সম্পাদকীয়

  ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

বিশ্ব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে

পুরো বিশ্বই আজ কয়েক হাজার আণবিক বোমার ওপর দাঁড়িয়ে। যদি প্রশ্ন করা হয়, কেন এই মহাযজ্ঞ? সম্ভবত মানবসভ্যতাকে ধ্বংস করার লক্ষ্যেই এই আয়োজন। কিন্তু এ লক্ষ্য নিয়ে কেউই ভয়ংকর বোমা নির্মাণ করেননি। করেছে নিজের শক্তি প্রদর্শনের জন্য। প্রভুত্ব করার লক্ষ্যে। আর এ প্রভুত্ব রক্ষা করতে গিয়ে বিশ্বে এর বিস্ফোরণ ঘটানো হবে। ধ্বংস হবে এই পৃথিবী।

বর্তমান সময়ে অস্ত্রের প্রযুক্তিগত উন্নয়নে আণবিক বোমার উন্নয়ন এবং উৎপাদন বৃদ্ধির মাত্রা যেন নতুন মাত্রায় উপনীত হয়েছে। প্রত্যেকেই যেন এই বোমার মালিক হওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত। যারা এরই মধ্যে সফল হয়েছেন, তারা এই বোমার গুণগত মানোন্নয়নের জন্য মরণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে যে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকার প্রয়োজন হচ্ছে, তা ঢালতেও তারা কার্পণ্য করছেন না। অথচ সামান্য একটি ভাইরাসের কাছে এই আণবিক সভ্যতা আজ পরাজিত। করজোড়ে প্রার্থনা করছেন এর হাত থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার। কেউই ভাবছেন না যে, তাদের পাপের ফসল হচ্ছে এই করোনাভাইরাস।

মানুষ একাধারে সভ্যতার নির্মাণশ্রমিক। পাশাপাশি এই সভ্যতা কলঙ্কিত হচ্ছে এদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে। মুনাফা অর্জনের প্রতিযোগিতায়, প্রভুত্বের শিখরে ওঠার প্রতিযোগিতায় এরা যেন অন্ধ। আর সে কারণেই এই সুন্দর পৃথিবী বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে দ্রুতগতিতে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আমরা নিজেকে ধ্বংস করার কাজে সীমাহীন অর্থ ব্যয় করতে পারলেও নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় তা করতে পারছি না। এই ব্যর্থতা নিয়ে পৃথিবী কতকাল টিকে থাকবে? এটিই জিজ্ঞাসা।

ওমরাহ পালন মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। প্রতি বছরই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসলমানরা ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরবে যান। এবার তা পারছেন না। কারণ করোনাভাইরাস। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সৌদি সরকার ওমরাহ পালনকারীদের সৌদি আরবে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এ ধরনের সিদ্ধান্তের কোনো প্রয়োজন হতো না যদি আমরা মানবজাতির ক্ষতির কথা চিন্তা না করে সহায়তার কথা ভাবতাম। মুনাফার পেছনে ছুটতে গিয়ে মানবজাতি আজ তার মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলেছে। আর এ হারানো মূল্যবোধের কারণে আমরা একের পর এক দুর্যোগ-মহাদুর্যোগের মুখোমুখি হচ্ছি।

সৌদি আরবের এই নিষেধাজ্ঞার ফলে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ থেকে কোনো ওমরাহযাত্রী বিমানে সৌদি আরব যেতে পারেননি। আটকা পড়েছেন ওমরাহ ভিসা করা ১০ হাজার যাত্রী। আর এ যাত্রা ব্যাহত হওয়ার কারণে বাংলাদেশের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৫০ কোটি টাকা। চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গত দুই মাসে অন্তত ২ হাজার ৮০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ছড়িয়ে পড়েছে অ্যান্টারটিকা ছাড়া সব মহাদেশে। আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ হাজার ৭০০ ছাড়িয়েছে। সৌদি আরবে এখনো এ ভাইরাসের সংক্রমণ না হলেও ইরানে এরই মধ্যে ১৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কিছু দেশে গত কয়েক দিনে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। আরব নিউজ বলছে, ভাইরাস বিস্তার ঠেকাতে সৌদি সরকার এরই মধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে এবং তারই অংশ হিসেবে ওমরাহযাত্রীদের ওপর এই কড়াকড়ি।

আমরা মনে করি, আগামীতে এর চেয়েও ভয়াবহ ভাইরাসের আক্রমণ হতে পারে। কেননা, দিন দিন পৃথিবী বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। অযোগ্যতা যত ঘনীভূত হবে, মানবজাতির ওপর এ ধরনের হামলার পরিমাণও ততটাই বাড়বে। সুতরাং; পৃথিবীকে ধ্বংস করার কর্মকাণ্ড থেকে বেরিয়ে এসে নান্দনিক নির্মাণের পথে এগিয়ে যাওয়াটাই হোক মানুষের ধর্ম আর এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
করোনাভাইরাস,সৌদি আরব,ওমরাহ ভিসা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close