মহসীন শেখ, কক্সবাজার

  ২১ জানুয়ারি, ২০১৯

কোনোভাবেই থামছে না পাহাড় কাটা

কক্সবাজারে কোনোভাবেই থামছে না নির্বিচারে পাহাড় কাটা। মাঝে মাঝে লোকদেখানো অভিযান চলে, সেটা বন্ধ হলে আবার বেপরোয়া হয়ে ওঠে পাহাড়খেকোরা। জেলার প্রায় প্রতিটি পাহাড়ি এলাকায় চলছে নির্বিচারে নিধনযজ্ঞ।

কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের দক্ষিণ মহুরীপাড়ার শেষ প্রান্তে সিরাজ ঘোনায় দেখা গেছে, প্রায় ২০ একর ভূমির সামাজিক বনায়নের হাজার হাজার আকাশমণি গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে। এরপর চলছে নির্বিচারে পাহাড় কাটার মহোৎসব। এরপর খন্ড খন্ড করে কয়েকটি পাহাড় বিক্রি করা হয়েছে। সেসব পাহাড় কেটে চলছে বসতি নির্মাণের হিড়িক। বসতি নির্মাণে বাদ যাচ্ছে না রোহিঙ্গারাও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব কাজে সরাসরি জড়িত রয়েছে ঝিলংজা ইউনিয়নের লিংকরোড এলাকার মৃত আজিজুল হক বারীর ছেলে সিরাজুল ইসলাম প্রকাশ বাইক্ক্যা সিরাজ (৬০) এবং লম্বাঘোনা এলাকার মাহবুব আলম প্রকাশ পহরচাঁদের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, পাহাড় কেটে অবৈধ বসতি নির্মাণে দায়িত্বপ্রাপ্তরা নীরব। এসব পাহাড় বনভূমির অন্তর্গত হলেও বন বিভাগ হস্তক্ষেপ করেনি। তবে সোচ্চার রয়েছে স্থানীয়রা এবং পরিবেশবাদীরা।

পরিবেশবাদী সংগঠন ইয়েস-এর প্রধান নির্বাহী ইব্রাহিম খলিল মামুন বলেন, ঘটনাস্থলে সরেজমিন পরির্দশন করা হয়েছে। সেখানে পাহাড় কেটে ২০টি বসতি তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি রোহিঙ্গা পরিবারও রয়েছে। আরো কয়েকটি স্পটে পাহাড় কেটে বসতি তৈরির কাজ চলছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে পরিবেশবাদীরা আইনি পদক্ষেপ নেবে।

কক্সবাজার পিপলস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল বলেন, উখিয়া-টেকনাফের পাহাড় ও বন গিলে খেয়েছে রোহিঙ্গারা। এখন কক্সবাজার শহরের আশপাশের পাহাড়েও তাদের বসতি গড়ে উঠছে। আর মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে স্থানীয় পাহাড়খেকোরা। এদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।

স্থানীয়রা জানান, বাইক্ক্যা সিরাজের দখলে রয়েছে প্রায় ২০ একরের মতো বন বিভাগের কয়েকটি পাহাড়। তিনি সেখানকার সামাজিক বনায়নের হাজার হাজার আকাশমণি গাছ এবং পাহাড় বিক্রি করে দিয়েছেন। অবৈধ দখলি জমিতে গড়ে তুলেছেন একটি মসজিদ। এতে পাহাড় বিক্রি এবং বসতি নির্মাণে তার জন্য সহজ হয়েছে। পাশর্^বর্তী লম্বাঘোনা এলাকার মাহবুব আলম প্রকাশ পহরচাঁদ সিরাজের কেয়ারটেকার হিসেবে কাজ করেন। প্রতি শতক পাহাড়ি বনভূমি ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে সেখানে গড়ে উঠেছে ২০টির মতো বসতি।

স্থানীয়রা জানান, সেখানে বর্তমানে আবদুছ ছালাম প্রকাশ মনু, আবুল হোছন, রহিমা, জাহেদ, ছৈয়দুর রহমান, আলী আহমদ, এনায়েত আলী, করিমউল্লাহ, সুলতান, আমিন, মরিয়ম খাতুন, শিহাব উদ্দিন, ছৈয়দ নুর, ইউনুছ, বাবুল, মালয়েশিয়া প্রবাসী, মোহাম্মদ সিরাজ, মো. ইছহাক, মো. মাহবুব, মো. আমান উল্লাহসহ অন্তত ৩০ থেকে ৪০ জন ব্যক্তি পাহাড় কাটছেন।

যোগাযোগ করা হলে সিরাজের কেয়ারটেকার মাহবুব আলম প্রকাশ পহরচাঁদ বলেন, ‘আমরা শুধুমাত্র পাহাড়ের দখল বিক্রি করছি। পাহাড় কাটছি না।’ বন বিভাগের পক্ষ থেকে কোনো বাধা রয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বন বিভাগের লোকজনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক রয়েছে। তারা কোনো সময় এখানে বাধা দেননি।’

জানতে চাইলে অভিযুক্ত সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি একা নই, আশপাশে অনেক লোকই পাহাড় বিক্রি করেছে। আমি পাহাড় কাটিনি তবে বিক্রি করেছি।’

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে লিংকরোড বন বিটের বিট কর্মকর্তা হান্নানুজ্জামান বলেন, ‘এসব বনভূমি ছিল কিন্তু এসব জায়গা খাস খতিয়ানে নেওয়া হয়েছে। যার কারণে বন বিভাগের কিছুই করার নেই। আপনি বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান।’

পরিবেশ অধিদফতর কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিদর্শক মুবিনুল হক বলেন, ‘এরই মধ্যে সিরাজ ঘোনায় সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়েছে। বেপরোয়াভাবে পাহাড় কর্তনের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। তাদের পরিবেশ আইনের আওতায় আনা হবে।’

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘খাস হোক আর বনভূমি হোক, পাহাড় ও বন খেকোদের ছাড় দেওয়া হবে না।’

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কক্সবাজার,পরিবেশ,পাহাড় কাটা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close