নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৪ অক্টোবর, ২০১৯

বাংলাদেশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়ও রোল মডেল : প্রধানমন্ত্রী

উপকূলীয় এলাকায় বৃক্ষরোপণের নির্দেশ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিশ্বে এখন আমরা শুধু উন্নয়নের রোল মডেলই নয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায়ও রোল মডেল হিসেবে একটা সম্মান পেয়েছি।’ বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়সহ সব ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ প্রস্তুত রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছে বাংলাদেশ। গতকাল রোববার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস ২০১৯-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন। এ সময় দেশের উপকূলীয় এলাকায় সবুজবেষ্টনী তৈরিতে বৃক্ষরোপণের নির্দেশ দেন তিনি।

সকালে অনুষ্ঠানস্থল থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে দেশের ১৪ জেলায় ১০০টি আশ্রয়কেন্দ্র এবং দেশের ৬৪ জেলায় ১১ হাজার ৬০৪টি দুর্যোগ সহনীয় বাড়ির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে বক্তব্য দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, অগ্নিকান্ডÑ এসবে ক্ষয়ক্ষতি যাতে হ্রাস পায়; তার জন্য যা ব্যবস্থা নেওয়ার ইতোমধ্যে আমরা তা নিয়েছি। যা আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে এবং সবাই মনে করে এটাও বাংলাদেশের কাছ থেকে শেখার রয়েছে। অনেকে আমাদের কাছ থেকে এটা এখন জানতে চায়।’ এ বছর জুলাই মাসে ঢাকায় গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপ্টেশনের সভা হয়েছে। সেখানে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন দুর্যোগ প্রতিরোধে বাংলাদেশের সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘বিশ্ব অভিযোজন কেন্দ্র-ঢাকা অফিস’ স্থাপনের ঘোষণা দেন।

বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী যেকোনো দুর্যোগের জন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘যেকোনো মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ আসুক আর প্রাকৃতিব দুর্যোগই আসুক সব ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশ সব সময় প্রস্তুত থাকবেÑ সেটাই আমি চাই। আমাদের ভলান্টিয়াররা নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করবে, সেটারই আমি আশা পোষণ করি।’

প্রধানমন্ত্রী যেকোনো ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার জন্য তড়িৎ পদক্ষেপ নিতেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা দেশকে গড়ে তুলতে চাই, উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে। জাতির পিতা স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তার একটা স্বপ্ন ছিল, বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা এবং দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ। আমরা সেই সোনার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর আমরা দুর্যোগবিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলি-১৯৯৭ প্রণয়ন করেছিলাম। পরবর্তীতে আমরাই আবার ২০১০ সালে এটি হালনাগাদ করি। জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল গঠন করি।’

২০১২ সালে তার সরকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন প্রণয়ন করেÑ এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই আইনের আওতায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর গঠন করা হয়েছে, যা দুর্যোগ মোকাবিলা, ঝুঁকি হ্রাস ও ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভ্যন্তরীণ বাস্তুহারা মানুষের দুর্দশার বিষয়গুলো আমলে নিয়ে ২০১৫ সালে আমরা একটি কৌশলপত্র প্রণয়ন করি এবং জাতীয় রিজিলিয়েন্স পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি, যা সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্ক ও এসডিজির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ২০১৫ সালে ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার (এনইওসি) প্রতিষ্ঠা করেছে। বড় ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য পূর্বাচলে একটি স্টেজিং এরিয়া নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছে, যেন জরুরি অবস্থায় এটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোরও প্রয়োজন মিটাতে পারে।

মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে সিভিল মিলিটারি সমন্বয়ে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় রিজিওনাল কনসালটেটিভ গ্রুপের (আরসিজি) মাধ্যমে আমরা আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারিত করেছি, বলেন তিনি।

ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর নাব্য রক্ষা, ভাঙনপ্রবণ এলাকাগুলোয় নদী শাসনের ব্যবস্থা, নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখে ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়িঘর তৈরি করে দেওয়ার পদক্ষেপ, দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলোয় মানুষকে দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ করে দেওয়ার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। স্যাটেলাইট-১-এর মাধ্যমে চর, পার্বত্য অঞ্চল, দ্বীপসহ দুর্গম অঞ্চলে যাতে আবহাওয়া বার্তা পৌঁছানো যায় সরকার তার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

পরে প্রধানমন্ত্রী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক মেলা উদ্বোধন করেন।

দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এ বি তাজুল ইসলাম এবং সিনিয়র সচিব মো. শাহ কামাল অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

‘দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় দুজন ‘দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ’ প্রাপ্ত ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার শিউলী রানী শিল এবং কুড়িগ্রামের মো. শহীদুল ইসলাম অনুষ্ঠানে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করেন।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সেরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে এ বছর ৮২ জনকে ‘সিপিপি’ পুরস্কার দেওয়া হয়। এরমধ্যে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে তিনজনের হাতে সম্মাননা তুলে দেন। তারা হচ্ছেন কক্সবাজারের চকরিয়ার বুলবুল জান্নাত, ভোলার লালমোহনের এ কে এম কামরুল ইসলাম এবং খুলনার মোংলার সুস্মিতা মন্ডল। অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন অগ্রগতি তুলে ধরে ভিডিও প্রদর্শন করা হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close