কক্সবাজার প্রতিনিধি
কক্সবাজারে উচ্ছেদ আতঙ্কে ভূমিহীনরা
১৯৯১ সালে প্রলংয়কারী ঘূর্ণিঝড়ে কক্সবাজার উপকূলে জায়গা-জমি ও সহায় সম্পত্তি হারিয়ে বেঁচে থাকার আশায় শহরের বিজিবি ক্যাম্পসংলগ্ন পাহাড়ে আশ্রয় নেয় দেড় শতাধিক পরিবার। ধীরে ধীরে জঙ্গল পরিষ্কার করে এলাকাটিতে বসবাস করতে থাকেন ঘূর্ণিঝড়ে সব হারানো মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও টেকনাফের উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দারা। এই নতুন বসতি কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ সাহিত্যিকা পল্লী নামে পরিচিত পায়। এ এলাকায় এখন হাজারো পরিবারের বাস। কিন্তু ২৮ বছর ধরে সেই এলাকাটিতে বসবাস করা লোকজন উচ্ছেদ আতঙ্কে ভুগছে। মাথার ওপরের সেই ছায়াটুকু বাঁচাতে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে ভূমিহীন পরিবারগুলো। তাদের ভয়. বিজিবিকে সরকার যদি এই জমি দেয়, তাহলে তারা বাস্তুহারা হবে। তবে বিজিবি ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এই ভূমিতে থাকা বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
দক্ষিণ সাহিত্যিকা পল্লী সমাজ কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামাল আরমান এ বিষয়ে বলেন, ২৮ বছর ধরে এ এলাকায় রয়েছি। তখন থেকেই জানি এটি বনবিভাগ ও জেলা প্রশাসনের খাসজমি। কিন্তু ৯১-এর ঘূর্ণিঝড়ে টেকনাফ সাবরাংয়ের বাপ-দাদার বসতভিটা সাগরে বিলীন হয়ে যায়। আশ্রয়ের জন্য কোনো স্থান না পেয়ে এখানে এসে বাবা-মাকে নিয়ে বসতি গড়ি। এতদিন কোনো সমস্যা না হলেও হঠাৎ করে বিজিবি মাপঝোঁক শুরু করায় আমরা ভয়ে আছি। আমার মতো হাজার পরিবার এখন উচ্ছেদ আতঙ্কে ভুগছে।
দক্ষিণ সাহিত্যিকা পল্লী সমাজ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল এহসান মানিক এ বিষয়ে বলেন, ৫ এপ্রিল বিজিবি সরকারি সার্ভেয়ার নিয়ে গিয়ে এলাকাটি পরিমাপ করেছে। সেদিন ওই এলাকার জমি তাদের দাবি করে এলাকাবাসীকে সরে যেতে বলেছে। সেই কারণে আমরা এলাকাবাসী শেষ আশ্রয়স্থল বাঁচাতে প্রশাসনের বিভিন্নজনের কাছে ধরনা দিচ্ছি।
এ বিষয়ে দক্ষিণ সাহিত্যিকা পল্লী সমাজ কমিটির সভাপতি এস এম মোরশেদ আলম বলেন, ‘উচ্ছেদ থেকে বাঁচতে আমরা জেলা প্রশাসক, সংসদ সদস্য, মেয়র, বিজিবির সেক্টর কমান্ডারসহ ছয়টি সরকারি দফতরে আবেদন করেছি। আশা করছি সরকার আমরা ভূমিহীন—এ বিষয়টি মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নেবে।’
জানতে চাইলে ৩৪ বিজিবির অতিরিক্ত পরিচালক মেজর ইকবাল আহমেদ বলেন, ‘বিনা কারণেই আতঙ্কগ্রস্ত গ্রামবাসী। এখানে আতঙ্কের কিছু নেই। তাদেরকে উচ্ছেদ করার কোনো পরিকল্পনা আপাতত বিজিবির নেই।’
তিনি আরো বলেন, ‘২০১২ সালে বিজিবির পক্ষ থেকে ছয় একর জমির বন্দোবস্তি চেয়ে আবেদন করা হয়। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিজিবি হেডকোয়ার্টার জানতে চায় ওই জমিতে কত মানুষ বাস করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৫ এপ্রিল এক দফা জমিটি পরিমাপ করা হয়। কিন্তু পরিমাপ শেষ হয়নি।’
তিনি জানান, বিজিবি এখনো জমিটি বন্দোবস্ত পায়নি। প্রক্রিয়াটি এখনো প্রাথমিক ধাপে রয়েছে। বিজিবি বন্দোবস্ত পাওয়ার পরই দখলে যাবে। আর যখন দখলে যাবে, তখন ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিয়েই যাবে। তাই এ নিয়ে আতঙ্ক করার কিছু নেই। এদিকে কক্সবাজার সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘বিজিবির মৌখিক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৫ এপ্রিল সার্ভেয়ার পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু দক্ষিণ সাহিত্যিকা পল্লীর অনেক বাসিন্দাই আমার কাছে এসেছিল। অনেকে লিখিত আবেদন করেছেন।’
জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘৯ এপ্রিল দক্ষিণ সাহিত্যিকা পল্লীর ৪০৩ জন বাসিন্দা স্বাক্ষরিত একটি আবেদন পেয়েছি। তারা বিজিবির উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করতে আবেদন করেছেন। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টির আইনি সুরাহার জন্য এডিসি অ্যাভিনিউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ক্ষতি হয়—এমন কোনো সিদ্ধান্ত সরকার কিংবা স্থানীয় প্রশাসন নেবে না।
পিডিএসও/হেলাল