হাসান ইমন
উন্নয়ন প্রকল্পের নামে লুটপাট
সিমেন্টের বদলে কাদামাটি!
কয়েক দিন আগে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের উন্নয়ন কাজে রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহার নিয়ে তোলপাড় শেষ না হতেই, এবার খোদ রাজধানীতেই ড্রেন নির্মাণে সিমেন্টের বদলে কাদামাটির প্রলেপ দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি নতুন যুক্ত হওয়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি, ৫৯ নম্বর ওয়ার্ড) মোহাম্মদবাগ ন্যাশনাল ব্যাংকের নিচে ড্রেন নির্মাণে সিমেন্ট ছাড়াই ঢালাইয়ের কাজ করার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর স্থানীয়রা তা ভেঙে ফেলেন। এই ঘটনায় এলাকাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
ডিএসসিরি অর্থায়নে এ কাজটি বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জে কে এন্টারপ্রাইজ। এ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ড্রেন নির্মাণকাজটি করছেন গোফরান চৌধুরী।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মোহাম্মদবাগ চৌরাস্তা থেকে মিরাজনগর যাওয়ার রাস্তাটির মধ্যখানে ন্যাশনাল ব্যাংকের নিচে ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। গত শুক্রবার রাতে ড্রেনের কিছু অংশ ঢালাই করা হয়। পরদিন শনিবার সকালে ঢালাইয়ের প্রলেপ খুলতে গেলে দেয়ালে ফাটল ধরে। পরে স্থানীয় লোকজন ধরতে গেলে তা ভেঙে পড়ে। দেখা যায়, সিমেন্ট ছাড়াই মাটির প্রলেপ দিয়ে নির্মাণ করেছে মিস্ত্রি। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর এলাকায় শুরু হয় তোলপাড়। ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। সেখানে দেখা যায়, স্থানীয় লোকজন লাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে প্রলেপ ভেঙে ফেলছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঢাকার সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ থাকলেও তারা বছরের পর বছর নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। রাস্তা-ঘাট, নর্দমা, ফুটপাত, ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ সিটি করপোরেশন উপযোগী অবকাঠামোগত ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। দীর্ঘদিন ধরে অপরিকল্পিতভাবে বিচ্ছিন্ন উন্নয়ন ও অব্যবস্থাপনায় এলাকাগুলোর বেহাল অবস্থা। সরকার সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যুক্ত করার পর থেকে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে বলে আশায় বুক বেঁধেছেন অনেকেইে। উন্নয়নকাজ মাঠ পর্যায়ে শুরু হওয়ার পর এলাকাবাসীর প্রত্যাশা আরো বেড়ে গেছে। কিন্তু এভাবে উন্নয়নের নামে লুটপাট করলে এলাকাগুলো অল্প দিনের মধ্যে বিপর্যস্ত জনপদে পরিণত হবে।
গত রোববার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ড্রেনের নির্মাণকাজ চলছে। পাশের রাস্তাগুলো পানি ও কাদায় একাকার। ন্যাশনাল ব্যাংকের নিচের সমস্যা জায়গাটুকু নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে।
মোহাম্মদবাগ চৌরাস্তার এক দোকানি বলেন, দিনের বেলায় ড্রেন নির্মাণ করতে দেখিনি। এই এলাকার পুরো ড্রেন রাতেই নির্মাণ করেছে তারা। গত পরশু (শুক্রবার) সকালে দোকান খুলতে এসে দেখি ড্রেনের দেয়ালে ফাটল। পরে আশপাশের লোকজন এসে মিস্ত্রির লোকজনকে মারধর করে। পরে বাঁশ দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ভেঙে ফেলে সবাই। এখনই যদি এ অবস্থা হয়, তাহলে কয়েক দিন পর ড্রেন থাকবে না। কোটি টাকার কাজ হচ্ছে। অর্ধেক টাকাই লুটে নিচ্ছে ঠিকাদাররা।
এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জে কে প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার গোফরান চৌধুরীর সঙ্গে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি।
ড্রেন নির্মাণে সিমেন্টের বদলে কাদামাটির বিষয়টি স্বীকার করেছেন ডিএসসিসির অঞ্চল ৫-এর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক কাজী বোরহান উদ্দিন। তিনি বলেন, এ ঘটনাটি আমাদের কানে এসেছে। সঙ্গে সঙ্গে ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। এটি ভেঙে নতুন করে আবার নির্মাণ করা হয়েছে। দেয়ালে সিমেন্ট দেওয়া হয়েছে, কিন্তু পরিমাণে কম ছিল। এই কারণে ফাটল ধরেছে।
শুধু এখানে ধরা পড়েছে, তাই ভেঙে ফেলেছেন। অন্য কোথায় এ রকম সমস্যা হতে পারে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, এ রকম সমস্যা হতে পারে না। কারণ আমরা প্রত্যেকটা কাজ পর্যবেক্ষণ করেছি।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হওয়া চারটি ইউনিয়নের সড়ক অবকাঠামো ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন হচ্ছে। ডিএসসিসির আওতাধীন শ্যামপুর, দনিয়া, মাতুয়াইল এবং সারুলিয়া এলাকার উন্নয়নে ৭৩৪ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের একটি প্রকল্পে গত বছরের ১০ জানুয়ারি একনেক অনুমোদন দিয়েছে। এই চারটি ইউনিয়নের নাগরিক সুবিধা বর্তমানে অপ্রতুল। প্রাথমিক অবস্থায় চারটি ইউনিয়নের উন্নয়নের জন্য প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। গত বছরের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করা হবে। পর্যায়ক্রমে বাকি চারটি ইউনিয়ন ও ঢাকা উত্তর সিটির সঙ্গে যুক্ত হওয়া নতুন ইউনিয়নগুলোর উন্নয়নে প্রকল্প নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, প্রকল্পের আওতাভুক্ত চারটি এলাকার মোট ১৫২ কিলোমিটার রাস্তা উন্নয়ন ও ১৮৫ কিলোমিটার ড্রেন উন্নয়ন করা হবে। এছাড়া সড়কগুলোতে এলইডি বাতি স্থাপন, বৃক্ষরোপণ ও ফুটপাত প্রশস্তকরণের কাজও করা হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) ৮টি ইউনিয়ন শ্যামপুর, দনিয়া, মাতুয়াইল, সারুলিয়া, ডেমরা, মান্ডা, দক্ষিণগাঁও ও নাসিরাবাদকে ভেঙে ৫৮, ৫৯, ৬০, ৬১, ৬২, ৬৩, ৬৪, ৬৫, ৬৬, ৬৭, ৬৮, ৬৯, ৭০, ৭১, ৭২, ৭৩, ৭৪ ও ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয়।
পিডিএসও/হেলাল