সম্পাদকীয়

  ২৩ অক্টোবর, ২০১৯

আর্থিক সংকটে বিশ্ব, সতর্ক থাকতে হবে

উত্তপ্ত বিশ্ব। শুধু প্রকৃতিই যে বিরূপ হয়ে উত্তপ্ত করেছে পৃথিবী, তা নয়। উত্তপ্ত রাজনীতি, অর্থনীতি এবং পারস্পরিক সৌহার্দ্যবোধ। বিশ্বজুড়ে চলছে অস্ত্র উৎপাদন, বিপণন এবং সংগ্রহের প্রতিযোগিতা। বাড়ছে উদ্বাস্তুর সংখ্যা। চলছে অর্থনৈতিক অবরোধের এক মহাযজ্ঞ। দেখা দিয়েছে বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতা। এই ভারসাম্যহীনতা পুরো বিশ্বকে শেষ পর্যন্ত কোথায় নিয়ে দাঁড় করাবে, এ মুহূর্তে তা নিশ্চিত করে বলা না গেলেও এ কথা সত্য, এই ধারা অব্যাহত থাকলে বিশ্ববাণিজ্যে যে একটা ধস নেমে আসবে, তা সহজেই অনুমেয়। মুষ্টিমেয় কয়েকটি ধনী দেশের অনৈতিক কর্মযজ্ঞের কারণে ভুগতে হবে বিশ্বকে।

যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মেরভিন কিং বলেছেন, ধীরে ধীরে নতুন আর্থিক সংকটের দিকে বিশ্ব যেভাবে এগিয়ে চলেছে, তা গণতান্ত্রিক বাজার ব্যবস্থাকে ধ্বংসের দিকে পরিচালিত করবে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক পরিবেশ সাম্প্রতিক ইতিহাসে খুব কম সময়ই এতটা তিক্ত ছিল। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রে-চীনের বাণিজ্যযুদ্ধ, হংকংয়ে অব্যাহত আন্দোলন-ধর্মঘট, আর্জেন্টিনা ও তুরস্কের মতো উদীয়মান অর্থনীতিগুলোয় সংকট এবং ইউরোর ভবিষ্যৎ গন্তব্য নিয়ে ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা এবং যুক্তরাষ্ট্রে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক তিক্ততা এ সংকটকে আরো ঘনীভূত করবে। বিশ্বব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে পুলিশের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে, তা দেশটির স্বদিচ্ছা প্রকাশের যে ইতিহাস রয়েছে তার বিপরীত। এ ছাড়া উৎপাদনের একটি বিকৃত ছাঁচের মাধ্যমে বিশ্ব আজ একটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটে প্রবেশ করেছে।

এদিকে আন্তর্জাতিক অর্থনীতিবিদ আরেজকি বলেছেন, ২০৫০ সাল নাগাদ মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা (মিনা) অঞ্চলের জনসংখ্যা বর্তমানের দ্বিগুণ হবে। তার মতে, এ অঞ্চলের কোনো কোনো দেশের মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশের বয়স ৩১ বছরের কম। ২০৫০ সাল নাগাদ মিনা অঞ্চলের শ্রমবাজারে প্রবেশ করতে যাচ্ছে অতিরিক্ত ৩০ কোটি মানুষ। একই সময়ের মধ্যে এ অঞ্চলের অধিকাংশ দেশের জনসংখ্যা দ্বিগুণ হবে।

আমরা মনে করি, সমস্যাটি শুধু বিশ্বের ওই নির্দিষ্ট অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে তা ছড়িয়ে পড়বে। বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে। বাংলাদেশকেও এর বাইরে থাকার কোনো সুযোগ নেই। এ সমস্যা মোকাবিলার জন্য প্রবৃদ্ধির ওপর কড়া নজরদারির প্রয়োজন। প্রবৃদ্ধি যেন কোনোক্রমেই পড়ে না যায়, সে ব্যাপারে রাষ্ট্রকে অনেক বেশি যত্নশীল হতে হবে। একটি বাণিজ্য অবরোধের কারণে চীনের প্রবৃদ্ধিতে যে অবনমন ঘটেছে, তাতে চীনের অর্থনীতিও বেশ বিপাকের মধ্যে পড়েছে। পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর যে বাড়তি শুল্ক বসাতে যাচ্ছে, তাতে বিশ্ব বাজার ব্যবস্থায় একটি বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা দেওয়ার সম্ভাবনাও উজ্জ্বল হয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে ইরানের ওপর মার্কিন অর্থনৈতিক অবরোধের খড়্গ। একই সঙ্গে রয়েছে আরো অনেক দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞার আগাম হুশিয়ারি এবং চারপাশে শোনা যাচ্ছে যুদ্ধের দামামা।

ঠিক এ রকম এক মুহূর্তে বাংলাদেশ তার প্রবৃদ্ধিকে সঠিক পথে প্রবাহিত করতে সক্ষম হয়েছে। আর সে কারণেই বলতে হচ্ছে, এ ধারাকে অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশকে ঝুঁকতে হবে ব্যাপক শিল্পায়নের দিকে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করা গেলে বাংলাদেশ এ সংকট মোকাবিলায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আর্থিক সংকট,বিশ্ব,সতর্কতা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close