নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৯ আগস্ট, ২০১৭

বাসের টিকিট নিয়ে বিস্তর অভিযোগ, অস্বস্তি ট্রেনেও

বিক্রির শুরুতেই ৩০ ও ৩১ আগস্টের টিকিট উধাও * উত্তরাঞ্চলের ১৭ জেলায় বাসের শিডিউল অর্ধেকে নেমেছে

ফজরের নামাজ কল্যাণপুরে আদায় করে গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টায় টিকিটের জন্য শ্যামলী বাস টাউন্টারে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েন বগুড়ার বাসিন্দা সানী। চাহিদা অনুযায়ী টিকেট মিলবে; এমনটাই আশা করেছিলেন তিনি। লম্বা লাইন পেরিয়ে কাউন্টারে পৌঁছে ৩১ আগস্টের টিকিট চাইতেই জানতে পারেন ওই দিনের টিকিট আগেই শেষ হয়েছে। কোনো দেন-দরবার কাজে না আসায় ১ সেপ্টেম্বরের দুইটি টিকিট কেটে সন্তুষ্ট থাকেন এই যাত্রী।

জানতে চাইলে অনেকটা আক্ষেপ করে সানী বলেন, টিকেট চাইতেই বলে ৩১ তারিখ বিকেলের কোনো টিকেট নাই। তাহলে টিকেট গেল কোথায়? হয়তো পরে বেশি টাকায় বিক্রি করার জন্য রেখে ুদিয়েছে। কল্যাণপুরের মতো গাবতলীর বাস কাউন্টারগুলোর চিত্র ছিল প্রায় একইরকম। রাজধানীর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুজাহিদ গাবতলীর এস আর পরিবহনের সামনে সকালে এসেই লাইনে দাঁড়ায়। টানা ৩ঘণ্টা অপেক্ষার পর সকাল ১০টায় কাউন্টারের কাছে পৌঁছান তিনি। ৩০ ও ৩১ আগস্টের টিকিট চাইতেই জবাব আসে এ দুদিনের কোনো টিকিট নেই। কোন ধরনের বাক-বির্তকে না জড়িয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও আগের দিন অর্থাৎ ২৯ আগস্টের তিনটি টিকিট নিয়ে গন্তব্যের পথে পা বাড়ায় মুজাহিদ। বলেন, প্রথমে ৩১ তারিখের, এরপর ৩০ তারিখের টিকেট চেয়েছিলাম, কিন্তু তারা দেয় না। বাধ্য হয়ে ২৯ তারিখের তিনটি টিকেট নিতে হয়েছে। তবে, টিকিটের দাম বেশি অভিযোগ করেন তিনি।

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার থেকে বাস ও ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। সূর্য ওঠার আগেই মানুষ ভিড় জমিয়েছে রাজধানীর বাস কাউন্টারে এবং জনস্রোতের একটা অংশ ছিল রাজধানীর কমলাপুর স্টেশনে। আর আগামী ২০ আগস্ট থেকে নৌপথের যাত্রীরা সংগ্রহ করতে পারবেন লঞ্চের টিকিট।

বাস ও ট্রেনের টিকিট কাটতে গিয়ে বরাবরের মতোই ভোগান্তির বিবরণ দিলেন টিকিট প্রত্যাশীরা। বাসের ক্ষেত্রে তাদের অভিযোগ-৩০, ৩১ আগস্ট ও ১ সেপ্টেম্বরের টিকিট ইচ্ছা করেই বিক্রি করা হচ্ছে না। আর ট্রেনের টিকিটের মধ্যে এসি কেবিন, চেয়ার ও বার্থ এসব শ্রেণির টিকিট পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। লাইনের প্রথমভাগে থেকেও বঞ্চিত যাত্রীরা বলেন, এসব টিকিট চলে যাচ্ছে ভিআইপিদের জন্য।

টিকিট না পাওয়া প্রসঙ্গে বাসের কাউন্টারম্যানরা বললেন, শেষ ৩ দিনের চাহিদা বেশি থাকায় ফুরিয়ে গেছে। বিক্রি হচ্ছে না অভিযোগটি সঠিক নয়। আর কমলাপুর রেলস্টেশনের কাউন্টারম্যানরাও বলেছেন, সব শ্রেণির টিকিটই লাইনে বিক্রি হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় কম হওয়ায় অভিযোগ করছেন যাত্রীরা। অর্থাৎ টিকিটপ্রত্যাশী মানুষজনের অভিযোগ তারা কাক্সিক্ষত টিকিট পাচ্ছেন না। আর কাউন্টার থেকে বলছে শেষ। এবার ঈদে সরকারি ছুটি আগামী ১ থেকে ৩ সেপ্টেম্বর। ফলে ৩০ ও ৩১ আগস্টের টিকিটের চাহিদা বেশি।

তবে, বন্যার প্রভাব দেখা গেছে উত্তরাঞ্চলের বাস কাউন্টারগুলোতে। রাজধানী থেকে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় যেসব পরিবহনের বাস চলাচল করে, এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হানিফ পরিবহনের বাস। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উত্তররাঞ্চলের ১৭ জেলায় যাত্রীবাহী বাসের ট্রিপ অর্ধেকের বেশি কমিয়ে এনেছে পরিবহন মালিকরা। তারা বক্তব্য, উত্তরাঞ্চলে চলমান বন্যা, অতিবৃষ্টিতে মহাসড়কে খানাখন্দ ও বড় গর্তের সৃষ্টি ও সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

তাদের দাবি, প্রবল বন্যা ও মহাসড়কের নাজুক অবস্থার কারণে এবার ঈদে যাত্রার পরিমাণ এক তৃতীয়াংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। এরপরও যেসব টিকেট বিক্রি হচ্ছে, সেইসব যাত্রীদের নির্বিঘেœ গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া নিয়ে চিন্তিত তারা।

এদিকে, গতকাল সকালে গাবতলীর হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, মানুষ আর মানুষ। এরকম গায়ে-গায়ে তারা দাঁড়িয়ে। মুছাব্বের ৩১ আগস্টের পাঁচটি টিকিটের জন্য এসেছিলেন। ভোরে লাইনে দাঁড়ানো এই যাত্রী সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কাউন্টারম্যানের মুখোমুখি হন। ৩০ আগস্টের দুটি টিকিট হাতে পেয়েছেন। কল্যাণপুরে শ্যামলীর কাউন্টার থেকে ১ সেপ্টেম্বরের পাঁচটি অগ্রিম টিকেট কাটেন নওগাঁর যাত্রী হোসেন। অন্য সময়ের ভাড়া ৪০০ টাকার চেয়ে স্থলে ৭০ টাকা বেশি দিয়ে টিকেট কিনতে হয়েছে বলে জানান তিনি।

অবশ্য হানিফ এন্টারপ্রাইজের কল্যাণপুর কাউন্টারের কাউন্টার মাস্টার মোহাম্মদ আলম জানান, তারা ২৪ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খুলনা অঞ্চলের বিভিন্ন জেলার টিকেট বিক্রি করছেন। ফিরতি ট্রিপে যাত্রী না থাকায় ভাড়া অন্য সময়ের চেয়ে একটু বেশি নেওয়ার যুক্তি দেখান। এ ছাড়া কল্যাণপুরের শ্যামলীর কাউন্টারে এবং গাবতলীর এস আর ট্রাভেলসের চিত্রও একই ছিল।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মূলত টিকেট বিক্রির শুরুতেই গাবতলী ও কল্যাণপুরের বাস কাউন্টারগুলোতে দেখা গেছে মানুষের দীর্ঘ সারি; লম্বা সময় অপেক্ষার পর তারা পাচ্ছেন বাড়ি ফেরার টিকেট। ভোগান্তির অভিযোগের পাশাপাশি আনন্দও আছে। আবার সময়মতো যাত্রী পৌঁছানো নিয়ে চিন্তা করছেন কাউন্টারের লোকজন। তাদের একজন বললেন, এখনো গাড়ি রাস্তায় আটকে আছে। ঈদের সময় কী হবে ভয়ে আছি। এ ছাড়া উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি ও রাস্তার অবস্থা খারাপ হওয়ায় শঙ্কা বাড়ছে। কাউন্টার ব্যবস্থাপকরা জানান, ঈদের ছুটি শুরুর আগের দিন ৩১ আগস্ট টিকেটের চাহিদা বেশি। সেদিন বৃহস্পতিবার হওয়ায় অনেকেই অফিস শেষ করে বাড়ির পথে ছুটবেন। তবে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, ৩১ আগস্টের টিকেট থাকলেও পরে অতিরিক্ত দামে বিক্রির জন্য কোনো কোনো কাউন্টারে এখন বিক্রি করছে না।

এদিকে, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে ঢাকার কমলাপুরে। ৩১টি আন্তনগর ট্রেনের বিভিন্ন গন্তব্যের ২২ হাজার ৪৯৬টি টিকেট বিক্রি করা হয়েছে গতকাল। ৩৫ ভাগ কোটার জন্য রেখে দেওয়া হয়। গতকাল সকাল ৮টা থেকে কমলাপুর স্টেশনের ২৩টি কাউন্টার থেকে একসঙ্গে টিকেট বিক্রি শুরু হয়। গতকাল দেওয়া হয়েছে ২৭ আগস্টের টিকেট। আজ বিক্রি হবে ২৮ আগস্টের টিকিট। প্রথম দিন ভিড় তুলনামূলক কম থাকায় টিকেট মিলেছে স্বস্তিতে।

টিকেট বিক্রির শুরুতে চট্টগ্রাম, সিলেট রুটের কাউন্টারে ভিড় ছিল অনেক কম। ঢাকা থেকে দেওয়ানগঞ্জ রুটের তিস্তা এক্সপ্রেসের টিকেটের জন্য ভোর রাত থেকে কাউন্টারে অপেক্ষা করেছেন অনেকে। তবে কিশোরগঞ্জের ট্রেনের টিকেট কাউন্টারও সাড়ে ৮টার আগেই ফাঁকা হয়ে যায়। অবশ্য উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন কাউন্টারে ভিড় ছিল তুলনামূলকভাবে বেশি। দিনাজপুরের একতা এক্সপ্রেসের এসি টিকেট কিনতে আসা হাসান জানান, বিক্রি শুরুর ৫ মিনিট পরেও এসি টিকেট পাননি তিনি। কোনো ট্রেনের এসি-কেবিন কিছুই নেই।

রেল সূত্র জানায়, বন্যার কারণে দিনাজপুরের ট্রেন পার্বতীপুর পর্যন্ত চলাচল করবে। ২৭ আগস্টের আগে লাইন ঠিক হয়ে গেলে ট্রেন দিনাজপুর পর্যন্ত যাবে। যদিও পার্বতীপুর পর্যন্ত টিকেট দিলেও দিনাজপুরের ভাড়া রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা।

এদিকে অন্য আন্তনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হলেও রংপুর এক্সপ্রেসের টিকেট এদিন বিক্রি হয়নি। ফলে টিকেট কিনতে এসে খালি হাতে ফিরে গেছেন অনেকে। এর ব্যাখ্যায় টিকিট বিক্রেতারা জানান, রোববার রংপুর এক্সপ্রেসের সাপ্তাহিক ছুটির দিন। এ কারণে টিকেট বিক্রি হয়নি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist