নিরাপদ রাষ্ট্র গঠনে চাই সবার সক্রিয় ভূমিকা
বিশ্বজুড়ে নারী শিক্ষা, নারীর কর্মসংস্থান, জেন্ডার সমতা ধারণার জয়জয়কার এবং টেকসই উন্নয়নের জোয়ার জেগেছে, কিন্তু প্রশ্ন জাগে সত্যিকার অর্থে নারীরা কতদূর এগোতে পেরেছে। প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললেই দেখা যায় নারী ও শিশুর প্রতি যৌন নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা। বিগত কয়েকবছরে দেশে ধর্ষণের ঘটনা আশঙ্কাজনকহারে বেড়েছে। যা আমাদের ভাবিয়ে তুলছে প্রতি মুহূর্তে। দেশের সংবিধান যেখানে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার লাভের নিশ্চয়তা প্রদান করে এবং জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশ দেয়, সেখানে ধর্ষণ বা যেকোনো ধরনের নির্যাতন নারীর বৈষম্যহীন পথচলা এবং উন্নয়নের ধারণার পথে অন্তরায়।
গতকাল প্রতিদিনের সংবাদে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়- চলতি বছর জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে ৫৪৮ জন নারী ও কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২১ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। আর যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয় ২৯ জনকে। এ ১১ মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৪৯০ জন। গত মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালন উপলক্ষে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। ‘পারিবারিক আইনে সমতা আনি, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ করি’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, আমরা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতন ও হত্যার তালিকা করে থাকি। এ সংক্রান্ত মামলার সঙ্গেও আমরা সম্পৃক্ত হই। একেকটি মামলার রায় পেতে ১৫-২০ বছর লেগে যায়। দেখা যায়, বিচারের আগেই বিদেশে পালিয়ে যায় আসামি। লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের লিগ্যাল এইড সম্পাদক রেখা সাহা বলেন, জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ১ হাজার ৩৬ জন কন্যাসহ ২ হাজার ৩৬২ জন নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছে। গত ১১ মাসে নারী ও কন্যার বিরুদ্ধে নানান ধরনের সহিংসতার মধ্যে উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে নারী হত্যার ঘটনা। ইউএন উইমেনের তথ্যসূত্রে জানা যায়, শুধু ২০২৩ সালেই বিশ্বে প্রতি ১০ মিনিটে একজন নারী অথবা কন্যা পরিবারের সদস্য এবং তার সঙ্গী দ্বারা হত্যার শিকার হয়েছে। অমানবিক, পাশবিক, নৃশংস এসব ঘটনায় নারীর অগ্রযাত্রায় সৃষ্টি হয় পাহাড় সমান প্রতিবন্ধকতা। নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনায় শুধু ব্যক্তি নারী নয়, পরিবার, সমাজ এবং পরবর্তী প্রজন্ম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া সালিশের মাধ্যমে বিয়ের উদ্যোগ নিয়ে অনেক সময় ধর্ষণ মামলা মীমাংসার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু কোনো ক্রিমিনাল (ফৌজদারি) অপরাধের বিচার সালিশের মাধ্যমে হতে পারে না। আবার এমনো দেখ যায়, কোর্ট প্রাঙ্গণে বিচারক অনেক ক্ষেত্রে মীমাংসা করে ফেলছেন। কিন্তু এটা আমাদের আইনের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ।
বলা বাহুল্য, সংবাদ সম্মেলনে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে- পরিবারের সব ক্ষেত্রে পুত্র ও কন্যার সমঅধিকার নিশ্চিত করা। বৈষম্যমূলক পারিবারিক আইন পরিবর্তন করে অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন করা, বিদ্যমান আইনগুলোর ব্যাপক প্রচার ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা ইত্যাদি। আমরা চাই, একটি জেন্ডার সংবেদনশীল সমাজ গঠনে কার্যকর ও সচেতনতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হোক, যাতে ধর্ষণ ও হত্যার মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। একইসঙ্গে তরুণ প্রজন্মের কাছে আমাদের প্রত্যাশা একটি নিরাপদ রাষ্ট্র গঠনে তারা সক্রিয় ভূমিকা রাখবে।
"