আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

কাশ্মীরে শেকলে বেঁধে লাশ টানায় ভারতীয় সেনাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ

একটি ছবিকে কেন্দ্র করে ভারতীয় সেনাসদস্যদের বিরুদ্ধে ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরে নতুন করে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। ওই ছবিতে দেখা গেছে, এক বিদ্রোহীর রক্তমাখা ও অর্ধনগ্ন মৃতদেহ পায়ে শেকল বেঁধে টেনে নিয়ে যাচ্ছে ভারতীয় সেনারা। এ ধরনের কর্মকান্ড নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন মানবাধিকার কর্মীরাও। তাদের দাবি, এটি আন্তর্জাতিক মানবিকতাবিষয়ক আইনের লঙ্ঘন। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা বিদ্রোহীদের মৃতদেহ এভাবে টেনে নিয়ে যাওয়ার পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এসব কথা জানা গেছে। ১৩ সেপ্টেম্বর জম্মুর রিয়াসি এলাকার কাকরিয়াল জঙ্গলে ভারতীয় সেনাদের সঙ্গে বিদ্রোহীদের ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হয়। সাত ঘণ্টার ওই ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয় তিন বিদ্রোহী। পরে এ ঘটনার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দেখা যায়, এক বিদ্রোহীর মৃতদেহ পায়ে বেঁধে দড়ি দিয়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছে ভারতীয় সেনারা। তার মুখ নিচের দিকে আর পা শিকলে বাঁধা। ছবিটি ছড়িয়ে পড়ার পর তা নিয়ে ভারতীয় সেনাদের বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় ওঠে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক পরিচালক মিনাক্ষী গাঙ্গুলি এ ঘটনায় অবিলম্বে তদন্ত শুরুর আহ্বান জানিয়েছেন। নিহত বিদ্রোহীর দেহকে দড়ি দিয়ে বেঁধে টেনে নিয়ে যাওয়াকে মর্যাদাহানিকর কর্মকান্ড আখ্যা দিয়েছেন তিনি। টুইটারে মিনাক্ষী গাঙ্গুলি লিখেছেন, ‘এ থেকে বোঝা যায়, তাদেরকে ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি এবং মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে তারা পুরোপুরি ব্যর্থ।’ জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী, সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে মৃতদেহের অঙ্গহানি নিষিদ্ধ। আর ভারত জেনেভা কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ।

মুবাশির নাসির নামে কাশ্মীরের স্থানীয় এক বাসিন্দা ক্ষোভ জানিয়ে আল জাজিরাকে বলেন, ‘কাশ্মীরে মৃতদেরকেও সম্মান দেওয়া হয় না। এসব ঘটনা যখন সংবাদমাধ্যমে প্রচার হয়, তখন সবাই তা নিয়ে ধিক্কার জানায়। এতে কোনো কিছুর বদল ঘটে না। কাশ্মিরে সেনাবাহিনী কী ধরনের কর্মক- চালাচ্ছে, সেটাই শুধু এর মধ্য দিয়ে সামনে আসে।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রবিবার সমালোচনাগুলো নাকচ করে দিয়েছেন। আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেছেন, বন্দুকযুদ্ধের পর বিদ্রোহীর মৃতদেহ টেনে নিয়ে যাওয়াটা তাদের ‘স্বাভাবিক কার্যক্রম প্রক্রিয়া’। মৃতদেহে বিস্ফোরক থাকতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে নিরাপত্তাজনিত কারণে দেহগুলো সরাসরি স্পর্শ করা হয় না। ওই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি জানি না কেন এ নিয়ে এতো আলোচনা তৈরি হয়েছে।

আপনাদের বিবেচনায় নিতে হবে ওই লোক কেন এখানে এসেছে। তার সঙ্গে এমনটাই করা উচিত।’

ওই ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘আমরা মৃতদেহ সরাসরি স্পর্শ করি না। পায়ে একটি দড়ি বেঁধে নেওয়া হয় এবং টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। কখনো কখনো তারা জীবিতও থাকতে পারে। আমাদেরকে বোকা বানানোর জন্য এটা তাদের কোনো ফাঁদ হতে পারে, মৃতদেহে বিস্ফোরক ও গ্রেনেড থাকতে পারে। অনেকসময় এমনটা হতে দেখা গেছে।’ ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্মকান্ডে ক্ষোভ জানিয়ে কাশ্মিরভিত্তিক মানবাধিকারকর্মী খুররাম পারভেজ বলেন, ‘ভারতীয় সেনারা এটা সেটা বলে সবসময় নিজেদের পক্ষে সাফাই গায়। আন্তর্জাতিক মানবিকতা-সংক্রান্ত আইন অনুযায়ী, যুদ্ধবন্দিদের মতো করেই মৃতদেহকে সম্মান দেখাতে হবে ও মৃতদেহ সংরক্ষণ করতে হবে।’ খুররাম পারভেজ আরো বলেন, ‘সবসময় সবকিছু ক্যামেরায় ধরা পড়ে না। তবে এখানে তা ঘটে।’ খুররামের দাবি, গত বছর দক্ষিণ কাশ্মিরের পুলওয়ামাতে বন্দুকযুদ্ধে নিহত তিন বিদ্রোহীর দেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল।

উল্লেখ্য, কাশ্মীরে সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠনগুলোর কেউ কেউ সরাসরি স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলনরত। কেউ কেউ আবার কাশ্মীরকে পাকিস্তানের অঙ্গীভূত করার পক্ষে। ইতিহাস পরিক্রমায় ক্রমেই সেখানকার স্বাধীনতা আন্দোলনের ইসলামীকরণ হয়েছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কাশ্মীরের জাতিমুক্তি আন্দোলনকে বিভিন্ন জঙ্গিবাদী তৎপরতা থেকে আলাদা করে শনাক্ত করে না। সন্দেহভাজন জঙ্গি নাম দিয়ে বহু বিদ্রোহীর পাশাপাশি বেসামরিকদের হত্যার অভিযোগ রয়েছে ভারতীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে। সেখানকার বিদ্রোহী সংগঠনগুলোর মধ্যে হিজবুল মুজাহিদিন সবচেয়ে সক্রিয়। ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত সংগঠনটিকে ভারতের পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রও সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। আদর্শগতভাবে সংগঠনটি কাশ্মীরকে পাকিস্তানের অঙ্গীভূত করার পক্ষে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close