সম্পাদকীয়

  ১৫ জানুয়ারি, ২০২০

প্রাথমিকে শিক্ষার অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে হবে

প্রাথমিক শিক্ষা মূলত দেশের সার্বিক শিক্ষার ভিতকে মজবুত করে। সেই শিক্ষা যদি নড়বড়ে হয়, তাহলে জাতির অগ্রগতিও বাধাগ্রস্ত হয়। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন ভঙ্গুর দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে হলে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। তাইতো তিনি শিক্ষার শেকড়ে হাত দিয়েছিলেন। ১৯৭৩ সালে ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেন, যা ছিল একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। পরে তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালে একই সঙ্গে ২৬ হাজার ১৯৩টি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেন। বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৯৯টি। শুধু তাই নয়, সরকার প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নেও নিয়েছেন অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

প্রাথমিক শিক্ষার বিভিন্ন সূচকে অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রয়েছে। আর এর মূলে রয়েছে প্রতি বছর শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে বই বিতরণ। এ ছাড়া আরো রয়েছে শিক্ষার হার বৃদ্ধি ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের বেতন ও পদমর্যাদা বৃদ্ধি, বেতন বৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন, মিড ডে মিল চালুকরণ, জনবল ঘাটতি পূরণসহ নানামুখী পদক্ষেপ। সেই ধারাবাহিকতায় এবার প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির পাশাপাশি শিক্ষাসহায়ক উপকরণ কেনার টাকা দেবে সরকার। বছরের শুরুতে ১ কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীকে ৫০০ টাকা করে দেওয়া হবে। প্রাথমিক শিক্ষার মান্নোয়নে নিঃসন্দেহে এটি একটি বিশাল পদক্ষেপ। গত সোমবার বিকালে একাদশ জাতীয় সংসদের ৬ষ্ঠ অধিবেশনের দ্বিতীয় কার্যদিবসে উত্থাপিত প্রশ্নের জবাবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, স্কুলের সার্বিক পরিবেশ ও ছাত্রছাত্রীদের মানসিক অবস্থা অধিকতর প্রফুল্লকরণের জন্য প্রতি বছর শুরুতে ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তির পাশাপাশি ১ কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীকে শিক্ষাসহায়ক উপকরণ দেওয়ার জন্য প্রতি বছর শুরুতে এককালীন ৫০০ টাকা দেওয়া হবে। প্রকল্পটির মূল্য লক্ষ্য হলো দারিদ্র্যবিমোচন, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা-উপকরণ ক্রয়ের জন্য শিক্ষাসহায়তা প্রদান করা, যেন তারা সন্তুষ্টি এবং আনন্দের সঙ্গে স্কুলে যেতে পারে। আমরা বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকারের এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই।

আমরা মনে করি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে সরকারের শিক্ষাসহায়ক এ সিদ্ধান্ত প্রাথমিকের কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের স্কুল যাওয়ার আনন্দকে আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেবে। অভিভাবকরাও পাবে এক ধরনের প্রণোদনা। যা তাদের কোমলমতী সন্তানদের উচ্চতর শিক্ষাগ্রহণে অনুপ্রাণিত করবে। মনে রাখতে হবে, শিক্ষাই সর্বোত্তম বিনিয়োগ। যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত, সে জাতি তত উন্নত। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালে তার নজির অমরা পাব। সংগত কারণেই মনে রাখতে হবে, উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।

আমরা আশা করি, এখন পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রগতিতে যেসব বিষয় বাধা হয়ে রয়েছে, তা থেকে উত্তরণের জন্য প্র্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। ২০১৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকের সরাসরি নিয়োগযোগ্য ৩৫ শতাংশ ৩ হাজার ৭১৬টি শূন্যপদ এখনো পূরণ করা হয়নি। যদিও মন্ত্রী বলেছেন, ৩৭তম বিসিএস হতে পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগের জন্য পিএসসির সুপারিশ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদ পূরণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষায় যাতে কোনোভাবে বিঘ্ন না ঘটে, আমরা এই কার্যক্রমের দ্রুত বাস্তবায়ন চাই। পাশাপাশি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন, শিক্ষা বিভাগের কার্যক্রম মনিটরিং করাসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবাই সচেষ্ট থাকতে হবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
প্রাথমিকে শিক্ষা,সম্পাদকীয়,অগ্রগতি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close