ঢাকাই চলচ্চিত্রের প্রখ্যাত চিত্রনায়ক সালমান শাহ’র অপমৃত্যুর মামলার পুনঃতদন্তের (অগ্রগতি) প্রতিবেদন দাখিল করেছে তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আজ সোমবার ঢাকা মহানগর হাকিম দেব্রবত বিশ্বাসের আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই’র পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম। প্রতিবেদনে তিনি জানিয়েছেন, প্রয়াত চিত্রনায়ক সালমান শাহ’র মৃত্যুর বিষয়ে তার মাসহ ১০ জন সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। এই বিষয়ে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে বলেও আদালতকে জানানো হয়। এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সালমান শাহের মা নীলা চৌধুরী বলেন, ঢাকার সিএমএম আদালত সালমান শাহ হত্যা মামলাটি পুনরায় তদন্ত করতে পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশ এই মামলাকে আত্মহত্যা বানিয়েছে। তাই তাদের ওপর আস্থা রাখতে কষ্ট হয়।

নীলা চৌধুরী বলেন, তবে এই মামলাটি বর্তমানে পিবিআইকে দিয়েছে। আশা করছি তারা সত্য উদ্ঘাটন করবে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, তদন্ত সুষ্ঠু হয়নি বলে নারাজি দিয়েছি। এখানে আমাকে সহায়তা করা বাদে, কোন স্বার্থে, কার স্বার্থে রাষ্ট্রপক্ষ কেন আমার আবেদনের বিরোধিতা করল, তা আমার বোধগম্য নয়। অহেতুক প্রায় ২ বছর আমাকে অপেক্ষা করতে হলো। তবে বর্তমান সরকারের প্রতি আমার আস্থা রয়েছে। আশা করছি, সত্য উদ্ঘাটন হবে।

এর আগে গত ২৫ সেপ্টেম্বর সালমান শাহ'র মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলার পুনঃতদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। তবে পিবিআই প্রতিবেদন দাখিলে ব্যর্থ হলে আদালত ২০ নভেম্বর নতুন তারিখ নির্ধারণ করেন। তারও আগে ২০১৬ সালের ৭ ডিসেম্বর পিবিআইকে পুনঃতদন্তের জন্য নির্দেশ দেন আদালত।

আদালত সূত্র জানায়, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর নিউ ইস্কাটন গার্ডেন এলাকায় সালমান শাহর ভাড়া বাসার ড্রেসিং রুম থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় তার দেহ নামানো হয় বলে পুলিশকে জানান তার স্ত্রী সামিরা। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় সালমানের বাবা কমর উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বাদী হয়ে রমনা থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেন। থানা পুলিশের তদন্তের পর তা ডিবির কাছে চলে যায়। তদন্ত শেষে ‘সালমানের মৃত্যু আত্মহত্যা’ মর্মে প্রতিবেদন দেয় ডিবি। বাদীপক্ষ ডিবির তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ না করলে পরবর্তীতে তদন্ত চলে যায় সিআইডির কাছে। সিআইডিও একই প্রতিবেদন দেয়। পরে আদালতের আদেশে এই মামলার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চলে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে।

২০১৪ সালের ৯ জুলাই বিচার বিভাগীয় তদন্তে সালমান খুন হয়নি মর্মে বলা হয়। এই আদেশের বিরুদ্ধে নারাজি দেন সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী। এর শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি র‌্যাবকে তদন্তের নির্দেশ দেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত। কিন্তু ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে ঢাকা মহানগরের প্রধান সরকারি কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে রিভিশন মামলা করেন। শুনানি শেষে গত ২৫ আগস্ট র‌্যাবকে তদন্তের নির্দেশ বাতিল করেন ঢাকার ছয় নম্বর বিশেষ জজ আদালত। একইসঙ্গে আদালত বিচার বিভাগীয় প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে সালমান শাহ'র মায়ের নারাজি আবেদন পুনরায় শুনানি করতে ঢাকার সিএমএম আদালতকে নির্দেশ দেন।

আদালত সূত্র জানায়, সালমান শাহর মৃত্যুর পর তার বাবার বাসা থেকে গ্রেফতার হন রিজভী নামের এক ব্যক্তি। মিথ্যা পরিচয় দিয়ে বাসায় ঢোকার ঘটনায় ক্যান্টনমেন্ট থানায় করা মামলায় আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন রিজভী। তাতে তিনি বলেন, সালমান শাহ আত্মহত্যা করেনি। তাকে খুন করা হয়েছে। খুনের বিস্তারিত জবানবন্দিতে জানায় সে। মিথ্যা পরিচয় দিয়ে সালমানের বাবার বাসায় ঢোকার অপরাধে ২০০১ সালে ঢাকার সিএমএম আদালত রিজভীকে দেড় বছরের কারাদ- দেন। গ্রেফতারের পর আদালত থেকে জামিন নিয়ে রিজভী পলাতক রয়েছেন।

এদিকে রিজভীর দেয়া জবানবন্দি পুরোপুরি মিথ্যা ও বানোয়াট বলে আদালতে প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। সিআইডির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সালমান শাহ'র মা নীলা চৌধুরী, ক্যান্টনমেন্ট থানার তৎকালীন ওসি শাহাবুদ্দিন, এসআই বদরুল আলম তালুকদার ও এসআই কাইয়ুম চৌধুরী রিজভীকে নির্যাতন এবং প্রলোভন দিয়ে জবানবন্দি আদায় করেছেন।

পিডিএসও/মুস্তাফিজ