নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৮ জানুয়ারি, ২০২০

সগিরা মোর্শেদ হত্যা

‘ভাবতাম অতিরঞ্জিত লিখেছে পত্রিকা’

তিন দশক আগে ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সামনে ছিনতাইয়ের ঘটনায় সগিরা মোর্শেদ সালাম খুনকে তখন ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ বলা হলেও তা বিশ্বাস করতে পারেননি নিহতের স্বামী আবদুস সালাম চৌধুরী। ওই ঘটনায় নিজের ভাই ও ভাবিসহ চারজনকে আসামি করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার পর গতকাল শুক্রবার তিনি এ প্রতিক্রিয়া জানান।

আবদুস সালাম বলেন, ‘আমার স্ত্রী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আমার ভাই, ভাইয়ের বউ, এভাবে স্বজনরা জড়িত; তা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারিনি। বুঝব কীভাবে ভাইদের মধ্যে কখনো টাকা নিয়ে দ্বন্দ্ব হয়নি। আড়াই মাস আগে যখন ১৬৪ জবানবন্দি দিল, তখনই বুঝলাম তারা জড়িত। সত্যিই ভাবতে কষ্ট ও অবাক লাগে। এই সাংসারিক তুচ্ছ ঘটনায় একটি খুনের মতো ঘটনা ঘটতে পারে।’ ওই সময় বাংলার বাণী পত্রিকার এক প্রতিবেদনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, একবার লিখেছিল, ‘এটি ছিনতাই নয়, পারিবারিক কোন্দলে হত্যাকাণ্ড’। ভাবতাম পত্রিকায় অতিরঞ্জিত লিখেছে। কিন্তু এখন বুঝলাম সেদিন পত্রিকায় সঠিক লিখেছিল।

এ প্রসঙ্গে হত্যার ঘটনায় ভাড়াটে খুনি হিসেবে সম্প্রতি পিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার মারুফ রেজার মামা তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদুল হাসান তাদের বাড়িতে পুলিশ নিয়ে এসে যেসব কথা বলেছিলেন, তার মধ্যে সন্দেহজনক ইঙ্গিত ছিল বলে এখন মনে করছেন সত্তরোর্ধ্ব এই ব্যক্তি। তিনি বলেন, আমার স্ত্রী খুনের দুদিন পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাড়িতে এসে আমার ছোট মেয়েকে কোলে নিয়ে তখনকার রমনা থানার ওসি রফিককে বলেছিল, রফিক তুমি আসামিদের ধরতে পারবে না রফিক জি স্যার বলেছিল ‘তিনবার’। তিনবার জি স্যার বলার পেছনে যে অন্য কিছু লুকিয়ে ছিল, তা সেদিন বুঝতে না পারলেও আজ বুঝতে পারছি। যে সময় মাহমুদুল হাসান আমার বাড়িতে, তখন তার ভাগনে মারুফ রেজাকে বিদেশ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সগিরা মোর্শেদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত হিসেবে তার ভাসুর ডা. হাসান আলী চৌধুরী (৭০), হাসানের স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা শাহিন (৬৪), শাহিনের ভাই আনাছ মাহমুদ রেজওয়ান (৫৯) ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাগনে মারুফ রেজার (৫৯) বিরুদ্ধে গত বৃহস্পতিবার আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পিবিআই।

এর আগে ধানমন্ডিতে পিবিআই সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত সংস্থাটির প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার হলেন, এরা সবাই হত্যাকাণ্ডে নিজেদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বড় জায়ের ঈর্ষার কারণে খুন হয়েছিলেন সগিরা মোর্শেদ। তাকে খুন করতে ২৫ হাজার টাকায় আসামি মারুফ রেজাকে ভাড়া করা হয়।

ওই সময় প্রকাশিত দৈনিক জনতা, বাংলার বাণী ও নিউ ন্যাশন পত্রিকার খবর দেখিয়ে বনজ কুমার সাংবাদিকদের বলেন, আপনাদের বড় ভাইয়েরা সগিরা মোর্শেদ হত্যাকাণ্ডকে একটি ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ বলেছিল। আপনাদের বড় ভাইয়ের লেখা আজ সত্যি হলো। ৩১ বছর পর আমরা (পিবিআই) প্রমাণ করেছি যে, সগিরা মোর্শেদ পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার।

যেভাবে হত্যা করা হয় সগিরা মোর্শেদকে : আসামিদের জবানবন্দি অনুযায়ী, ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই বিকেলে স্কুল থেকে মেয়েকে আনতে রিকশায় করে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সামনে যাওয়ার সময় সগিরা মোর্শেদের পথ আটকান মোটরসাইকেল আরোহী মারুফ ও রেজওয়ান। হাতব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার পর তার হাতের বালা নিতে উদ্যত হলে রেজওয়ানকে চিনে ফেলার কথা বলেন সগিরা, তারপরই তার বুকে গুলি চালিয়ে দেন মারুফ। এখনকার আবাসন ব্যবসায়ী বেইলি রোডের বাসিন্দা মারুফ রেজা ওই সময়ই গ্রেফতার হলেও ক্ষমতার জোরে তার নাম বাদ দিয়ে মন্টু নামে একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছিল পুলিশ। সগিরা মোর্শেদ হত্যাকাণ্ডের পর এই ৩১ বছরে ২৫ জন তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে এবং গ্রেফতার হয়েছেন ২৫ জন। একজনের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিবেদনও দেওয়া হয়েছিল কিন্তু মামলা স্থগিত থাকায় কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close