সম্পাদকীয়

  ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

নারী শ্রমিকদের বাড়িভাড়া সমস্যা দূর করা হোক

ভাড়াটিয়া আর বাড়িওয়ালা। তাদের সম্পর্ক কখনোই ভালো থাকেনি। বাড়িভাড়া দিয়ে থাকার পরও বাড়িওয়ালাদের কম-বেশি অত্যাচার ভাড়াটিয়াদের এ যাবৎ সইতে হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। তবে সব বাড়িওয়ালাকে এক পাল্লায় মাপা যাবে না। সমাজে খারাপের মধ্যে ভালো যেমন আছে, বাড়িওয়ালাদের প্রশ্নেও তাই। অনুরূপভাবে ভাড়াটিয়াদের ক্ষেত্রেও একই অভিযোগ। তবে খারাপ ভাড়াটিয়ার সংখ্যা নিতান্তই কম। কেননা, জলে বাস করে কুমিরের সঙ্গে বিবাদ না করাটাই ভালো। এত গেল সম্পর্কের আলোচনা, ধনী-গরিব-নির্বিশেষে। প্রকৃত অর্থে মহানগর ঢাকায় মধ্যবিত্ত ও পোশাকশিল্পের নারীশ্রমিকদের অবস্থা সবার চেয়ে নাজুক। বিশেষ করে নারীশ্রমিকরা আছেন কঠিন নেতিবাচক বাস্তবতায়।

পোশাক নারীশ্রমিকদের একটা বড় অংশই বয়সে তরুণ হওয়ায় বাড়িভাড়া পেতে তাদের পোহাতে হয় নানা বিড়ম্বনা। যে কারণে অনেকেই নকল স্বামী বানিয়ে বাড়িভাড়া নেন। সমাজ বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব কারণে বাড়ছে সামাজিক অপরাধ। কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে, এসব নারীশ্রমিকের জন্য বাড়িভাড়া পাওয়াটা সোনার হরিণ পাওয়ার মতো ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনো বাড়িওয়ালাই ব্যাচেলর নারী অথবা পুরুষ, কাউকেই ভাড়া দিতে চান না। তখন বাধ্য হয়ে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য তাদের এই পথ বেছে নিতে হচ্ছে।

আমরা মনে করি, এ অবস্থার পরিবর্তন হওয়া দরকার। নারীদের অধিকার রক্ষায় সরকারসহ আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসা প্রয়োজন রাষ্ট্রের মঙ্গলের কথা চিন্তা করেই। কেননা, এসব নারীশ্রমিকের ঘাম এবং রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আছে আমাদের পোশাকশিল্প। তবে আশার কথা হলো, নারী অধিকারের বিষয়টিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে বলেছেন, নারী অধিকারের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে।

দেশের পোশাকশিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের ৬৫ শতাংশের বয়স ২৫ বছরের নিচে। এই শ্রমিকরা তাদের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, বাড়িভাড়া না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে অনেকে বেছে নিচ্ছেন এমন পথ। বাড়িওয়ালাদের অজুহাত অবিবাহিতদের বাড়িভাড়া দিলে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। গবেষণা বলছে, বৈধপন্থায় বাসস্থানের সুযোগ না পেয়ে, অবৈধপথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন পোশাকশ্রমিকরা। আমরা মনে করি, বৈধ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে কেউ আর অবৈধপথে চলাচল করবেন না। তাদের জন্য বৈধ উপায়ে বাড়িভাড়া পাওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করাটা আজ সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। আইন ও সরকারি প্রশাসনকেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

এদিকে তৈরি পোশাক খাতে ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি করা হলেও, ব্যয়বৃদ্ধির কারণে শ্রমিকদের জীবনমানের কোনো উন্নতির ছাপ দেখা যায় না। বাক্যটি পোশাকশিল্পের সঙ্গে জড়িত শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের। তাদের এ বাক্যের মধ্যে সত্যতা আছে। তারা বলছেন, যে মুহূর্তে শ্রমিকের মজুরি বাড়ে; সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যায় বাড়িভাড়া। যানবাহনের খরচও বাড়ে। দ্রব্যমূল্যও বেড়ে চলে সমান গতিতে। ফলে সব মিলিয়ে শ্রমিকরা ওইভাবে উপকৃত হন না। বাস্তবতাও সেই কথা বলে। বাজেট ঘোষণার পরপরই আমরা এ ধরনের চিত্রই দেখছি। চিত্রের কোনো পরিবর্তন কখনোই ঘটেনি। এতসব বিড়ম্বনার মধ্যে আমাদের শ্রমিকরা আজও বেঁচে আছেন। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছেন, বিশেষ করে পোশাকশিল্পের নারীশ্রমিকরা। বাড়িভারা নেওয়া তাদের জন্য প্রকৃত অর্থেই একটি বিড়ম্বনা। এ বিড়ম্বনা থেকে তাদের জরুরি ভিত্তিতে বের করে আনার জন্য আমরা সরকারের পক্ষ থেকে মানবিক ও সংবেদনশীল পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি উত্থাপন করছি।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সম্পাদকীয়,নারী শ্রমিক,বাড়ি ভাড়া
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close