নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২২ নভেম্বর, ২০১৯

সড়কে স্বাভাবিক হয়ে এসেছে যান চলাচল

সড়কের নতুন আইনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারার সংশোধনী চেয়ে চলমান অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট উঠিয়ে নিয়েছে মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো। গত বুধবার মধ্যরাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফঙ্গ টানা চার ঘণ্টা বৈঠকের পর এ ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেন শ্রমিকরা। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল থেকে সারা দেশে বাস ও ট্রাক চলাচল পর্যায়ক্রমে স্বাভাবিক হয়ে আসে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে আইনটি সাত মাসের জন্য স্থগিত বা পর্যালোচনার জন্য রাখা হয়েছে। এতে সরকার, মালিক ও শ্রমিকপক্ষ সমঝোতায় আসার পর রাস্তায় পরিবহন চালানোর সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এর পরও সারা দিন দেশের কয়েকটি জেলায় বাস চলাচল বিকাল পর্যন্ত বন্ধ থাকলেও সন্ধ্যানাগাদ শতভাগ যানবাহন রাস্তায় নামে বলে খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে ডিএমপির ট্রাফিক সচেতনতামূলক পক্ষ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, পরিবহন চালকদের ৯ দফা দাবি সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ দাবিগুলোর মধ্যে কোথাও অসংগতি থাকলে তা যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে। গতকাল রাজধানীর শান্তিনগরে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ট্রাফিক সচেতনতামূলক পক্ষ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘পরিবহন চালক ভাইদের লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়ে একটা জটিলতা ছিল। সেটি নিয়ে গত বুধবার রাতে পরিবহন মালিকদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তাদের দেওয়া দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। লাইসেন্স-সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের জন্য চালকদের একটা সময় দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে তারা তাদের লাইসেন্স ঠিক করে নেবেন।’

আইন না মানা আমাদের সংস্কৃতি হয়ে গেছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কেউ আইন মানতে চান না। যদি সবাই আইন মেনে চলেন, তবে কোনো সমস্যা থাকে না। শুধু ট্রাফিক আইন নয়, সব পর্যায়ে সবাই আইন মেনে চললে অপরাধ অনেক কমবে। সব পর্যায়ে আইন মেনে চলার সংস্কৃতি চালু হোকÑ এটাই আমার চাওয়া।

এদিকে, নতুন সড়ক আইন সংশোধনের দাবিতে পরিবহন শ্রমিকদের অঘোষিত ধর্মঘটের টানা তিন দিন পর গতকাল অধিকাংশ জেলায় বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। ঢাকা, ময়মনসিংহ, মাদারীপুর, হিলিসহ কয়েক জেলায় গতকাল সকাল থেকেই বাস চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে খুলনা, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ, কুড়িগ্রাম, টাঙ্গাইলসহ অনেক জেলায় আজ চতুর্থ দিনের মতো বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও বিকালনাগাদ তা স্বাভাবিক হয়ে আসে। এদিকে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি প্রত্যাহারের পর গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা থেকে পণ্য পরিবহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিনিধিরা জানান, গত বুধবার ঢাকা থেকে কম পরিসরে বাস ছেড়ে গেলেও গতকাল বৃহস্পতিবার চলাচল ছিল স্বাভাবিক। রাজধানীর সবকটি বাসস্ট্যান্ড থেকে দূরপাল্লার সব ধরনের বাস ছেড়ে গেছে। সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস-মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, ‘সায়েদাবাদ থেকে সিলেটসহ পূর্বাঞ্চলের সব পরিবহন ছেড়ে গেছে। কোথাও কোনো সমস্যা নেই। আমি সকাল থেকে সায়েদাবাদ টার্মিনালে রয়েছি। শ্রমিক মালিক সবাই পরিবহন নিয়ে সড়কে নেমেছেন।’

চট্টগ্রাম ব্যুরো : গতকাল সকাল থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য পরিবহন কার্যক্রম আগের মতো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। নগরীর টার্মিনালসমূহ থেকে বিভিন্ন রুটে দূরপাল্লার বাসও ছেড়েছে। তবে ধর্মঘটের কারণে ঝিমিয়ে থাকায় বন্দর নগরী চট্টগ্রামের রাস্তার মোড়ে মোড়ে গাড়ির জন্য যাত্রীদের ভিড় দেখা গেলেও যানবাহনের সংখ্যা কম পরিলক্ষিত হয়েছে।

ময়মনসিংহ : গতকাল সকাল থেকেই ময়মনসিংহের মাসকান্দা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও পাটগুদাম ব্রিজ সংলগ্ন আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকাসহ সারা দেশের উদ্দেশে দূরপাল্লার বাস ছেড়ে গেছে। জেলা ট্রাফিক পরিদর্শক প্রশাসন মাহবুবুর রহমান জানান, যান চলাচল স্বাভাবিক হওয়ায় স্বস্তি ফিরে এসেছে সাধারণ যাত্রীদের।

মাদারীপুর : মাদারীপুরে বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে মাদারীপুর থেকে দূরপাল্লার বাস ছেড়ে গেছে। অভ্যন্তরীণ রুটেও বাস চলাচল ছিল স্বাভাবিক।

হিলি : দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসে পণ্য পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘট প্রত্যাহারের ফলে ট্রাক চলাচল শুরু হওয়ায় দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়েছে। টানা পাঁচ দিন পর হিলি-বগুড়া পথে বাস চলাচল শুরু হয়েছে। দিনাজপুর মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন হাকিমপুর স্ট্যান্ড কমিটির সদস্য ও চেইন মাস্টার রুঞ্জু হোসেন এসব কথা জানান।

শরীয়তপুর : শরীয়তপুরের অভ্যন্তরীণ রুটগুলোতে ঢিলেঢালাভাবে বাস চললেও দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। এর ফলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। তবে আজ থেকে বাস চলাচল স্বাভাবিক হবে বলে জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা।

খুলনা : নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে খুলনায় চতুর্থ দিনের মতো ধর্মঘট পালন করছেন বাসচালক ও শ্রমিকরা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে খুলনা থেকে কোনো দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়নি। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ বেশির ভাগ রুটে বাস চলাচল বন্ধ ছিল। এতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন যাত্রীরা। খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সহকারী সম্পাদক মো. জিয়াউর রহমান মিঠু বলেন, ‘খুলনায় এখনো বাস চলাচল শুরু হয়নি। বুধবার রাতে মালিক ও শ্রমিক নেতারা ঢাকায় গেছেন। মন্ত্রণালয়ে ট্রাক মালিক শ্রমিকদের সঙ্গে সভা হয়েছে।

টাঙ্গাইল : গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে টাঙ্গাইল থেকে কোনো দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়নি। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। টাঙ্গাইল জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার ইকবাল হোসেন বলেন, এখনো বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঢাকায় শ্রমিক ফেডারশনের বৈঠক রয়েছে। বাস চলাচলের বিষয়ে ওই বৈঠক থেকে সিদ্ধান্ত হবে।

কুড়িগ্রাম : গতকালও কুড়িগ্রাম থেকে সব রুটে বাস, মিনিবাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন পরিবহন শ্রমিকরা। যাত্রীরা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় করে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করলে দুপুর ১২টার দিকে বাসস্ট্যান্ডের কাছে পার্কিং করা অটোরিকশা চালকদের ওপর হামলা চালায় বাস শ্রমিকরা। জামালপুর : বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জামালপুর-ময়মনসিংহ সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হলেও জামালপুর-টাঙ্গাইল সড়কের ধনবাড়ী এলাকায় শ্রমিকরা এখনো তাদের অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া চুয়াডাঙ্গা, নওগাঁ, ঝিনাইদহে চতুর্থ দিনের মতো বাসচালক ও শ্রমিকদের ধর্মঘট অব্যাহত ছিল; যা গতকাল সন্ধ্যানাগাদ স্বাভাবিক হয়েছে বলে শ্রমিক ফেডারেশন থেকে জানানো হয়েছে।

লালমনিরহাট : ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও লালমনিরহাট থেকে সকল প্রকার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে লালমনিরহাট-রংপুর ও লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কে কোনো যান চলাচল করেনি। তবে বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চলাচল শুরু হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close