নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২০ জুলাই, ২০১৮

যে কারণে কমেছে পাস ও জিপিএ-৫

এ বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলে পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমেছে। এ নিয়ে বিভিন্ন পর্যালোচনা করছেন সংশ্লিষ্টরা। শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, কড়াকড়িভাবে খাতা দেখা হয়েছে। কারণ শিক্ষার গুণগত মানের উন্নয়নের দিকে নজর দেওয়া হয়েছে। এ জন্য রেজাল্ট খারাপ হয়েছে। এ ছাড়া প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানোর কারণেও অনৈতিক সুবিধা নিতে পারেনি অনেকে। আবার কেউ কেউ বলেছেন, আগের ফলের চেয়ে এবারেই স্বাভাবিক রেজাল্ট করেছে শিক্ষার্থীরা। ইংরেজি ও তথ্যপ্রযুক্তিতে খারাপ করার কারণেও ফলে এমন দশা হয়েছে বলেও মনে করেন অনেকে। তবে ফল যাই হোক না কেন, প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের মনোবল না হারানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গতকাল বৃহস্পতিবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফলের সার-সংক্ষেপ তুলে দেন। শিক্ষামন্ত্রী ওই অনুষ্ঠানে পাসের হার কমে যাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, ‘যে সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, তার গুণগত মানের উন্নয়ন করতে চাচ্ছি। এ জন্য আমার কড়াকড়িভাবে খাতা দেখছি।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় নেওয়া পদ্ধতির প্রশংসা করে পুরো পরীক্ষার সময় কমিয়ে আনার পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, ‘দোসরা এপ্রিল পরীক্ষা শুরু, আর ২৪ মে পর্যন্ত পরীক্ষা। এই অত দীর্ঘ সময়, বোধ হয় রেজাল্ট দিতেও আপনারা এত সময় নিলেন না পরীক্ষা নিতে যত সময় নিয়েছেন। সেখানে পরীক্ষার সময়টা কীভাবে কমিয়ে আনা যায়। এটাকে আরেকটু কমিয়ে আনার ব্যবস্থা যদি করতে পারেন, তাহলে কিন্তু আপনি দেখবেন, ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করবে, পরীক্ষাটাও তাড়াতাড়ি হবে, আর এখানে ওই যে নানা ধরনের কথা প্রচার টচার, অপপ্রচার, তার হাত থেকেও মুক্তি পাওয়া যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’

প্রধানমন্ত্রী উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানান এবং যারা অকৃতকার্য হয়েছে তাদের মনোবল না হারিয়ে পরবর্তী পরীক্ষার জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দেন। বেশ কয়েক বছর ধরে পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে ফাঁস হলেও এবার প্রশ্ন ফাঁসের কোনো ধরনের অভিযোগ ছাড়াই উচ্চ মাধ্যমিকের সব পরীক্ষা শেষ হয়। এ ছাড়া শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলেছেন, ইংরেজি ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে পরীক্ষার্থীরা খারাপ করেছেন। তাই সারা দেশের মতো রাজশাহীতেও ফলে প্রভাব পড়েছে।

এদিকে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধূরী এ ব্যাপারে বলেছেন, এটা খারাপ কিছু নয়। বরং পাসের হার স্থিতিশীল অবস্থায় আসতে চলেছে। আগে ৭০ ভাগ, ৮০ ভাগ এমনকি ৯০ ভাগ পাস করতেও আমরা দেখেছি। পৃথিবী কোনো দেশে এমন আছে? সেই অবস্থা থেকে এখন একটু স্থিতিশীল জায়গায় আসতে শুরু করেছে। এতে শঙ্কার কিছু নেই বরং এটা ভালো জায়গায় যাচ্ছে।

এমনটা হওয়ার কারণ হলো, শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার বিষয়টি নিরীক্ষার জন্য একটি কমিটি করেছিল। পরীক্ষা পদ্ধতি, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নÑ এসব বিষয়ে নিরীক্ষা কমিটি কিছু সুপারিশ করেছিল। এ ছাড়া সরকার শিক্ষাবিদদের নিয়ে বসেছিল, তারাও কিছু সুপারিশ করেছেন। এসব সুপারিশের ভিত্তিতে মন্ত্রণালয় কিছু কাজ শুরু করেছে, যেমন- শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এভাবে এক ধরনের অভিন্ন পদ্ধতির মতো করে খাতা মূল্যায়নের ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে তাদের, সেভাবেই তারা পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করেছে, যার শুরুটা হলো এবার। আর এ কারণেই ফল স্থিতিশীল অবস্থায় যাচ্ছে। তবে আরো ভালো জায়গায় যেতে হবে।

আর এ ফলের পরে কিছু চ্যালেঞ্জের বিষয় থাকে। এই যে ৩৪ শতাংশ শিক্ষার্থী ফেল করল, তাদের আমরা কীভাবে পাসের অবস্থায় ফিরিয়ে আনবÑ এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আরেকটা বিষয় হলো, এই যে এতো ছেলেমেয়ে জিপিএ ৫ পেয়েছে, ফলে তাদের নিয়ে একটা প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে পরিবারে। এখন তারা সবাই পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে কি না, যারা পাস করেছে তাদের সবাইকে আমরা উচ্চশিক্ষা দিতে পারব কি না, এই চ্যালেঞ্জও আমাদের সামনে আছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা একটি শিক্ষিত জাতি গড়ে তুলতে চাই, যেন আগামী দিনেও আমাদের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকে। আমাদের ছেলে-মেয়েরা অনেক অনেক মেধাবী। কাজেই সেই মেধাকে আমাদের দেশ গড়ার কাজে লাগাতে হবে।’

তিনি প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রতিরোধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এবারের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, বোর্ড এবং মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রতি ধন্যবাদ জানান।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, এই সমস্যাটা শুধু আমাদের দেশে নয়, ডিজিটালাইজেশনের কারণে অনেক উন্নত দেশেও এ ধরনের সমস্যা দেখা যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, নকল করতে হবে কেন, একটু মনযোগী হলেই তো পরীক্ষায় পাস করা যায়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist