রায়হান আহমেদ তপাদার

  ১৭ অক্টোবর, ২০১৮

বিশ্লেষণ

গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র

প্রাকৃতিক সম্পদের দিক থেকে কঙ্গো বিশ্বের অন্যতম সম্পদশালী এক দেশ। কিন্তু অভ্যন্তরীণ সংকটে বিপর্যস্ত এ দেশটি নিজেদের সম্পদের ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারছে না। দেশটিতে পর্যাপ্ত অবকাঠামো পর্যন্ত নেই। গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র আফ্রিকা মহাদেশের একটি রাষ্ট্র। আয়তন ২৩ লাখ ৪৫ হাজার ৪০৯ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা ৮ কোটি। রাজধানীর নাম কিনসাসা। মুদ্রার নাম কঙ্গোনিজ ফ্রাঙ্ক। বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র দ্বিতীয় স্থানে। কঙ্গোতে ১৯৯০ সালে শুরু হওয়া যুদ্ধ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। কিভুতে সেনাবাহিনী নিয়মিত এম-২৩ বিদ্রোহীগোষ্ঠীর সঙ্গে যুদ্ধ করেছে। যদিও ২০১৩ সালের শেষের দিকে সরকার বিদ্রোহীদের দমনে সক্ষম বলে ঘোষণা দেয়। বাস্তবে এখনো বিদ্রোহীরা সক্রিয়। তাছাড়া ইথিওপিয়া, বুরুন্ডি, জিবুতি, কেনিয়া, উগান্ডা, সিয়েরা লিয়ন, ঘানা এবং নাইজেরিয়ায় সন্ত্রাসী হামলার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে আরো বেশি সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। দক্ষিণ কিভুর বুরুডিয়ান শরণার্থী শিবির পরিদর্শনকালে এ আহ্বান জানান সংস্থাটির প্রধান ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি। কঙ্গোর মানবিক পরিস্থিতি তুলে ধরতে আসন্ন জেনেভা সম্মেলনে দেশটি থেকে প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। কঙ্গোর মধ্য কাসাই ও পূর্বাঞ্চলীয় কিভু অঞ্চলের মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে বলেও মন্তব্য করেন গ্র্যান্ডি। এর আগে ইউএনএইচসিআরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটিতে ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষের মানবিক সহায়তার প্রয়োজন।

গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষে সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয় এড়াতে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন। এ অবস্থায় কঙ্গো যাচ্ছেন ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। সংঘাতপূর্ণ কঙ্গোতে চরম মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে সতর্ক করে দিয়েছে রেডক্রস। পূর্বাঞ্চলীয় শহরগুলোতে গৃহহারাদের সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। নাজুক নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে ওসব অঞ্চলে ত্রাণ তৎপরতাও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে সাহায্য সংস্থাগুলো। ৩ মাসের সহিংসতায় আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে আড়াই লাখ মানুষ। যুদ্ধ বিধ্বস্ত অঞ্চলে সরকারি সৈন্যরা হত্যা, ধর্ষণ এবং লুটপাট চালিয়েছে বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের। কঙ্গোয় মানবাধিকার লংঘনের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সংস্থাও। টুটসি বিদ্রোহীরা পূর্বাঞ্চলীয় বেশ কয়েকটি শহর দখলের পর বুধবার গোমা শহরের দিকে এগিয়ে গেলে সরকারি সৈন্যরা শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়। সেদিনই একতরফা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন টুটসি নেতা জেনারেল লরেন্ট এনকুন্ডা। শহরটিতে এখন জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সাড়ে ৮০০ সদস্য মোতায়েন রয়েছে। তবে যেকোনো সময় শহরটি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে বিদ্রোহীরা। সে সময় তাদের বাধা দেওয়া হলে সহিংস পরিস্থিতির ব্যাপারেও হুশিয়ারি দিয়েছেন এনকুন্ডা। এই অচলাবস্থায় গোমা শহরের আশপাশে আটকা পড়া প্রায় ৩০ হাজার মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। এ পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন।

অন্যদিকে আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের জন্য বিদ্রোহী নেতা এনকুন্ডাকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে টুটসি বিদ্রোহীদের সমর্থনকারী রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামির সঙ্গে আলোচনা করছেন জাতিসংঘের মহাসচিব। এ ছাড়া যোগাযোগ করছেন কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট জোসেফ কাবিলা এবং আফ্রিকান ইউনিয়নের প্রধান ও তাঞ্জানিয়ার প্রেসিডেন্ট জাকায়া কিকবেতের সঙ্গেও। এদিকে কঙ্গোয় মানবিক সাহায্য পাঠানোর সিদ্ধান্তের পর সেখানে সৈন্য পাঠানোর চিন্তাভাবনা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ত্রাণ কাজের জন্য দেশটিতে দেড় হাজার সৈন্য পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছে ফ্রান্স। এদিকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে কঙ্গো যাচ্ছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড মিলিব্যান্ড এবং ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বার্নার্ড কুচনার। রাজধানী কিনশাসা এবং গোমা শহরও পরিদর্শন করবেন তারা। পূর্বাঞ্চলীয় নর্থ কিভু প্রদেশে টুটসিদের উচ্ছেদের জন্য কঙ্গো সরকার সেনাবাহিনী এবং রুয়ান্ডার বিদ্রোহীদের ব্যবহার করছে, এই অভিযোগে বিদ্রোহ করে আসছে টুটসিরা। অন্যদিকে টুটসি বিদ্রোহীদের রুয়ান্ডা সরকার সমর্থন দিচ্ছে বলে পাল্টা অভিযোগ কঙ্গো সরকারের। এরই জের ধরে গত আগস্টে সরকারি সৈন্য এবং টুটসি বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘাত চরম আকার ধারণ করে। উল্লেখ্য, সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষে সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয় এড়াতে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন। এ অবস্থায় কঙ্গো গিয়েছিলেন ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। সংঘাতপূর্ণ কঙ্গোতে চরম মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে সতর্ক করে দিয়েছে রেডক্রস। পূর্বাঞ্চলীয় শহরগুলোতে গৃহহারাদের সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে।

কঙ্গোর নাজুক নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে ওসব অঞ্চলে ত্রাণ তৎপরতাও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে সাহায্য সংস্থাগুলো। তিন মাসের সহিংসতায় আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে আড়াই লাখ মানুষ। যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে সরকারি সৈন্যরা হত্যা, ধর্ষণ এবং লুটপাট চালিয়েছে বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের। কঙ্গোয় মানবাধিকার লংঘনের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সংস্থাও। অন্যদিকে কঙ্গোতে শান্তি রক্ষায় কাজ শুরু করেছে মার্কিন বাহিনী।

রাজধানী কিনশাসা এবং গোমা শহরও পরিদর্শন করবেন তারা। পূর্বাঞ্চলীয় নর্থ কিভু প্রদেশে টুটসিদের উচ্ছেদের জন্য কঙ্গো সরকার সেনাবাহিনী এবং রুয়ান্ডার বিদ্রোহীদের ব্যবহার করছে, এই অভিযোগে বিদ্রোহ করে আসছে টুটসিরা। অন্যদিকে টুটসি বিদ্রোহীদের রুয়ান্ডা সরকার সমর্থন দিচ্ছে বলে পাল্টা অভিযোগ কঙ্গো সরকারের। এরই জের ধরে গত আগস্টে সরকারি সৈন্য এবং টুটসি বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘাত চরম আকার ধারণ করে। অন্যদিকে খাদ্য সংকটে মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে আফ্রিকার দেশ কঙ্গোর প্রায় ৩০ লাখ মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত সাহায্য এবং পরিপূর্ণ খাদ্য সরবরাহ না হলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে হাজার হাজার শিশুর মৃত্যু হতে পারে। এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছে বিশ্ব খাদ্যসংস্থা। গত বছরের আগস্ট থেকে কঙ্গোর কাসাই প্রদেশে সহিংসতা চলছে। এতে মারা গেছে প্রায় ৩ হাজার মানুষ। সহিংসতার কারণে ওই এলাকায় প্রায় ১৫ লাখ মানুষ ঘরহারা হয়েছে। যাদের বেশির ভাগই শিশু। আশ্রয়হীন অবস্থায় খাবারের সংকটে ভয়াবহ অপুষ্টিতে ভুগছে সেখানকার শিশুরা। এরই মধ্যে খাবারের অভাবে অনেক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ব খাদ্য সংস্থার প্রধান ডেভিড বিসলি। কাসাই অঞ্চলের মানুষদের সহায়তায় যে পরিমাণ অর্থ দরকার, তার মাত্র ১ শতাংশ জাতিসংঘের তহবিলে আছে বলেও জানান তিনি।

কিন্তু গৃহযুদ্ধকবলিত কঙ্গোয় ৭০ লাখের বেশি মানুষ প্রচ- খাদ্যাভাবে ভুগছে। আর সহিংসতার কারণে শুধু এ বছর দেশটির ১৭ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র যেতে বাধ্য হয়েছে। দেশবাসীর স্থানচ্যুতির এ সংকট মধ্যপ্রাচ্য সংকটকেও ছাড়িয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন নরওয়েজীয় শরণার্থী পরিষদের কঙ্গো শাখার পরিচালক উলরিকা ব্লম। নির্বাচনে জিতে পর পর দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করা জোসেফ কাবিলা সংবিধান অনুসারে আর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। এদিকে তিনি নির্বাচনও দিচ্ছেন না। সমালোচকদের মতে, যতদিন পারা যায়, ক্ষমতায় থাকার জন্যই তিনি নির্বাচন দিচ্ছেন না। এর ফলে অস্থিতিশীল কঙ্গোয় পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটে।ইন্টারন্যাশনাল ডিসপ্লেসমেন্টে মনিটরিং সেন্টারের হিসাবে কঙ্গোয় এ বছর গড়ে প্রতিদিন সাড়ে পাঁচ হাজার ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। উলরিকা জানান, অব্যাহত সহিংসতা সব মিলিয়ে ৪০ লাখ মানুষ স্থানচ্যুত হয়েছে। আর খাদ্যাভাবে ভুগছে ৭০ লাখ মানুষ। আন্তর্জাতিক খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়নে দেরি হলে অচিরেই কঙ্গোয় দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়বে, মরবে মানুষ।

লেখক : গবেষক, বিশ্লেষক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close