নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৬ জানুয়ারি, ২০১৮

কেউ জানে না পলাতক ১৯ আসামি কোথায়!

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় পলাতক আসামিদের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন চলছে। ঢাকার দ্রুত বিচার আদালত-১ এ গত ২ জানুয়ারি থেকে পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবীরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করছেন। গত বুধবার পর্যন্ত পাঁচ পলাতক আসামির পক্ষে আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়েছে। তবে পলাতক ১৯ আসামি কোথায় আছেন- কেউ তা জানে না। তাদের আইনজীবীরাও জানেন না পলাতক আসামিরা কে কোথায় অবস্থান করছেন। তবে কারো কারো পলাতক থাকার ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাদের আইনজীবীরা।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, এ মামলার আসামি ছিলেন ৫২ জন। তাদের মধ্যে যুদ্ধাপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং সিলেটে সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা মামলায় জঙ্গিগোষ্ঠী হরকাতুল জিহাদের নেতা মুফতি আবদুল হান্নান ও তার সহযোগী শরীফ শাহেদুল বিপুলের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় তাদের এ মামলার আসামির তালিকা থেকে তাদের বাদ দেওয়া হয়। বর্তমানে এ মামলার আসামি ৪৯ জন। এর মধ্যে কারাগারে ২২ জন। জামিনে আছেন আটজন। পলাতক ১৯ জন।

পলাতক এই ১৯ জনের মধ্যে চারজনের নাম ইন্টারপোলের রেড নোটিসের তালিকায় রয়েছে। তারা হচ্ছেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, কুমিল্লার মুরাদনগরের বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, নিষিদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠী হরকাতুল জিহাদ নেতা মাওলানা মো. তাজউদ্দিন মিয়া ও রাতুল বাবু। খালেদা জিয়ার বড় ছেলে লন্ডনে অবস্থান করা তারেক রহমানের নামও কয়দিন ইন্টারপোলের তালিকায় দেখা যায়। পরে সেই তালিকা থেকে তার নামটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। তারেক রহমান ছাড়া এই মামলায় পলাতক থাকা বাকি ১৮ জন কোথায় আছেন জানেন না কেউ। তবে গুরুত্বপূর্ণ আরো কয়েকজনের অবস্থান সম্পর্কে সংশ্লিষ্টরা অবহিত রয়েছেন বলে সূত্র জানায়। তাদের গ্রেফতার কিংবা বিদেশে পালিয়ে থাকাদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো তৎপরতাও দৃশ্যমান নয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

পলাতকদের বিষয়ে জানতে চাইলে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ সুপার আবদুল কাহার আকন্দ বলেন, ‘পলাতকদের গ্রেফতারে পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পলাতকরা দেশে ও বিদেশের কোথায় কে অবস্থান করছে সেই বিষয়ে জানতেও তারা কাজ করে যাচ্ছেন। পলাতক ১৯ আসামির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজনের অবস্থান সম্পর্কে অবহিত আছে সরকার।’

পলাতক অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ, পুলিশের সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান ও ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক ডিসি (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান। জঙ্গিগোষ্ঠী হরকাতুল জিহাদের নেতা মাওলানা মহিবুল মুত্তাকিন, আনিসুল মুরসালিন ওরফে মুরসালিন, মোহাম্মদ খলিল, জাহাঙ্গির আলম বদর, মো. ইকবাল, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ লোকমান হাওলাদার, মুফতি আবদুল হাই, মাওলানা লিটন ওরফে দেলোয়ার হোসেন ওরফে জোবায়ের, মুফতি শফিকুর রহমান।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বর্তমানে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থান করছেন। ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তিনি প্যারোলে মুক্তি নিয়ে লন্ডনে চলে যান। তখন থেকে তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন। ২০১৪ সালে তারেক রহমানকে ফেরত দেওয়ার জন্য যুক্তরাজ্য সরকারকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হলেও এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই।

২০০৪ সালেই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর মাওলানা মো. তাজউদ্দিন পালিয়ে যান। বর্তমানে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থান করছেন বলে নিশ্চিত হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাকে ফেরত আনার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ২০১৬ সালের নভেম্বরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করে এ বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনাও করেন। বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ সংযুক্ত আরব আমিরাতে রয়েছেন বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তথ্য রয়েছে। এরশাদ সরকারের আমলের ধর্ম প্রতিমন্ত্রী কায়কোবাদ পরে জাতীয় পার্টি ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেন।

ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন আহমদ সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে একজন প্রভাবশালী কর্মকর্তা ছিলেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। বর্তমানে তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন বলে সরকারের কাছে তথ্য রয়েছে।

পলাতক দুই আসামি হরকাতুল জিহাদের সদস্য জঙ্গি আনিসুল মুরসালিন ওরফে মুরসালিন ও মহিবুল মুত্তাকিন ভারতের তিহার কারাগারে আটক বলে গোয়েন্দারা জানিয়েছেন। অন্য পলাতক আসামিদের কোনো হদিস নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও জানে না তারা কোথায় অবস্থান করছে। তবে হানিফ পরিবহনের মো. হানিফ ও রাতুল বাবু ভারতে, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার কানাডায়, জঙ্গি নেতা শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, মাওলানা আবু বকর, ইকবাল, খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে বদর, মাওলানা লিটন ওরফে জোবায়ের ওরফে দেলোয়ার, ঢাকা মহানগর পুলিশের তৎকালীন উপকমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান এবং উপকমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান পাকিস্তানে অবস্থান করছেন বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর ২০০৪ সালের ২২ আগস্ট মতিঝিল থানার এসআই শরীফ ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা (নং-৯৭) দায়ের করেন। ২০০৮ সালের ৯ জুন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনকে অভিযুক্ত করে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে সিএমএম আদালতে দুটি অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন সিআইডির সিনিয়র এএসপি ফজলুল কবির। ওই বছরই মামলা দুটির কার্যক্রম দ্রুত বিচার আদালত-১ এ স্থানাস্তর করা হয়।

এ আদালতে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের ২৯/১১ (হত্যা), ৩০/১১ (বিস্ফোরক) মামলা দুটির বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। ৬১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের পর ২০০৯ সালের ২৫ জুন এ মামলার অধিকতর তদন্তের আবেদন জানায় রাষ্ট্রপক্ষ। ওই বছরের ৩ আগস্ট আদালত অধিকতর তদন্তের আবেদন মঞ্জুর করেন। পরে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ ও আবদুস সালাম পিন্টুসহ আরো ৩০ জনকে অভিযুক্ত করে ২০১১ সালের ২ জুলাই আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন আবদুল কাহার আকন্দ। অধিকতর তদন্তে গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জঙ্গিগোষ্ঠী হরকাতুল জিহাদের (হুজি) পাশাপাশি হাওয়া ভবনের সংশ্লিষ্টতাও খুঁজে পান তিনি। মামলাটির বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শাহেদ নূর উদ্দিন।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
২১ আগস্ট হামলা,২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা,পলাতক আসামি,ইন্টারপোল
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist