মো. জাহিদুল ইসলাম
মুক্তমত
উন্নয়নের মূল হাতিয়ার তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে নজিরবিহীন উন্নতির ফলে বিশ্ব আজ একটি একক গ্রামে পরিণত হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি দূরকে এনে দিয়েছে চোখের কাছে। এরই পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসাধ্যকে করেছে সাধন। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিশ্বের সব ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মূল হাতিয়ার। যে জাতি তথ্যপ্রযুক্তিতে যত বেশি দক্ষ, তাদের সার্বিক অবস্থাও তত বেশি উন্নত। বর্তমান আধুনিক শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত হওয়ার পাশাপাশি জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশ্ব দরবারে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় ও উজ্জ্বল করতে হলে তথ্যপ্রযুক্তির কোনো বিকল্প নেই।
আমরা এখন অতি অল্প সময়ের মধ্যেই পৃথিবীর কোথায় কী ঘটছে তাৎক্ষণিকভাবে জানতে পারি। বিশ্বায়নের ফলে পৃথিবীর দেশগুলো যেন গ্রামের পরিবারের সমন্বয় বলে মনে হয়। এরই ফলে তারা তাদের সুখ-দুঃখ পাশাপাশি প্রতিবেশীর মতো বিনিময় করছে। যদি কোনো দেশ সমস্যায় পড়ে, পাশের দেশগুলো তার সাহায্যে দ্রুত এগিয়ে আসছে। আমরা আমাদের অনুভূতিকে স্বল্প সময়ের মধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারছি। পৃথিবীব্যাপী স্বল্প সময়ে এই যোগাযোগ সুবিধার ফলেই বিশ্বকে একটি গ্রাম হিসেবে তুলনা করা যাচ্ছে। এ জন্য বর্তমান বিশ্বকে গ্লোবাল ভিলেজ বা বিশ্বগ্রাম বলা হয়।
বিশ্বায়নের এই যুগে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিই হলো উন্নয়নের মূল হাতিয়ার। বিশ্বায়ন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির এই হাতিয়ারের মাধ্যমে সামগ্রিক কমিউনিটির মধ্যে সব মানুষকে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া সহজ থেকে সহজতর হয়েছে। তথ্য যোগাযোগপ্রযুক্তির এই হাতিয়ারের মাধ্যমে বিশ্বায়ন হয়েছে বিশ্বব্যাপী সামাজিক সম্পর্কের নিবিড়করণ প্রক্রিয়া। সেই অর্থে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বগ্রাম হচ্ছে এমন একটি সামাজিক বা সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা, যেখানে পৃথিবীর সব প্রান্তের মানুষই একটি একক সমাজে বসবাস করে। এর পাশাপাশি তারা খুব সহজেই তাদের চিন্তা-চেতনা, অভিজ্ঞতা, সংস্কৃতি-কৃষ্টি ইত্যাদি বিনিময় করতে পারে ও একে অন্যকে সেবা দিতে পারে। ফলে পৃথিবীর সব দেশের সব মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সুসম্পর্ক ও সহযোগিতার বন্ধন তৈরি হয়।
বর্তমান আধুনিক তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন অ্যাপসের দ্বারা যোগাযোগের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ একে অন্যের সঙ্গে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা-গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করছে। মূলত ইলেকট্রনিক টেকনোলজির মাধ্যমে আইসিটি বিশ্বগ্রাম তৈরির ফলে বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান উন্নতি হয়েছে। বিশ্বগ্রাম প্রতিষ্ঠার উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে হার্ডওয়্যার বা কম্পিউটার-সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি, প্রোগ্রামসমূহ বা সফটওয়্যার, ব্যক্তিবর্গের সক্ষমতা, ডেটা বা ইনফরমেশন, ইন্টারনেট সংযুক্ততা ইত্যাদি। ইন্টারনেট সংযুক্ততা ছাড়া বিশ্বগ্রাম প্রায় অসম্ভব। পৃথিবী জুড়ে বিস্তৃত পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত অনেকগুলো কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সমষ্টিতে গঠিত ইন্টারনেট বিশ্বগ্রামের ধারণাকে আজ বাস্তবে পরিণত করেছে।
তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার দ্বারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ সহজেই তাদের চিন্তা-চেতনা, অভিজ্ঞতা, সংস্কৃতি-কৃষ্টি ইত্যাদি বিনিময় করার পাশাপাশি একে অন্যকে সেবা প্রদান করে থাকে। বিশ্বগ্রাম সৃষ্টির প্রধান কারণ হচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির বিস্ময়কর বিকাশ। বিশ্বকে যুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ঔপনিবেশিক যুগের প্রথম দিকে দুনিয়া জুড়ে টেলিগ্রাফ লাইন স্থাপনের মাধ্যমে। আধুনিক যুগে ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগ এখন বিশ্ব জুড়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগমাধ্যম। বিশ্বায়ন কোনো সংকীর্ণ ধারণা নয় বরং এটি একটি বহুমাত্রিক প্রক্রিয়া। এর বহিঃপ্রকাশও বিভিন্নমুখী। বিশ্বায়নের বিকাশে তাই বিভিন্ন ধরনের শক্তির প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণও সুস্পষ্ট। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির বিকাশ, বিশ্ব যাতায়াত ও যোগাযোগব্যবস্থার পরিবর্তনই বিশ্বের সভ্যতা ও জনসমাজে পারস্পরিক নৈকট্য সুদৃঢ় করেছে। আর এসবের ফলে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া হয়েছে ত্বরান্বিত।
বিশ্বায়ন হলো মানবজাতির প্রয়োজনেই উদ্ভূত এক অত্যাবশ্যকীয় প্রত্যয়। কালের বিবর্তনে মানুষের রুচি মানসিকতার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। এর পাশাপাশি মানুষের চাহিদা ও ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়েছে বহু গুণ। আর এ চাহিদা পূরণ কোনো এক ক্ষুদ্র জনসমাজের মাধ্যমে সম্ভব নয়। এই সবকিছু একমাত্র সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে একমাত্র তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির উন্নয়নের দ্বারা। বিশ্বায়নের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির হাতিয়ারের দ্বারা বিশ্বব্যাপী আজ সামাজিক সম্পর্কের এবং বিনিময়ের ব্যাপ্তি, গভীরতা, গতি এবং প্রভাব ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বায়নের ইতিবাচক সম্ভাবনা মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে এর মাধ্যমে যেকোনো স্থানের সঙ্গে কম খরচে তাৎক্ষণিক ও কার্যকর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়।
এ জন্য আমাদের বিশ্বায়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিকে শুধু মানবকল্যাণের জন্যই ব্যবহার করতে হবে। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির ইতিবাচক দিকগুলো মানবকল্যাণে ব্যবহার করতে পারলে বিশ্বায়নের প্রকৃত মূল্যবোধ বজায় রাখতে পারব। একটি সুন্দর এবং সুপরিকল্পিত আগামীর বিশ্বায়নের ভবিষ্যতের জন্য আমাদের অবশ্যই তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির নেতিবাচক দিকগুলো পরিহার করতে হবে। তবেই ভবিষ্যতের বিশ্বায়ন হবে সুপরিকল্পিত এবং নিরাপদ। এখন বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তথ্য এবং যোগাযোগপ্রযুক্তি। সুতরাং কোনো দেশকে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশ্ব দরবারে নিজ অবস্থান সুদৃঢ় ও উজ্জ্বল করতে হলে তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশের কোনো বিকল্প নেই। সে ক্ষেত্রে আগামী দিনেও এই সাফল্য ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের আরো পরিশ্রমী এবং উদ্যোগী হতে হবে।
লেখক : নেটওয়ার্ক টেকনিশিয়ান (আইসিটি সেল)
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
"