তাজুল ইসলাম পলাশ/কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া

  ০১ মে, ২০১৯

রোহিঙ্গা শিবির

দালালের দৌরাত্ম্য বেড়েছে, অনৈতিক কাজে তরুণীরা

উখিয়া টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী আদম পাচারকারী চক্র। বেড়েছে দালালের দৌরাত্ম্য। তাদের টার্গেট রোহিঙ্গা তরুণীরা। এই চক্রের ফাঁদে পড়ে মিয়ানমার থেকেও নতুন করে রোহিঙ্গা তরুণীরা আসছেন বাংলাদেশে। এ তরুণীদের দেশে-বিদেশে বিয়ের নামে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে যৌন পল্লীতে। এ তথ্য ওঠে এসেছে সরেজমিন অনুসন্ধানে।

গত কয়েক দিনে উখিয়ার কুতুপালং বাজার, লম্বাশিয়া, মধুরছড়াসহ ক্যাম্পগুলোতে অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা গেছে এ তথ্য। দালালদের প্রথম টার্গেট থাকে সুন্দরী তরুণী। তারা মালয়েশিয়ায় থাকা তরুণদের কাছে বিয়ে দেওয়ার কথা বলে এই তরুণীদের ঘরছাড়া করে। পথে পথে চেকপোস্ট আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ছুটছেন রোহিঙ্গা তরুণীরা। সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এক সময় রোহিঙ্গারা পৌঁছে কক্সবাজার শহরে। মালয়েশিয়া যাওয়ার সেই স্বপ্ন থেমে যায় এই শহরে এসে। শুধু কক্সবাজার নয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে দালালের খপ্পরে পড়ে তরুণীরা পাড়ি দিচ্ছেন চট্টগ্রাম শহর হয়ে ঢাকায়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পর্যটন নগরী কক্সবাজারে পর্যটকদের চাহিদা রোহিঙ্গা তরুণীরা। এদের মধ্যে যারা বেশি সুন্দরী তাদের চাহিদা বেশি। দালালদের মাধ্যমে তারা ওঠে যায় বিভিন্ন হোটেলে। বিদেশি গ্রাহকেরা আবার ছোট মেয়ে, বিশেষ করে রোহিঙ্গা কিশোরী পাওয়া যাবে কিনা, দালালদের কাছে জানতে চান। তারাও (দালাল) নির্দিষ্ট টাকা দিয়ে পৌঁছে দিচ্ছে তাদের হাতে। প্রয়োজনে তাদের হাতে থাকা এন্ড্রয়েড মোবাইলে ছবি দেখিয়ে পছন্দ অপছন্দের বিষয়টি ঠিক করেন টাকার বিনিময়ে।

কিছুদিন আগে কক্সবাজার শহর থেকে ঝুঁকিপূর্ণ যৌন পেশায় কর্মরত বেশ কিছু রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এরপরও অমানবিক এসব কাজে নানাভাবে জিম্মি অনেক রোহিঙ্গা তরুণী।

শুধু কক্সবাজারই নয়, রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের আশপাশের জঙ্গলে, পাহাড়েও দেহব্যবসা চলে বলে জানিয়েছেন একাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী। অনেকে সেগুলো দেখেও না দেখার ভান করেন। কেননা কারো কারো কাছে নগদ টাকা আয়ের অন্যতম উৎস এটি। ঠিক কতজন রোহিঙ্গা নারী যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করছেন, এমন পরিসংখ্যান কারো কাছে নেই। সংখ্যাটা যে বাড়তির দিকে সেকথা নিশ্চিত করেছে একাধিক সংগঠন।

জানা গেছে, অনেক নারীকে জোরপূর্বক এই ব্যবসায় নামানো হচ্ছে। কেউ কেউ বিক্রি হচ্ছেন যৌনদাসী হিসেবে। সরকারি বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে আশ্রয় শিবিরগুলোতে রাত্রিযাপন ও রোহিঙ্গা কিশোরী নিয়ে অজানার উদ্দেশ্যে যাওয়ার কালে এরই মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি নাগরিক আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন।

স্বাস্থ্য সচেতন স্থানীয় লোকজনের মতে, পর্যটন শহর কক্সবাজার ও পার্শ্ববর্তী বাণিজ্যিক শহর চট্টগ্রাম। এখানে কাজের সংস্থান হয়ে থাকে। কুতুপালং ও আশপাশের রোহিঙ্গা শিবিরগুলো থেকে রোহিঙ্গা কিশোরী, শিশু, যুবতী, বিবাহিত, স্বামী হারা অনেকে নানা ফাঁদে পড়ে পাচার হয়ে বাধ্য হচ্ছেন যৌন কর্মী হিসেবে কাজ করতে।

কক্সবাজার শহর, টেকনাফের শামলাপুর থেকে ইনানী হয়ে কক্সবাজার সমুদ্র বিচে খোলা বালিয়াড়িসংলগ্ন ঝাউবনে সন্ধ্যার পর থেকে বিচ্ছিন্নভাবে রোহিঙ্গা মেয়েদের নিয়ে দালালদের অনৈতিক দেহ ব্যবসা চালানোর অভিযোগ সচেতন মহলের।

কুতুপালং আশ্রয় শিবিরের এক রোহিঙ্গা জানান, এখানে মেয়েদের নিয়ে অনেক বিপদ। দেশে (মিয়ানমার) সেনাবাহিনী ও স্থানীয় মগদের অত্যচার থেকে বেঁচে এলেও পূর্ব থেকে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের কবল থেকে মেয়েদের রক্ষা করা যাচ্ছে না। আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গারা স্থানীয় উঠতি বয়সের ছেলেদের নিয়ে বস্তির অলিগলিতে এমনকি অনেক সময় বিভিন্ন ঘরে উঁকি মারে। বিশেষ করে যাদের ঘরে কিশোরী ও যুবতী মেয়ে রয়েছে।

তিনি জানান, রোহিঙ্গা মাঝিরা নানাভাবে হুমকি দিয়ে রোহিঙ্গা মেয়েদের দালালদের কাছে তুলে দিচ্ছে। তিনি জানান, পার্শ্ববর্তী ব্লক থেকে এরই মধ্যে ছয়টি মেয়ে উধাও হয়ে গেছে। এসব মেয়েরা নাকি কক্সবাজার শহরে গিয়ে কোথাও থাকে, ভালো বেতনও পান।

অন্য একজন জানান, সংস্থার কথা বলে তারা বিভিন্ন ক্যাম্পের ঘরে ঢুকে সুন্দরী মেয়ে দেখলে বিভিন্ন প্রলোভন দেখায়। সরকারি বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে আশ্রয় শিবিরগুলোতে রাত্রিযাপন ও রোহিঙ্গা কিশোরী নিয়ে অজানার উদ্দেশ্যে যাওয়ার কালে এরই মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি নাগরিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন।

উখিয়া থানার ওসি আবুল খায়ের বলেন, আমরা রিতিমতো মনিটরিং করছি। বাইরের কেউ পরিচয় ছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যেতে পারে না। সন্দেহ হলে যাচাই বাছাই করা হচ্ছে।

উখিয়ায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আন্দোলনের নেতা মাহমুদুল হক চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গারা টাকা পেলে করতে পারে না এমন কোন কাজ নেই। ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গাদের যুবতী মেয়েরা বিভিন্ন কৌশলে পালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের পেছনে কাজ করছে নির্দিষ্ট কিছু দালাল। তাদের খপ্পরে পড়ে তাদের জীবন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো সজাগ থাকতে হবে। কক্সবাজার পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ ইকবাল হোসেন বলেন, সাগর নৌপথ সব জায়গায় চেকপেস্ট আছে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রোহিঙ্গা শিবির,দালাল,অনৈতিক কাজ,উখিয়া,আইনশৃঙ্খলা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close