নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২২ আগস্ট, ২০১৯

একুশে আগস্টের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমাকে রক্ষা করেছেন

* আগস্ট এলেই অশনিসংকেত আসে * আমি মরলে খালেদা জিয়া শোক দেবে, সেটাও তৈরি ছিল * বিএনপি-জামায়াতের মদদ ছাড়া গ্রেনেড হামলা হতে পারে না

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগস্ট মাস এলেই যেন অশনিসংকেত বয়ে নিয়ে আসে। বারবার হামলা হয়েছে। যেদিন থেকে রাজনীতিতে পা দিয়েছি; সেদিন থেকে বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমাকে রক্ষা করেছেন। ২০০৪ সালের একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত ও নিহতদের স্মরণে রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ মিলনায়তনে গতকাল বুধবার বিকালে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ ধরনের একটা পরিস্থিতি কীভাবে ঘটতে পারে? তখন যারা সরকার ছিল অর্থাৎ জামায়াত আর বিএনপি জোটের মদদ ছাড়া এ হামলা হতে পারে না। এ ঘটনার পর সবার ধারণা ছিল আমি মারা গেছি। এ ঘটনার পর যখন আমি নেমে গাড়িতে উঠতে যাব, তখন আবার আমাকে লক্ষ্য করে গুলি করা হলো। তখন কোনো রকমে আমি প্রাণে বেঁচে যাই।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘যেখানে এত বড় একটা হামলা হলো, এত মানুষ মারা গেল; সেখানে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এসব ঘটনার যেন কোনো আলামতও না থাকে, সেই চেষ্টায় করেছে তারা। আমি মরলে (তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি প্রধান) খালেদা জিয়া শোক দেবে। সেটাও নাকি তার তৈরি করা ছিল। বিএনপি-জামায়াত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এ ধরনের ঘটনা ঘটা কোনো দিনই সম্ভব না। এটা আজকে প্রমাণিত সত্য।’

খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই ঘটনা কোটালীপাড়ায় ৭৬ কেজি বোমা পুঁতে রাখা, প্রতিটি আক্রমণের আগে খালেদা বলত, আওয়ামী লীগ ১০০ বছরেও ক্ষমতায় যেতে পারবে না। এ ঘটনার আগে বলত, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, জীবনে বিরোধী দলের নেতাও হতে পারবে না। ওরা তো আমাকে মেরেই ফেলবে। আল্লাহর মাইর দুনিয়ার বাইরে বলে একটা কথা আছে। যে অভিশাপ সে আমার জন্য দিয়েছিল, সেটা এখন তার কপালে জুটে গেছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘তদন্ত হয়েছে এবং সে তদন্তের মধ্য যারা আসামি তাদের শাস্তি হয়েছে। তবে এখানে এটা ঠিক খালেদা জিয়াকে আসামি করা হয়নি। কিন্তু তার যে এখানে সহযোগিতা রয়েছে, সে তো প্রধানমন্ত্রী ছিল। তার যে সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব ছিল, এটা তো অস্বীকার করা যায় না। খালেদা জিয়াই কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিল আর বাবর (লুৎফুজ্জামান বাবর) ছিল প্রতিমন্ত্রী। সেখানে সে দায়িত্ব তো কেউ অস্বীকার করতে পারে না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কেন সেদিন র‌্যালি করতে গিয়েছিলাম। আপনাদের মনে আছে যে, সিলেটে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর হজরত শাহজালালের দরগায় গ্রেনেড হামলা হয়। আর সেসময় গোপালগঞ্জে আমাদের ছাত্রলীগের এক নেতাকে গুলি করে হত্যা করা হয় এবং এ রকম অগণিত নেতাকর্মীর ওপর প্রতিনিয়ত হামলা হয় আর তাদের হত্যা করা হয়। এসব সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আমরা শান্তির মিছিল এবং র‌্যালি করতে চেয়েছিলাম।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা যে জায়গায় মিছিলটা করতে চেয়েছিলাম, সে জায়গায় আমাদের অনুমতি দেয়নি। পরে মাইকিং করে আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে ব্যবস্থা নেই। এরপর ২০ আগস্ট রাত ১২টার দিকে একটা অনুমতির চিঠি পাঠানো হয় আওয়ামী লীগ অফিসে। সেই চিঠিটা তখন কে খুলবে আর কে দেখবে আর কে ব্যবস্থা নেবে। এটা ছিল তাদের একটা চাল। পরে আমরা যেখানে ব্যবস্থা নিয়েছিলাম, সেখানেই সমাবেশ করেছি। আমাদের ভলান্টিয়ার এবং নেতাকর্মীদের সেদিন কাউকে পাশের ছাদে উঠতে দেয়নি। সেদিন কোনো পুলিশও আমাদের নেতাকর্মীদের সমাবেশে যেতে বাধা দেয়নি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখন আমি বক্তব্য দিয়ে শেষ করলাম, সেসময় ফটোগ্রাফার গোর্কি এসে বলল, আপা আমি ছবি নিতে পারিনি। যেহেতু গোর্কির বাবাকে আমি চিনতাম, সেহেতু ছবি তুলতে রাজি হলাম। তখন ছবি তুলতে গিয়েই কয়েক সেকেন্ড দাঁড়ানো। এরই মধ্যে গ্রেনেড হামলা শুরু হয়ে গেল।’

তখনকার পরিস্থিতি বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘সঙ্গে সঙ্গে আমার সঙ্গে যারা ছিল তারা আমাকে টেনে বসিয়ে দিল। তারপর একটার পর একটা গ্রেনেড বিস্ফোরিত হচ্ছে। তখন গ্রেনেডের স্পিøøন্টার এসে হানিফ ভাইয়ের গাঁয়ে লাগছে আর তার রক্ত আমার ওপর গড়িয়ে পড়ছে। তারপর আবার একটার পর একটা গ্রেনেড মারতেই থাকে।’

আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদসহ শীর্ষনেতারা উপস্থিত ছিলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close