানুষ জাতির কিছু বিষধর কীট। আমাদের জাতি ভাইদের কেউ ওরা ফাঁদ পেতে ধরে ফেলে ওই কীটদের প্রতি তোমাকে রুখে দাঁড়াতে হবে। আর কেউ যেন আমাদের ধরতে না পারে এর জন্য সবাইকে সচেতন করতে হবে। তোমাকে আর তোমার স্কুলের বন্ধুদের মিলে। যদি দিনে দিনে আমাদের তোমরা এভাবে মেরে ফেল তবে তোমাদের এই সবুজ পৃথিবী আর সবুজ থাকবে না হুমকির মুখে পড়বে তোমাদের সবুজ ফসলের মাঠ। এই তো আর কিছুদিন পড়ে তোমাদের দেশে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসবে শীতের অতিথি পাখিরা সাবধান কখনো ওদের ধরবে না, কারণ অতিথিদের কোনো ক্ষতি করতে নেই। বিদায় বন্ধু বিদায় ভালো থাক তুমি। এই কথা বলে আবার উড়ে চলে গেল পাখি দুটি, পাখি দুটির জন্য অনেক মন খারাপ হলো শুভর। কিন্তু তার তো আর কিছু করার নেই। শুভ মনে মনে ভাবে সত্যি তো আমরা মানুষ নামের কীট। আজ আমাদের কারণে বিলুপ্তর পথে অনেক পশুপাখি। আজ আমাদের সমাজের কিছু কিছু মানুষের ব্যবহার পশুর চেয়েও খারাপ আরো কত কথা যে আনমনে একা একা বলছে শুভ। হঠাৎ শুভর আম্মুর ডাক। শুভ এই শুভ ঘরে চলে আয় তাড়াতাড়ি হাত-মুখ ধুয়ে নাও সন্ধ্যা হয়ে গেছে তো পড়ার টেবিলে যাও তাড়াতাড়ি। জি আম্মু এই তো আম্মু আমি আসছি তো। পড়তে বসে কখন যে টেবিলে ঘুমিয়ে পড়ছে তা সে নিজেও জানে না। শুভর আম্মু খাতায় তাকিয়ে দেখে বেলকনির সামনের সেই কাঁঠালগাছ আর মগডালে বসে থাকা সেই ঘুঘু পাখির ছবি আঁকা শুভর খাতার পৃষ্ঠাজুড়ে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist