মোতাহার হোসেন
মতামত
আওয়ামী লীগকে কেন ভোট দেবেন
প্রতিটি রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্যই থাকে জনকল্যাণ, দেশ ও মানুষের উন্নয়ন সাধন, এটাই আপাততদৃষ্টে মনে হয়। বাস্তবেও তাই হওয়া উচিত। কিন্তু কার্যত বিগত সময়ের মূল্যায়নে অনেক ক্ষেত্রে এর প্রতিফলন ঘটেনি। আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখেও আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে। শুরু থেকে নির্বাচন নিয়ে কিছুটা সংশয় থাকলেও এখন মোটামুটি নিশ্চিত আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠুু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে এমন প্রস্তুতিই নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। জনগণেরও প্রত্যাশা তাই। অবশ্যই ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকেও বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। এ ইশতেহারকে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী এজেন্ডাও বলা যেতে পারে। বিগত ১০ বছর আওয়ামী লীগ যেসব উন্নয়ন করেছে তাতে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে ও বিশ্ববাসীও একে স্বীকৃতি দিয়েছে। পাশাপাশি আকাশে নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে মহাশূন্যেও বাংলাদেশের বিচরণ মূলত এক বিস্ময়কর অগ্রযাত্রার মাইলফলক।
বাংলাদেশের এ অভূতপূর্ব উন্নয়ন, অগ্রগতি-সমৃদ্ধির ধারাকে অব্যাহত রাখতে আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে ঘোষণা করা হয়েছে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার। ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ ইশতেহারে উন্নয়ন-সমৃদ্ধির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার দৃঢ়প্রত্যয় করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আবারও ক্ষমতায় যেতে পারলে ২১ দফা অঙ্গীকার তুলে ধরে সেগুলো বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতিও দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। এবারের ইশতেহারের মূল বিষয় তারুণ্য এবং গ্রামের উন্নয়ন। ঘোষিত ইশতেহারে বিভিন্ন মেয়াদে সরকারে থাকার সময়কার অর্জনগুলো তুলে ধরা হয়। এর পাশাপাশি বিএনপি ও জামায়াত জোট সরকারের সময়কার নানা নেতিবাচক দিকও তুলে ধরা হয়।
এ নিবন্ধের মাধ্যমে মূলত সমকালীন ইতিহাসে এর অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজনেই ইশতেহারে যে ২১টি বিশেষ অঙ্গীকার উল্লেখ করা হয়েছে, তা নি¤œরূপ ১. আমার গ্রাম, আমার শহর- প্রতিটি গ্রাামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ। ২. তারুণ্যের শক্তি-বাংলাদেশের সমৃদ্ধি: তরুণ যুব সমাজকে দক্ষ জনশক্তিকে রূপান্তরিত করা এবং কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা। ৩. দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ। ৪. নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা ও শিশুকল্যাণ। ৫. পুষ্টিসম্মত ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা। ৬. সন্ত্রাস-সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ ও মাদক নির্মূল। ৭. মেগা প্রকল্পগুলোর দ্রুত ও মানসম্মত বাস্তবায়ন। ৮. গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সুদৃঢ় করা। ৯. দারিদ্র্য নির্মূল। ১০. সর্বস্তরে শিক্ষার মান বৃদ্ধি। ১১. সবার জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা। ১২. সার্বিক উন্নয়নে ডিজিটাল প্রযুক্তির অধিকতর ব্যবহার। ১৩. বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চয়তা। ১৪. আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা- লক্ষ্য যান্ত্রিকীকরণ। ১৫. দক্ষ ও সেবামুখী জনপ্রশাসন। ১৬. জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা। ১৭. সমুদ্র সম্পদ উন্নয়ন। ১৮. নিরাপদ সড়কের নিশ্চয়তা। ১৯ . প্রবীণ, প্রতিবন্ধী ও অটিজম কল্যাণ। ২০. টেকসই উন্নয়ন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
অবশ্য বিগত দিনে নৌকায় ভোট নিয়ে মানুষ কি পেল তারও একটি বিশ্লেষণ প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়েছে। শহর-গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত জনবসতির প্রায় ৮০ ভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়া হয়েছে বিগত ১০ বছরে। প্রত্যেক ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে দলটির। প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে প্রায় ৩৫ কোটি বই বিতরণ। ভারত-মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র সীমানা বিজয়। সারা দেশে মডেল মসজিদ নির্মাণ। পর্যাপ্তসংখ্যক ফ্লাইওভার নির্মাণ। বিশ্ব অটিজম আন্দোলন নেতৃত্বে বাংলাদেশ। উন্নয়নশীল দেশে উন্নীতকরণ। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা, ডিজিটাল স্মাটকার্ড প্রদান। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা। রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দান। ছিটমহল সমস্যার সমাধন। পদ্মা ও দেশের বৃহৎ নদীগুলোতে সেতু নির্মাণ। মেট্রোরেল নির্মাণ। ১০০ অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠা। কওমি মাদ্রাসা দাওরা হাদিসকে মাস্টার্স মান প্রদান এবং তাদের শিক্ষার মূল ধারায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। দুই কোটি শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি প্রদান। আরবি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন। প্রত্যেক বিভাগ ও জেলায় মেডিকেল কলেজ স্থাপন। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন। টেক্সটাইল কলেজ, টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন। মহাসড়ক বৃহত্তর সড়কগুলোকে ৪-৬ লেনে উন্নীতকরণ। সমগ্র দেশকে রেলের আওতায় আনার উদ্যোগ। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনের সম্প্রসারণ, কড লাইন স্থাপন। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ। ইন্টারনেটের সহজ ব্যবহার। প্রতিটি ইউনিয়নে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন এবং উদ্বৃত্ত খাদ্য রপ্তানির উদ্যোগ। দারিদ্র্য বিমোচন। দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় মঙ্গা দূরীকরণ, গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ। লিগ্যাল এইডে অসহায়, দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আইনগত সহায়তা। বয়স্কভাতা প্রদান। বিধবাভাতা প্রদান। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা প্রদান। মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান। বিজিডি কার্ড প্রদান। ভিজিএফ কার্ড প্রদান। জেলেদের খাদ্য সহায়তা। স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা প্রদান। অটিজম, অটিস্টিক মানুষকে সহায়তা প্রদান। অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে জঙ্গি দমন। দেশব্যপী কারিগরি শিক্ষার প্রসার, কারিগরি কেন্দ্র স্থাপন। গ্রামীণ জনপদে সংযোগ সড়ক নির্মাণ। ১০ টাকায় শিক্ষার্থী ও কৃষকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট চালু। মাতৃত্বকালীন ছুটি বৃদ্ধি। বছরব্যাপী ওএমএস কর্মসূচি বাস্তবায়ন। এশিয়ান হাইওয়ে প্রকল্প। শিল্পপার্ক নির্মাণ। হাতিরঝিল প্রকল্প বাস্তবায়ন। ১০ টাকা মূল্যে ৫০ লাখ হতদরিদ্রের মাঝে চাল বিতরণ। নদীভাঙন রোধ প্রকল্প। নারীর ক্ষমতায়ন। শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি। জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি। পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন। শিশুদের টিকাদান কর্মসূচি। ১১৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন। কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ। প্রবাসীদের রেমিটেন্স বৃদ্ধি। ব্যাংক রিজার্ভ বৃদ্ধি। পায়রা সমুদ্রবন্দর নির্মাণ। উড়াল সেতু নির্মাণ। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র্র স্থাপন, মহেশখালীর মাতার বাড়িতে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, কুতুবদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ, সারা দেশে গ্রামীণ মা ও শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন, বিনামূল্যে এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ৩০ রকম ওষুধ বিনামূল্যে বিতরণসহ এরকম জনকল্যাণমুখী অসংখ্য উদ্যোগের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।
বিগত ১০ বছরে শেখ হাসিনা সরকারের গৃহীত উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন। চলমান পদ্মা সেতুসহ ১০ মেগা প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়নের স্বার্থে এবং আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে ঘোষিত আওয়ামী লীগের ইশতেহার বাস্তবায়নে আবারো এই দল ও এই দলের নেতৃত্বাধীন মহাজোটকে নির্বাচিত করবেন এ প্রত্যাশা করছি। তা ছাড়া ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকাকালে শেখ হাসিনার সরকারের উন্নয়ন ও নানা সামাজিক উদ্যোগের আলোকেই অন্তত জনগণের আস্থার বিশ্বস্ত ঠিকানায় পরিণত হয়েছেন, নিঃসন্দেহে এটা বলা যায়। তাই আসুন আমরা নৌকার প্রার্থীদের, আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের ভোট দিয়ে আরেক বার দেশ সেবার সুযোগ দেই। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা জনগণের সেই আস্থা ও বিশ্বাসের মর্যাদা দেবেন এ বিশ্বাস অমূলক নয়।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
"