নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৯ মার্চ, ২০১৯

ডাকসু নির্বাচন

পুনর্নির্বাচনের দাবিতে ভিসি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান

* ক্লাস-পরীক্ষা স্বাভাবিক * ভিপি নুর ও বাম জোটের নেতা লিটন নন্দি অনুপস্থিত

ডাকসু নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বয়কটসহ পাঁচ দফা দাবিতে গতকাল উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ভোট বর্জন করা পাঁচটি প্যানেল। পূর্বঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ভিসির কার্যালয় ঘেরাও করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা ছিল স্বাভাবিক। কর্মসূচিতে অবস্থান নেন ভিপি নুরের প্যানেল কোটা সংস্কার আন্দোলন, বাম জোট এবং স্বতন্ত্র প্যানেলের প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা। তবে আন্দোলনে দেখা যায়নি সদ্য নির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নুর ও বাম জোটের নেতা লিটন নন্দিকে।

গত রোববার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ওই পাঁচ প্যানেল, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বাতিল, পুনঃতফসিল ঘোষণাসহ পাঁচ দফা দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিলেও গতকাল সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা ছিল স্বাভাবিক। বিভিন্ন বিভাগের ক্লাসরুম ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। ক্যাম্পাসেও শিক্ষার্থীদের আনাগোনা স্বাভাবিক ছিল। তবে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি পালন করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

প্যানেলগুলোর পাঁচ দাবি হলোÑ অবিলম্বে নির্বাচন বাতিল করে পুনঃতফসিল ঘোষণা করতে হবে; উপাচার্যের পদত্যাগ; নির্বাচনে কারচুপির সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের পদত্যাগ; শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা সব মামলা প্রত্যাহার এবং নির্বাচন কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের ওপর যেসব হামলা হয়েছে, সেই হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি।

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী গতকাল সোমবার দুপুর ১২টায় নির্বাচন বর্জনকারী প্যানেলগুলোর প্রার্থী ও সমর্থকরা সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হন। সেখান থেকে বের করা একটি বিক্ষোভ মিছিল ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ভিসির কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সেখানে অবস্থান নেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘দেশের মানুষ দেখেছেন গত ১১ মার্চ ডাকসু নির্বাচনের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ে কী হয়েছে। এ নির্বাচন বিশ্ববিদ্যালয়ের কলঙ্কিত নির্বাচন।’ এই ডাকসু আমাদের ডাকসু না উল্লেখ করে তারা বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আলটিমেটাম গত শনিবার শেষ হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সাড়া না পাওয়ায় ফের পাঁচ দফা দাবিতে ক্লাস বর্জন ও উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি চলছে।

অবস্থান কর্মসূচিতে ডাকসু নির্বাচনে জিএস পদপ্রার্থী ছাত্র ফেডারেশনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজীর বলেন, ‘১১ মার্চ প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় তৈরি করল। তাদের এ দায় নিতে হবে এবং তাদের সরে যেতে হবে। এ জন্য সব শিক্ষার্থীকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। প্রহসনের নির্বাচনের বিরুদ্ধে আমরা এখানে অবস্থান নিয়েছি, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ অবস্থান চলতে থাকবে বলেও জানান তিনি।’

অবস্থান কর্মসূচিতে স্বতন্ত্র জোট থেকে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা অরণী সেমন্তী খান বলেন, ‘স্যার বলেছিলেন, আমাদের লিখিত অভিযোগ দিতে, আমরা দিয়েছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। আমরা তিন দিনের সময় দিয়েছিলাম, কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই আমরা এখন ভিসি স্যারের কার্যালয়ের সামনে এসে অবস্থান নিয়েছি। স্যার আমাদের কথা শুনতে বাধ্য।’

ডাকসু নির্বাচনে জিএস প্রার্থী কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা রাশেদ খান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আশ্বাস দিলেও এটি কারচুপিপূর্ণ নির্বাচন দিয়েছে। সারা দেশের মানুষ জানে নির্বাচনে কী হয়েছে। এ সময় তিনি নির্বাচনের বেশ কিছু অনিয়ম তুলে ধরেন।’

অবস্থান কর্মসূচিতে স্বাধিকার পরিষদের জিএস প্রার্থী আসিফুর রহমান বলেন, ‘সারা বাংলাদেশের মানুষ জানে ১১ মার্চের নির্বাচনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কী হয়েছে। নিয়ন্ত্রণমূলক একটি নির্বাচন করেছে প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীরা তা জানে। আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রমাণ চায়। এর থেকে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’

অন্যদিকে অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত না থাকার কারণ জানতে চাইলে বাম জোটের নেতা লিটন নন্দি মুঠোফোনে প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, ‘আমি ব্যক্তিগত কাজে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারিনি। তবে আমার জোটের অন্য সব নেতা সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং আমাদের দাবির বিষয়ে জানিয়েছেন। আমরা শিক্ষার্থীদের সব যৌক্তিক দাবি ভিসি স্যারকে জানিয়েছি। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেননি। এতে প্রমাণ হয়, আমাদের যৌক্তিক দাবি মানতে কর্তৃপক্ষ রাজি না। তাই আমাদের আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাব।’

আন্দোলনের ঘোষণা দিলেও কেন অবস্থানে অংশ নেননি ডাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নুর? যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে এ বিষয়ে নুরের প্যানেলের জিএস প্রার্থী রাসেদ খান প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, ‘ভিপি নুরুল হক নুর অসুস্থ। তাই অবস্থান কর্মসূচিতে আসতে পানেননি। তবে কোটা আন্দোলনের সব নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close