শাহ্জাহান সাজু

  ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

ঘাটতি : ব্যাংকগুলো চায় ২০ হাজার কোটি টাকা

মূলধন ঘাটতি ১৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা, আর সেই ঘাটতি পূরণে ২০ হাজার কোটি টাকা চায় রাষ্ট্রায়ত্ত সাত ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলো সোনালী, জনতা, রূপালী, বেসিক, কৃষি, রাকাব এবং গ্রামীণ ব্যাংক। কিন্তু চলতি অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ রয়েছে মাত্র ২ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোর এই বিপুল অর্থ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয় গত বছরে মূলধন পুনর্গঠন খাত থেকে অর্থ ছাড়ের সময় দেওয়া শর্তগুলো কতটুকু প্রতিপালন করা হয়েছে; তার তথ্য চেয়েছে। একইসঙ্গে মূলধন ঘাটতির পরিস্থিতি উন্নতি না হওয়ার কারণ, খেলাপি ঋণের অবস্থা কেন এত খারাপÑতাও জানাতে বলেছে ব্যাংকগুলোকে। তবে প্রাথমিকভাবে সাত ব্যাংককেই ২ হাজার কোটি টাকা থেকে কিছু কিছু দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের। এছাড়াও ব্যাংকগুলো অন্য কোনো জায়গা থেকে মূলধন পুনর্গঠনের জন্য ঋণ নিলে তার গ্যারান্টি দেওয়া যায় কিনাÑতারও চিন্তা-ভাবনা চলছে।

গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. ইউনুসুর রহমানের সভাপতিত্বে সাত ব্যাংকে মূলধন ঘাটতি নিয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, বড় অঙ্কের অর্থ দাবি করেছে ব্যাংকগুলো। তবে এদের পারফরম্যান্সের তুলনায় এই দাবি অনেক বেশি। তাই আমরা ব্যাংকগুলোর কাছে বিভিন্ন তথ্য চেয়েছি। ব্যাংকগুলোর অবস্থা কেন উন্নতি হয়নিÑতা জানতে চেয়েছি। এসব তথ্য আসার পর সব ব্যাংককে কিছু কিছু অর্থ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৈঠকে সাত ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা নিজ নিজ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির তথ্য তুলে ধরেন। এতে দেখা গেছে, ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর চাহিদা দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চেয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। কৃষি ব্যাংক বলেছে, কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতি গতিশীল করার লক্ষ্যে কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্প ও এসএমই ঋণের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বর্ধিত ঋণের চাহিদা পূরণের জন্য মূলধন ঘাটতি পূরণ প্রয়োজন। এজন্য ব্যাংকটি ৭ হাজার ৩৪৮ কোটি ২ লাখ টাকা চেয়েছে। তারপরই আছে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের সবচেয়ে বড় ব্যাংক সোনালী ব্যাংক। সোনালী ব্যাংক বলেছে, তাদের অবস্থা খুবই নাজুক। মূলধন ঘাটতির জন্য এলসি খুলতে সমস্যা হচ্ছে। কারণ সরকারের চাহিদামতো তাদের সরকারি বড় বড় প্রতিষ্ঠানের জন্য এলসি খুলতে হয়। মূলধন ঘাটতির কারণে তাতে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তাই ব্যাংকটির চাহিদা ৬ হাজার কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের আলোচিত বেসিক ব্যাংক বলেছে, মূলধন ঘাটতির কারণে তাদের ব্যবসা করতে সমস্যা হচ্ছে। কম মূলধন থাকার কারণে সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার লিমিট কম থাকায় অন্যান্য ব্যাংকের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় তারা পিছিয়ে পড়ছে। এজন্য মূলধন ঘাটতি পূরণে তাদের ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা দরকার। আর গত জুনেও যে জনতা ব্যাংকের উদ্বৃত্ত ছিল ১৭ কোটি টাকা, সেটিও এখন ঘাটতিতে পড়েছে। এই ব্যাংকটিও বেসিক ব্যাংকের মতোই ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা চেয়েছে। এছাড়া রূপালী ব্যাংক ১ হাজার ২৫০ কোটি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) ৮০০ কোটি এবং গ্রামীণ ব্যাংক পরিশোধিত মূলধনের সরকারি অংশ বাবদ ২১ লাখ টাকা চেয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।

ব্যাংকগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় গত বছর মূলধন ঘাটতি পূরণে অর্থ ছাড়ের সময় যে চারটি শর্ত দিয়েছিলÑসেগুলোর কতটুকু পরিপালন করা হয়েছে তা জানতে চেয়েছে। গত বছরজুড়ে দেওয়া শর্তগুলো হলো, অর্থ ব্যয়ে প্রচলিত সব আর্থিক বিধি-বিধান এবং অনুশাসন যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। মূলধন পুনর্ভরণ ছাড়া এ অর্থ অন্য কোনো খাতে ব্যবহার করা যাবে না। ব্যাংকটির অটোমেশন এবং বিজনেস প্ল্যান বাস্তবায়নের অগ্রগতি বিশেষ করে পুঞ্জীভূত খেলাপি ঋণের বৃদ্ধি/হ্রাস ত্রৈমাসিকভিত্তিতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে জানাতে হবে। সর্বশেষ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পর্যালোচনা সভা আয়োজন এবং সভার কার্যবিবরণী অর্থ বিভাগে পাঠাতে হবে। এছাড়া মূলধন পুনর্ভরণ বাবদ অর্থ পাওয়ার পর ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধনের চেয়ে পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ বেশি হলে মেমোরেনডাম অব অ্যাসোসিয়েশন সংশোধন করতে হবে বলে শর্তজুড়ে দেওয়া হয়েছিল। এ শর্তগুলো পরিপালনের তথ্য ছাড়াও ব্যাংকগুলোর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে ব্যাংকের মূলধন পরিস্থিতি উন্নয়নে তারা কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, কেন মূলধন পরিস্থিতি উন্নতি হয়নি।

সূত্র জানায়, সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বিগ্ন অর্থ মন্ত্রণালয়। সেপ্টেম্বও শেষে সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএলের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩৮ হাজার ৫১৭ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। অথচ ব্যাংকিং খাতের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণই ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। বৈঠকে ব্যাংকগুলোকে এর কারণ জানাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে কি কি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছেÑতাও ব্যাংকগুলোকে জানাতে বলা হয়েছে।

বৈঠকে বলা হয়, এসব তথ্য পাঠানোর পর সেগুলোকে বিশ্লেষণ করে সন্তুষ্ট হলে তবেই দেওয়া হবে মূলন ঘাটতি পূরণের অর্থ। এছাড়া পাঠানো তথ্য বিশ্লেষণ করে কোনো ব্যাংকের উদ্যোগ যথাযথ মনে না হলে পরবর্তীতে মূলধন ঘাটতি পূরণে ওই ব্যাংক টাকা চাইলে এসব দিক বিশেষভাবে বিবেচনায় নেওয়া হবে।

সূত্র জানায়, অর্থ মন্ত্রণালয় মুখে যাই বলুক না কেন, ভেতরে ভেতরে ব্যাংকগুলোকে টাকা দেওয়ার একটি পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এতে দেখা গেছে, প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুসারে বরাদ্দের ২ হাজার কোটি টাকার মধ্যে সোনালী ব্যাংককে দেওয়া হতে পারে ৪৫০ কোটি টাকা। জনতাকে ২০০ কোটি, রূপালীকে ২৫০ কোটি, বেসিক ব্যাংককে ৫৫০ কোটি, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংককে ৪০০ কোটি, রাকাবকে ১৪৯ কোটি ৭৯ লাখ এবং গ্রামীণ ব্যাংককে ২১ লাখ টাকা দেওয়া হতে পারে। আর বিশাল এ মূলধন ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকগুলো যদি ঋণ নেয় সে ঋণের গ্যারান্টি দেওয়া যায় কিনা তাও চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সরকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরকারি সেবা ছড়িয়ে দিচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে। এ মাধ্যমে কৃষি উন্নয়ন, দারিদ্র্যবিমোচনসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ভূমিকা রাখতে গিয়েও ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি বেড়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist