নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০২ এপ্রিল, ২০২০

৩ হাজার বন্দিকে মুক্তির প্রস্তাব

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থেকে কারাগার সুরক্ষিত রাখতে দেশের ৩ হাজার কারাবন্দিকে জামিন দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। করোনায় সৃষ্ট দুর্যোগের কারণে কারাবন্দির সংখ্যা কমাতেই দেশের ৬৮ কারাগারে ছোটখাটো অপরাধ ও জামিনযোগ্য ধারায় বিচারাধীন ৩ হাজারের বেশি কারাবন্দিকে জামিন দিতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশের ৬৮টি কারাগারে বন্দি ধারণক্ষমতা ৪১ হাজার ৩১৪ জন। এর বিপরীতে বর্তমানে ৮৯ হাজারের বেশি বন্দি আটক রয়েছেন। সামান্য অপরাধে সাজা নিয়ে অনেকে মাসের পর মাস কারা প্রকোষ্ঠে দিন কাটাচ্ছেন। অধিক বন্দির কারণে সরকারের বিশেষ নির্দেশে এই বন্দিদের তালিকা তৈরি করে পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগ।

এরই মধ্যে কারা কর্তৃপক্ষ হাজতিদের এ তালিকা তৈরি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবও পাঠিয়েছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে সারা দেশের বিভিন্ন কারাগার থেকে এই হাজতিদের ছেড়ে দেওয়া হবে। কারাগার নিরাপদ রাখতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জামিনযোগ্য ছোটখাটো অপরাধে যারা কারাগারে আছেন, এ রকম তিন হাজারের সামান্য বেশি হাজতির নাম প্রস্তাব আকারে মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে ওই প্রস্তাব যাবে আইন মন্ত্রণালয়ে। সেখানে আপত্তি না থাকলে পাঠানো হবে আদালতে। তবে শেষ পর্যন্ত বিচারকই সিদ্ধান্ত নেবেন জামিন দেওয়া যায় কিনা। মুক্তির বিষয়টি বিচারকদের হাতে, আমাদের হাতে নয়।

কারা সূত্র জানায়, জামিনের উদ্যোগ নেওয়া এমন বন্দির সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার ১০০ এর মতো। তবে একইসঙ্গে বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত যার বেশির ভাগ অংশ তথা যেসব বন্দির কমপক্ষে ২০ বছর কারাবাস অতিক্রান্ত হয়েছে কিন্তু কারাভ্যন্তরে থাকাবস্থায় কোনো ধরনের অন্যায় আচরণ করেননি এমন বন্দি ও জেলকোড অনুযায়ী সরকারের কাছে আবেদন করে রাষ্ট্রের ক্ষমা পেতে পারেন কারা কর্তৃপক্ষ এমন বন্দিদের তালিকাও তৈরি করছে বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, করোনা পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন কারাগারে মোট ৪০ বন্দিকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। গত মঙ্গলবার করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা ও সুরক্ষা সেবা বিভাগের গৃহীত পদক্ষেপের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতের কারা অধিদফতরের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে বলা হয়, সর্বশেষ ২৮ মার্চের তথ্য অনুযায়ী দেশের কারাগারে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কোনো পজিটিভ কেস নেই। তবে অধিকতর সতর্কতার অংশ হিসেবে যদি কারো ঠান্ডা, কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি লক্ষণ দেখা গেলে তাদের পৃথক কক্ষে রাখা হচ্ছে। বিভিন্ন কারাগারে মোট ৪০ বন্দিকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। দেশের কারাগারগুলোতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে কঠোর নজরদারি ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, করোনার সম্ভাব্য সংক্রমণ এড়াতে কারাগারে বন্দিদের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ সীমিত করা হয়েছে জানিয়ে বলা হয়, বন্দিরা যেন আত্মীয়-পরিজন নিয়ে উদ্বিগ্ন না হন সেজন্য জরুরি টেলিফোনে কথা বলার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। বন্দি ও স্টাফদের বিদেশ ফেরত আত্মীয়-স্বজনকে কারা এলাকায় প্রবেশ থেকে বিরত রাখা হয়েছে। কারা এলাকায় প্রবেশকারী সকলকে স্বাস্থ্যবিধি ও পরিচ্ছন্নতার নিয়ম কানুন মেনে চলতে বাধ্য করা হয়েছে। হ্যান্ডওয়াশ ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ডিউটিতে প্রবেশের আগে কর্মরত সবার হাত ও বুট জুতা জীবাণুমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

কোভিড-১৯ (কারোনাভাইরাস) রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয়জনে। আর সারা বিশ্বে বসবাসরত অর্ধশত বাংলাদেশি নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন তিনজন। গতকাল এ নিয়ে মোট আক্রান্ত হলেন ৫৪। দেশে আক্রান্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত ২৬ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close