নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৪ জুন, ২০২০

গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা নেই

উচ্চ ঝুঁকিতে যাত্রীরা

৬০ থেকে ১০০ শতাংশ বেশি ভাড়া আদায়

করোনাভাইরাসের কারণে টানা ৬৭ দিন বন্ধ থাকার পর সরকারের নির্দেশনায় চলাচল শুরু করেছে রাজধানীর গণপরিবহন। কিন্তু শুধু আসনে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা ছাড়া অন্য কোনো স্বাস্থ্যবিধি মানছে না যাত্রী ও গণপরিবহন সংশ্লিষ্টরা। ফলে করোনা সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন যাত্রীরা। এ দিকে সরকার ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়ে দিলেও বাস মালিকরা বেশি আদায় করছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের।

গতকাল বুধবার সকালে রাজধানী ঘুরে দেখা গেছে, বাসে ওঠার সময় যাত্রীর তাপমাত্রা পরীক্ষা করার কথা থাকলেও বেশির ভাগ গাড়িই তা করেনি। তাছাড়া অধিকাংশ গণপরিবহনেই তাপমাত্রা পরীক্ষার থার্মাল স্ক্যানারও নেই। বাসে ওঠার সময় জীবাণুনাশক স্প্রেও করা হচ্ছে না। যদিও সরকার গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধিতে এই শর্তজুড়ে দিয়েছিল। কিন্তু এক আসন ফাঁকা রেখে বসা ছাড়া অন্য কোনো স্বাস্থ্যবিধি মানছে না অনেকেই। তবে কয়েকটি পরিবহনে দেখা গেছে, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে। এ দিকে, বাসের হেলপার প্রবেশপথে দাঁড়িয়ে থেকে গায়ে হাত দিয়ে দিয়ে যাত্রী তোলায় উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে করোনা সংক্রমণ বাড়ার।

নূর, বিহঙ্গ, রাইদা, আবাবিল, তুরাগ, বলাকা, প্রচেষ্টা, ৯নং মতিঝিল ও এয়ারপোর্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ পরিবহনে দেখা যায়, শুধু আসনে বসার সময় শারীরিক দূরত্ব মানা ছাড়া অন্য কোনো স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। তাড়াহুড়া করে যাত্রী তোলার সময় গায়ে হাত দিচ্ছেন হেলপার। তবে অধিকাংশ যাত্রী মাস্ক পরেই যাত্রা করছেন। উইনার পরিবহনের সহকারী মাখন মিয়া বলেন, বাসে যাত্রী তোলার সময় থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে পরীক্ষা করে তুললে করোনা ভাইরাস ঝুঁকি কমত। কিন্তু সেই ব্যবস্থা আমাদের নেই। এ ছাড়াও যাত্রী তোলার সময় সবাই তাড়াহুড়া করেন। পরীক্ষা করে তোলার সময় কই!

প্রবেশ পথে দাঁড়িয়ে গায়ে হাত দিয়ে যাত্রী তুললে করোনার ঝুঁকি আপনারও রয়েছে, সামনের আসনে বসে যাত্রী তুলেন না কেন, জানতে চাইলে বসুমতি পরিবহনের সহকারী রাজীব বলেন, আসলে এটা আমরা চিন্তা করিনি। এছাড়া এমনিতেই অর্ধেক যাত্রী নিয়ে আমরা চলাচল করছি। এর মধ্যে এক আসন আমি দখল করে বসলে কেমন হয়। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি না মানলে তো মৃত্যুঝুঁকি রয়েছে এ বিষয়ে তিনি বলেন, এত কিছু চিন্তা করে লাভ নেই।

আকিক পরিবহনের যাত্রী কৌশিক বলেন, বাসে পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। করোনার সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো, হেলপার দরজায় দাঁড়িয়ে থেকে যাত্রী তুলছেন। হেলপার সামনের আসনে বসে যাত্রী তুললে সেই ঝুঁকিটা অনেক কমে যাবে।

পল্লবী পরিবহনের যাত্রী নায়লা বলেন, গণপরিবহন চলাচলে সরকারকে তদারকি করা উচিত। এরা অনেক কিছুই মানছে না।

এদিকে কয়েকটি বাসের কিছু আসন ক্রস চিহ্ন দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলা হয়েছে। যাত্রীরা এ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন। কিন্তু ভাড়া নিয়ে দেখা দিয়েছে বিপত্তি। বাসে আগের ভাড়ার চেয়ে ৬০ শতাংশ বৃদ্ধির কথা থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যাত্রীরা জানিয়েছেন, ১০০ শতাংশ ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে। যেমন ১০ টাকার ভাড়া ১৬ টাকা হওয়ার কথা থাকলেও তারা গুনছেন ২০ টাকা। বাসে আগের চেয়ে দ্বিগুণ ভাড়া বেশি নেওয়ার এমন অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ।

শ্যামলীতে ৮ নম্বর বাসের যাত্রী নূর আহমেদ জানান, তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী। অফিসের জন্য গাবতলী মাজার রোডের বাসা থেকে নিয়মিত বাংলামোটরে যাতায়াত করতে হয় তাকে। তিনি বলেন, ‘মাজার রোড থেকে নিয়মিত বাংলামোটর যেতে ১৫ টাকা লাগত। সেই ভাড়া এখন দাঁড়িয়েছে ৩০ টাকায়। অথচ সরকার ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু বাসের চালক-হেলপাররা তা মানছে না। আদতে এদেশে কখনোই বাস ভাড়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি সরকার।’

যাত্রীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু চালক-হেলপারের দাবি, ‘ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে না। হয়তো দু-এক টাকা কমবেশি হতে পারে। তাছাড়া যাত্রী সংখ্যা কম।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close