সম্পাদকীয়

  ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৯

সিস্টেম লস কমানোর ব্যবস্থা নিতে হবে

ঘুণপোকা! প্রাণিকুলের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র একটি প্রাণী। ক্ষুদ্র হলেও এর শক্তিমত্তার কথা কমবেশি সবারই জানা। বিশাল প্রাসাদকেও এরা মাটিতে নামিয়ে আনার ক্ষমতা রাখে। এই প্রাণিকুলের একটি রূপক ব্যবহার সমাজ জীবনের সর্বত্র প্রতিফলিত হতে দেখা যায়। সামাজিক অবক্ষয়ের সঙ্গে এর তুলনা করা যেতে পারে বা হয়ে থাকে। আমরা প্রায়ই বলে থাকি, ঘুণে ধরা সমাজব্যবস্থা। অর্থাৎ সমাজব্যবস্থা যখন ভেতর থেকে ক্ষয় হতে হতে প্রায় ধ্বংসের মুখে এসে পড়ে, সামান্য বাতাসে ভেঙে পড়ে সেই ব্যবস্থা—তখন আমাদের হুঁশের উদয় হয়। মুখ ফসকে বেরিয়ে আসে সেই কথা, ঘুণে ধরা সমাজব্যবস্থার কারণে আমাদের এই বেহাল দশা। সমাজে সিস্টেম লসও সে রকম একটি ঘুণ পোকার কাহিনি মাত্র।

সর্বশেষ অর্থবছরে বিদ্যুৎ বিতরণ ও সঞ্চালন মিলিয়ে সার্বিক সিস্টেম লস দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৯৬ শতাংশ। অর্থাৎ এখানেও মনুষ্যরূপী ঘুণপোকার উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। তবে প্রকাশ্যে এদের কোনো কার্যক্রম থাকে না। আন্ডারগ্রাউন্ডেই এদের আস্থা। এরা যখন তাদের কর্মযজ্ঞে লিপ্ত থাকেন, তখন সাধারণভাবে তা টের পাওয়া যায় না। বিশেষ ব্যবস্থার আওতায় না আনা পর্যন্ত এরা মুক্ত ও স্বাধীন। কোনো কিছুকেই তোয়াক্কা না করাই এদের স্বভাব। তবে সাধারণ মানুষ টের পায় অনেক দেরিতে। ধ্বংস নামার আগ মুহূর্তে বা নামার পর। এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, তারা চেষ্টা করছেন নামিয়ে আনার। বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলো কিছুটা সাফল্যও পেয়েছে। তার পরও চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে সিস্টেম লস আগের চেয়ে বেড়েছে।

সূত্র মতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সিস্টেম লসের শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়র বোর্ড (বিআরইবি), ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আর নর্দান পাওয়ার সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) সিস্টেম লস ছিল ১০ দশমিক ৫২ শতাংশ। এই দুই প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্যগুলোর সিস্টেম লস ছিল এক অঙ্কেই। এর মধ্যে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিপি) সিস্টেম লস ৯ দশমিক ১২ শতাংশ। পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ। ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকোর) ৭ দশমিক ১১ এবং ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) ৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ। সার্বিকভাবে অর্থবছরটির বিতরণে সিস্টেম লসের পরিমাণ ছিল ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ। আর সঞ্চালনে সিস্টেম লস ছিল ৩ দশমিক ১০ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুৎ পরিবহনে স্বাভাবিকভাবে কিছু অপচয় হয়। নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি হলে আর্থিক ক্ষতি বাড়তে থাকে।

কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, কেবল পরিবহনের অপচয়ই সিস্টেম লসের একমাত্র কারণ নয়। এখানে বিদ্যুৎ চুরিও একটি বড় কারণ। অনেকের মতে, এ চুরি ঠেকাতে পারলে সিস্টেম লসের চেহারা বদলে যেত। সাধারণের কাঁধ থেকে বিদ্যুতের বাড়তি বোঝার চাপও বেশ কিছুটা কমে যেত। আমরা মনে করি, সিস্টেম লসের বিষয়টি কমিয়ে আনার প্রশ্নে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। আর সেই বিশেষ ব্যবস্থা পরিচালনার দায়িত্বে যারা থাকবেন তাদের অবশ্যই কাজে সততার ছাপ রাখতে হবে। এটি একটি পরামর্শ মাত্র। তবে আমরা বিশ্বাস করতে চাই, সামাজিক ঘুণপোকার হাত থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষার জন্য সরকার নিশ্চয়ই এগিয়ে আসবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সম্পাদকীয়,সিস্টেম লস,পরিবহন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close