আক্কেলপুর (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি
আধিপত্য বিস্তারে দ্বন্দ্ব
আক্কেলপুরে মহিলা ডিগ্রি কলেজের কমিটি নিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষ
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজে একটি অ্যাডহক কমিটির সভাপতি পদে বিএনপি দলীয় একজনকে দুবার ও আরেকজনকে একবার মনোনয়ন দিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষে দুজনের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হয়েছেন। পরে খবর পেয়ে সেনা, পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ঘটনাস্থলে মোতায়েন হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুবার অনুমোদন পেয়ে সর্বশেষ কমিটির সভাপতি হয়েছেন কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহদপ্তর সম্পাদক মো. মাহমুদুর মোস্তাকিন নিশাত। এতে একবার মনোনয়ন পাওয়া কমিটির সভাপতি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রিয়াদ মো. জিয়াউদ্দিন চৌধুরী। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছেন, নব গঠিত অ্যাডহক কমিটির নাম তারা পাঠাননি। তবে কীভাবে বারবার সভাপতি ও বিদ্যোৎসাহী সদস্য পরিবর্তন করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন করছে, তাও তারা জানেন না।
- কলেজের একটি অ্যাডহক কমিটি তিনবার পরিবর্তন করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
- উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রিয়াদ চৌধুরীর প্রস্তাব করে কলেজ
- সর্বশেষ কমিটির সভাপতি কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেতামাহমুদুর মোস্তাকিন নিশাত
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ মনোনিত সভাপতি কৃষক দল নেতা নিশাত তার সমর্থকদের নিয়ে কলেজে আসেন। এই খবর পেয়ে তাদের বাধা দিতে সদ্য সাবেক সভাপতি রিয়াদ চৌধুরীসহ তার সমর্থকরা কলেজে আসেন। এ সময় অধ্যক্ষের কক্ষে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর রিয়াদ মো. জিয়াউদ্দিন চৌধুরীসহ সভাপতি পদে তিনজন ও বিদ্যোৎসাহী সদস্য পদে তিনজনের নাম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠায় কলেজ কর্তৃপক্ষ। তবে কলেজের পাঠানো নামগুলো বাদ দিয়ে গত ৩ অক্টোবর পার্শ্ববর্তী ক্ষেতলাল উপজেলার বাসিন্দা কৃষক দল নেতা মো. মাহমুদুর মোস্তাকিন নিশাতকে সভাপতি মনোয়ন দেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
এদিকে ওই কমিটির সভাপতিকে বহিরাগত আখ্যা দিয়ে প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচি ও মানববন্ধন করেছিল রিয়াদ চৌধুরীর সমর্থকরা। সর্বশেষ কমিটির মনোনিত সভাপতি রিয়াদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে গণস্বাক্ষর, অবস্থান কর্মসূচি ও মানববন্ধন করেছিলেন উপজেলা ও পৌর বিএনপির নেতাকর্মীরা।পরে দ্বিতীয় দফায় ২০ নভেম্বর আগের কমিটি বাদ দিয়ে রিয়াদ চৌধুরীকে সভাপতি হিসেবে মনোনয়ন দেয় কলেজ নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানটি। সেই মোতাবেকই তারা কলেজ পরিচালনা করছিলেন। কিন্তু তৃতীয় দফায় সর্বশেষ ৮ ডিসেম্বর পুনরায় ক্ষেতলাল উপজেলার বাসিন্দা মোস্তাকিন নিশাতকে সভাপতি হিসেবে মনোয়ন দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। সেই সুবাদে বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানে এসেছিলেন তিনি। এতে আগের কমিটির সভাপতির লোকজনের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে।
সাবেক সভাপতি রিয়াদ মো. জিয়াউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক মনোনীত বর্তমান অ্যাডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে আমি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছি। সভাপতি পরিবর্তনের কোনো চিঠিও আমি পাইনি। হঠাৎ করে আগের সভাপতি নিশাত তার দলবল ও বহিরাগতদের নিয়ে কলেজে এসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন-এমন খবরে আমরা কলেজে গেলে সংঘর্ষ হয়।’
তবে বর্তমান সভাপতি মাহমুদুর মোস্তকিন নিশাত বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সর্বশেষ আমাকে অ্যাডহক কমিটির সভাপতি মনোনয়ন করেন। সেই মোতাবেক আমি ও আমার বিদ্যোৎসাহী সদস্যরা কলেজে আসি। এখানের বিএনপি নেতা আলমগীর চৌধুরী বাদশা ও তার ভাই জিয়াউদ্দিন চৌধুরী এসে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা করে। এতে আমার পক্ষের অনেকেই আহত হয়েছেন।’ জানতে চাইলে আক্কেলপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবিদা সুলতানা কুইন বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় মনোনীত বর্তমান সভাপতি কলেজে এলে আগের সভাপতির সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। কমিটি গঠন নিয়ে আমরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি। একটি কমিটি তিনবার পরিবর্তন করায় এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হবে।’
অভিযোগ বিষয়ে জানতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক মো. আব্দুল হাই সিদ্দিক সরকারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও কোন সারা পাওয়া যায়নি। আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মাসুদ রানা বলেন, এ ঘটনায় এখনো থানায় কোন অভিযোগ বা মামলা হয়নি।
তবে নির্বাহী ম্যাজিট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুনিরা সুলতানা বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে থানা পুলিশ এবং সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।